নারায়ণগঞ্জে সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকবে না : সাখাওয়াত
Published: 20th, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা চাই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ। এই সুন্দর নারায়ণগঞ্জে এখানে সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকবে না। আর আমরা চাইও না বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকুক। বাংলাদেশে আমরা সবাই বাংলাদেশী।
এখানে আমরা ধর্মের মাধ্যমে কোনো ভেদাভেদ করতে চাই না। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের মন জয় করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনা মেনে কিন্তু আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো।
নারায়ণগঞ্জে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার (২০ জুন) বিকেল পাঁচটায় শহরের চাষাড়াস্থ শ্রী শ্রী গোপাল জিউর বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে'র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সরকার হুমায়ূন কবির।
এ সময় এড. সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, আপনারা জানেন কত ১৬ সালের নির্বাচনে আমি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম সেই নির্বাচনে একটি ইশতেহার মধ্যে বলেছিলাম আপনাদের হিন্দু সম্পদের ভাই-বোনদের জন্য।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের পাশাপাশি সেখানে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার এবং শহরের দেওভোগের জিউস পুকুর সংস্কার করে সেখানে ধর্মীয় যেন সকলে ব্যবহার করে সেই উপযোগী করে তোলার জন্য। কোন ব্যক্তি যদি ধর্ম শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে তাহলে সে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি কথা প্রচলন আছে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করেছে অনেকই। কিন্তু আমি বলতে চাই বিএনপির কয়জন লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে আপনারা দেখবেন এমন বিচার করবেন আর আওয়ামী লীগের লোকেরা জন্য সম্পত্তি দখল করেছে তা আপনারা কিন্তু দেখেছেন।
আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয় সকল সম্প্রদায় যদি আমাদেরকে ভোট দেয় আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তাহলে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে একটি হিসাবে গড়ে তুলা হবে। সকল সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এই স্লোগান শুধু ব্যানারে লিখলেই হবে না, সবাইকে মানতে হবে। কারণ এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
সকলের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই এদেশে কোনো ধর্মীয় বিভক্তি থাকতে পারে না। আমরা সকল ধর্মের মানুষ মিলে মিশে এই দেশে বসবাস করবো। যারা বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবেন, আমরা মনে করবো তারা ফ্যাসিস্টের দোসর।
মতবিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন উপস্থিত রথযাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিনিধিগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শ্রী শ্রী জগন্নাথ রথযাত্রা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সবকটি রথ যেন একই সময়ে বের করা হয় যাতে করে সুশৃংখলভাবে সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা যায়।
একেক স্থান থেকে একেক সময় বের করা হলে শহরে যানজটসহ নানাবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিকেল তিনটায় সবাই একসাথে রথ বের করবেন এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করবেন।
মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী পূর্ণ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কর্মকার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সঞ্জিব কর্মকার জয়, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণপদক সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার দাস, সহ- সভাপতি সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, জেলা কমিটির সহ- সভাপতি তিলোত্তমা দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ আচার্য সহ জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্দির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ জ ল উপস থ ত আম দ র মন দ র করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজিবাইক) চালকরা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে ইজিবাইক চালকদের সাথে সংঘাতে জড়ালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইজিবাইকচালকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে রাখেন। তাদের অবরোধে পুরো শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ গেটে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষার্থী ও ইজিবাইক চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়।
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- মোঃ আবু সাঈদ (১৯), মারুফ (১৯), আসিফ (৩০), মাহিম (২২), ফয়সাল আহমেদ (২৮), হুমায়ন কবির (২৬), এনামুল হক শান্ত (২৩), শাহীন খন্দকার (২২) ও নুহেল মুন্সী আপন (২২)। তবে আহত ইজিবাইক চালকদের নাম পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা চাষাড়ায় ঢুকতে বাঁধা দেয় ইজিবাইক চালকদের। এ নিয়ে কথাকাটাকিাটি হয় উভয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে ইজিবাইকরা চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ইজিবাইক চলকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। পরে আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সংঘর্ষের সময় ইজিবাইক চালকদের অনেকেই তাদের গাড়ির সিটের নিচ থেকে লাঠি ও লোহার রড বের করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।
ধারণা করা হয়, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল ইজিবাইক চালকরা যে শিক্ষার্থীদের উপর সুযোগ পেলেই হামলা করবে। কারণ গত এক দেড় মাস ধরেই চাষাড়ায় ইজিবাইক ঢুকতে বাধা দিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ জমতে থাকে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে। আজকে তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।
ওদিকে যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা এক মাস ধরে শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমই থেকে আমাদেরকে ট্রাফিক মনিটরিং সেলে দেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই বড় অটোরিকশাগুলো চাষাঢ়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চাষাঢ়ায় প্রবেশ করেন। পরে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যান। এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
তবে উজ্জল নামে এক অটোরিকশাচালক জানায়, ‘আমাদের চাষাঢ়া যাওয়া নিষেধ। আমরা নিষেধ উপেক্ষা করে চাষাঢ়া গেছি, এটা আমাদের অপরাধ। কিন্তু তারা আমাদের অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। গ্লাস ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের অনেককে তারা মারধর করেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভালো একটি সমাধানে আসা সম্ভব হয়েছে। আলোচনা সভায় দুই পক্ষই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত মানতে একমত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হবে।