কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মাথাভাঙ্গা নদী। একসময়ের প্রমত্ত এ নদী এখন ধুঁকছে। তার রূপ-যৌবন সবই যেন কেড়ে নিয়েছে এক অদৃশ্য শক্তি, যার নাম ‘কোমরবাঁধ’। পদ্মা নদীর অন্যতম প্রধান এই শাখানদীর বুকজুড়ে আজ কেবলই প্রভাবশালী মহলের পাতা মাছ ধরার ফাঁদ। কুমার, ভৈরব, চিত্রা ও নবগঙ্গার উৎসস্থল হচ্ছে মাথাভাঙ্গা। এ নদীর বর্তমান দশা আরও নদ–নদীর জন্য দুঃসময় ডেকে এনেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মাথাভাঙ্গা নদীর ৭২ কিলোমিটারের বেশি অংশ পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে। বর্ষায় ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১ দশমিক ২৫ মিটারে। ফলে নৌকা চলাচল তো দূরের কথা, নদীর অনেক অংশ শুকিয়ে যায়। আর এই সুযোগেই নদীর দুই পাড়ের প্রভাবশালীরা গাছের ডাল, বাঁশ ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে তৈরি করছেন অসংখ্য কোমরবাঁধ। তালতলা থেকে সুলতানপুর, এমনকি আলমডাঙ্গা পর্যন্ত এই বাঁধগুলোর অবাধ বিস্তার, যা নদীর পানিপ্রবাহকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
আশাদুল ইসলামের মতো কোমরবাঁধের মালিকদের সরল স্বীকারোক্তি, ‘কোমর দিয়া অন্যায়, ইডা আমার জানা ছিল না। লোকে দ্যায়, তাই মাছ শিকার করার জন্নি দিইচি। সরকার মানা কল্লি তুলে ফেলব।’ এই অজ্ঞতা বা উদাসীনতাই কি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনাশের কারণ? এই বাঁধগুলো শুধু যে নদীর নাব্যতা কেড়ে নিচ্ছে তা নয়, মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্রেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অভয়াশ্রম ভেবে মাছেরা এই বাঁধে আশ্রয় নিলেও শেষ পর্যন্ত তাকে যেভাবে শিকার হতে হয়, তা মাছের প্রজননকে বাধাগ্রস্ত করে।
মাথাভাঙ্গাকে বাঁচাতে অনেক আন্দোলন হলেও নদীটিকে রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এই নীরবতা আর উদাসীনতার ফল ভোগ করতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাথাভাঙ্গাকে রক্ষা করতে না পারলে এর শাখানদ-নদীগুলোও মানচিত্র থেকে একদিন হারিয়ে যাবে। যার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করতে হবে এই জনপদের মানুষকে।
স্থানীয় প্রশাসনকে অবিলম্বে এই কোমরবাঁধ অপসারণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের বেআইনি কাজ করতে না পারে, তার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। অনেকগুলো শাখানদী থাকায় মাথাভাঙ্গার গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে এ নদী সুরক্ষার জন্য বাড়তি মনোযোগের দাবি করে। আমরা আশা করব, চুয়াডাঙ্গার প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তৎপর হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক মরব
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, আন্দোলনরত ‘তথ্য আপা’দের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান
টানা ৭২ দিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় আন্দোলনের পর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে একটি প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়। এ সময় উপদেষ্টা আন্দোলনরতদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
ঝালকাঠি সদরের তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও আন্দোলন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে তথ্য আপা প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তাঁদের কাজে ফিরে যেতে বলেছেন উপদেষ্টা।
অবশ্য উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘এই সরকার কোনো প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করছে না। তাই এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তাঁদের জন্য বিকল্প কী প্রস্তাব নেওয়া যায়, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। সেই বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তাঁদের জানিয়েছি।’
২০১১ সালে পাইলট আকারে ১৩টি উপজেলায় তথ্য আপা প্রকল্প শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৪৯২টি উপজেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। গত বছর আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন করা হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’র বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের পুরো নাম ছিল ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘তথ্য আপা: তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প’।