শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত দুই ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

ধর্ষণের অভিযোগে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলো– শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তাদের সহপাঠীকে ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, অভিযুক্ত শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। 

এছাড়া ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর সার্বিক নিরাপত্তা, শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসহ অন্যান্য শিক্ষার্থী যাতে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাইবার বুলিংয়ের শিকার না হন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ওই দুই ছাত্র মেসে নিয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের পাশাপাশি মেয়ের ভিডিও ও নগ্ন ছবি ধারণ করেছিল তারা। গত ১৯ জুন ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। ভুক্তভোগী মেয়েটি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন। এ মামলায় পুলিশ শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে গত সোমবার আদালত ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অবকাঠামো অপ্রতুল, ঝুঁকিতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল। বাংলাদেশেও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ দেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় পুরোটা আমদানিনির্ভর। অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংরক্ষণ অবকাঠামো পর্যাপ্ত হলে যুদ্ধের মতো আপৎকালে দাম ও সরবরাহ-সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলা করা সহজ হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জ্বালানি অবকাঠামো খুবই অপ্রতুল। জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের। আর এলএনজি মজুতের সক্ষমতা মাত্র দুই থেকে তিন দিনের। ফলে বৈশ্বিকভাবে কোনো সংকট হাজির হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

বাংলাদেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলে বছরে প্রায় ৯০ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত তেল এবং আটটি দেশ থেকে চুক্তি অনুযায়ী পরিশোধিত তেল আমদানি করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ  কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা অনুসারে ফার্নেস অয়েল আমদানি করে। দেশের মোট গ্যাস সরবরাহের ৩০ শতাংশ এলএনজি থেকে আসে। অধিকাংশ এলএনজি কাতার ও ওমান থেকে; রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজিও আমদানি করা হয়।

জানা যায়, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলে ১৪ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুত করার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের, যা দিয়ে মাত্র ৪০-৪৫ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। অন্যদিকে সাগরে অবস্থিত দুই এলএনজি টার্মনালের প্রতিটির মজুতের সক্ষমতা ২ লাখ ৩৮ হাজার ঘনফুট। নিয়মিত এলএনজি কার্গো না এলে এক-দুই দিনেই সরবরাহ কমে গ্যাস সংকট চরম আকার নেয়।
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহতের বিষয় নির্ভর করবে যুদ্ধের মাত্রার ওপর। স্বল্প মেয়াদে জ্বালানির ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের। তবে সংঘাত দীর্ঘ হলে আমদানি বাধাগ্রস্ত হবে, যা দেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির আলোকে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি মজুত সক্ষমতা বাড়ানো, বিকল্প উৎস নিশ্চিত ও দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায়, আপৎকালীন পরিস্থিতি দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে অচল করে দিতে পারে।
জানতে চাইলে বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা বাড়াতে ১৩ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলমান। যদিও প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হয়নি। এগুলো শেষ হলে আরও ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ টন জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা বাড়বে। এটি দিয়ে ৬০ দিন পর্যন্ত চলা সম্ভব হবে, যেটি আন্তর্জাতিক মানের।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, সমুদ্রে ভাসমান নতুন একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকার কাজ করছে। পাশাপাশি স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে। মাতারবাড়িতে এক লাখ টনের এলপিজি কারখানা তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ