মুন্সীগঞ্জে প্রাইভেটকারে অটোরিকশা ধাক্কা দেওয়ার জেরে গুলিবর্ষণের ঘটনা উঠেছে। রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার রামপাল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এতে কেউ গুলিবিদ্ধ না হলেও ধস্তাধস্তিতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে রামপাল কলেজের সামনে একটি প্রাইভেটকারে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকারে থাকা সাব্বির হোসেন দীপু নামের এক যুবক গাড়ি থেকে নেমে আসেন এবং অটোচালকের দিকে রিভলবার তাক করান।

ঘটনাস্থলের পাশেই এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন এবং দীপুকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় দীপু এলোপাথাড়িভাবে ৪ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। এতে কেউ গুলিবিদ্ধ হননি। তবে, ধস্তাধস্তিতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আরো পড়ুন:

মুরাদনগরে ধর্ষণ: হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর

ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্তকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) ফিরোজ কবির বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই পুলিশ দীপুকে আটক করে। পরে প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে ৭০ পিস ইয়াবা ও তার সঙ্গে থাকা অবৈধ রিভলবারটি জব্দ করা হয়েছে।’’

আটক সাব্বির হোসেন দীপু জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার বেতকা ছটফটিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীপু পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা থেকে বোনের বাড়ি আলদি যাচ্ছিলেন। এই ঘটনায় জেলায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, ‘‘গুলিবর্ষণের ঘটনায় দীপুর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তার বিরুদ্ধে পূর্বে হত্যাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। ঘটনার সময় তার সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’’

ঢাকা/রতন/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক

এছাড়াও পড়ুন:

নারীবান্ধব বাজেট: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

২০২৫-২৬ অর্থবছরে ‘নারী ও শিশু উন্নয়ন’, ‘সমাজকল্যাণ’, ‘স্বাস্থ্য’, ‘শিক্ষা’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ ও ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা গেছে। বাজেটে নারীবান্ধব ৪৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ বিবেচনায় নিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর নারীসংশ্লিষ্ট বাজেটের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ২৮ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এটি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই প্রথমবারের মতো নারীদের অবৈতনিক এবং অস্বীকৃত যত্ন এবং গৃহস্থালির কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে যত্নকেন্দ্রে আরও বরাদ্দ হলে ভালো হতো। 
নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম ১ হাজার টাকা করের হার নির্ধারণ, করের ভিত্তি সম্প্রসারণের জন্য একটি স্বাগত উদ্যোগ। তবে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয় স্তর এবং ব্যক্তিগত আয়কর কাঠামোতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যারা গত কয়েক বছর ধরে ক্রয়ক্ষমতার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন।
আগামী বছরে ডিজিটাল কর জমা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। মাসিক থেকে ত্রৈমাসিক রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম চালু একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, বিশেষ করে ছোট ব্যবসার জন্য তা উপকারী। তবে অনলাইন পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে এবং পরিষেবা গ্রহণকারীদের কাছে অন্তত আংশিকভাবে স্থানান্তরিত করবে।

মানবসৃষ্ট তন্তু এবং তুলা থেকে সুতা উৎপাদন পর্যায়ে নির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হলে স্থানীয় টেক্সটাইল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর উৎপাদন খরচ বাড়বে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার এবং তার কম্প্রেসরের স্থানীয় উৎপানের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার উচ্চমূল্যের আকারে গ্রাহকদের কাছে প্রেরণ করা হবে। জীবাণুমুক্ত অস্ত্রোপচার ক্যাটগাট, অস্ত্রোপচারের সেলাই আমদানির ওপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বাড়াবে। এলপিজি সিলিন্ডার, লিফট এবং গৃহস্থালির যন্ত্রপাতির ওপর ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাস ভোক্তা মূল্য বাড়াবে। তবে ধীরে ধীরে ভ্যাটের ভিত্তি প্রসারিত করবে। 

অর্থ উপদেষ্টা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছেন। সরকার আগামী তিন বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন, জেলাগুলোতে আঞ্চলিক এসএমই পণ্যমেলার আয়োজন এবং সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরির জন্য ২৫ হাজার এসএমই উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এ ছাড়া সরকার প্রান্তিক সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে (মহিলা উদ্যোক্তাসহ) ১০ বিলিয়ন টাকার ঋণ বিতরণ এবং এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৩ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে করপোরেট ক্রেতাদের সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্য ধার্য করেছে। 

বাজেটে নারী মালিকানাধীন ব্যবসা থেকে সরকারি ক্রয়ের একটি অংশ সংরক্ষণের বিধান যুক্ত হলে ভালো হতো, যা মোট সরকারি ক্রয়ের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ হতে পারে।
খাদ্য নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের কৃষি ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ২৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আরবিএফওয়াই ২৫ এর চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। ২০২৬ অর্থবছরে মোট এএএস বাজেটের ৩৭ শতাংশ কৃষি ভর্তুকি। তবে ২০২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। ভর্তুকি কমানো ও কীভাবে অতিরিক্ত খরচ মেটাতে সাহায্য করতে পারে, তা স্পষ্ট নয়।
ভর্তুকি থেকে কৃষকরা সম্পূর্ণ সুবিধা পাননি। এটি উন্নত তদারকি এবং ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। কৃষিক্ষেত্রে নারীরা মূলত নিয়োজিত এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্যের সময়ে নারীরাই প্রথম ত্যাগ স্বীকার করে। তাই কৃষক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দান এবং কৃষিতে নারীদের অনুকূলে ইনপুট সহায়তা কার্ড প্রদান গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। ভর্তুকি কাঠামো যুক্তিসংগত এবং মহিলা কৃষকের প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি প্রদানের জন্য সম্পদ বরাদ্দ করা দরকার।  

বাজেটের ঘাটতি ও চ্যালেঞ্জ
১. বরাদ্দ ও বাস্তবায়নের পার্থক্য: অনেক সময় বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা সময়মতো বা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। নারীবান্ধব প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্বলতা, স্বচ্ছতার অভাব এবং মনিটরিং ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।
২. লিঙ্গবৈষম্যমূলক ব্যয় বিশ্লেষণের ঘাটতি: যদিও লিঙ্গ-সংবেদনশীল বাজেট চালু রয়েছে, তবে প্রকৃত লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। এতে প্রকৃতপক্ষে নারী কতটা উপকৃত, তা নির্ণয় করা কঠিন।
৩. শহর বনাম গ্রামীণ বৈষম্য: শহরের শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত নারীরা কিছু সুযোগ পেলেও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ ও দরিদ্র নারীরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
৪. নারীর সুরক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধে সীমিত বরাদ্দ: নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং সাইবার ক্রাইম রোধে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা, পুনর্বাসন ব্যবস্থার জন্য বাজেটে বরাদ্দ এখনও অপ্রতুল।
৫. অপ্রচলিত খাতে নারীর অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা: প্রযুক্তি, পরিবহন, নির্মাণ ইত্যাদি অপ্রচলিত খাতে নারীদের অংশগ্রহণে সহায়ক নীতিমালা এবং বাজেট সহায়তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।


সুপারিশ
১. বাস্তবায়ন মনিটরিং জোরদার: বাজেট বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মনিটরিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।
২. গ্রামীণ নারীদের অগ্রাধিকার: নারীবান্ধব প্রকল্পগুলোতে গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৩. প্রযুক্তিতে নারীর প্রবেশ: তথ্যপ্রযুক্তি ও উদীয়মান খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বাজেট সহায়তা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
৪. লিঙ্গ-সংবেদনশীল বিশ্লেষণ: বাজেট প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে লিঙ্গ সংবেদনশীল বিশ্লেষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একক জানালা: ব্যাংকিং ও সরকারি সহায়তা পেতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ চালু করা দরকার।
৬. নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন গঠনের জন্য সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন, যাতে নারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) অত্যন্ত শক্তিশালী স্তম্ভ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বিকাশে এর বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ খাত প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে দেশে এসএমই কোম্পানির সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষের। অর্থাৎ শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের ৮৭ শতাংশই এই খাতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিনিয়ত বেকারের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এর বড় অংশই শিক্ষিত। শিক্ষাজীবন শেষ করে শ্রমবাজারে আসার পর তাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান মিলছে না। বর্তমানে দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারী ১০০ জনের মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। ফলে বেকারত্ব নিরসনে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ খাত নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও কার্যকর উদ্যোগ একেবারেই সীমিত। দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা, ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে এসএমইকে সংযুক্ত, কর কাঠামো ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সহায়তায় প্রদর্শনীর আয়োজন করা। 

নাসরীন ফাতেমা আওয়াল: সভাপতি, উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব), পরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশন

সম্পর্কিত নিবন্ধ