বাংলাদেশি পণ্যে সামান্য কমিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক রাখলেন ট্রাম্প, আগস্ট থেকে কার্যকর
Published: 8th, July 2025 GMT
৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।
একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৯ জুলাই থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
যে ১৪ দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ: বার্তা সংস্থা রয়র্টাসের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করেছে হোয়াইট হাউস। মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নতুন করে চূড়ান্ত এ শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করে ১৪টি দেশের সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। এসব চিঠি ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশও করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, সামনে আরও কিছু দেশের উদ্দেশে শুল্ক-বিষয়ক চিঠি পাঠানো হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
এর আগে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮৪০ কোটি ডলারের মতো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়ে থাকে যার বেশিরভাগ তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ডলার।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শুল্ক চু্ক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠকে বসার সিডিউল ছিল প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত চূক্তির খসড়া নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত পাল্টা শুল্ক চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। জবাবে খসড়ার ওপর মতামত ওয়াশিংটনে পাঠায় ঢাকা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিরা (ইউএসটিআর) বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে উভয় পক্ষের দরকষাকষির পর খসড়ায় আবারও কিছুটা পরিবর্তন আনছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সংশোধিত খসড়া নিয়েই বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক হওয়ার উভয় পক্ষ।
বাণিজ্য বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, পাল্টা শুল্ক চুক্তির খসড়ায় সংযোজন-বিয়োজন করে ইতোমধ্যেই দুবার মতামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এসব মতামতের বিষয়ে দরকষাকষি করতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান।
দরকষাকষি শেষে চুক্তি করতে কতদিন সময় লাগতে পারে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চুক্তি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য যে কোনো দেশের সঙ্গে এগিয়ে রয়েছি। গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে এ পর্যন্ত ২৮ দফা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিতে হবে। এরপর ভেটিং হয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন। তারপরই চুক্তি করার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষ থেকে বেশকিছু কঠিন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন–কানুনের মধ্য থেকে বাংলদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ওপরই বেশি জোর দিয়ে মতামত দিয়েছে। কারণ, বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এক্ষেত্রে খসড়ার মতামতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে এমন অন্তত ৪১ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি আনার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, প্রোপেন বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), সয়াবিন তেল, গম, এলএনজি উল্লেখযোগ্য।
সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি কেনাকাটা বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়টিও মতামতে জানানো হয়। এরই অংশ হিসেবে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তির আওতায় বাড়তি আরও ১ বিলিয়ন ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হবে। খাদ্য-শস্য আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানি উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব গম আমদানি সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক কেনাকাটার মূল উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে এ অস্ত্র কেনা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং–এর প্রায় সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি থেকে আরও কিছু উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে তা উল্লেখ করে, এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেল সেই তালিকা তুলে ধরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের পাল্টা ওই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনও ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’। দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয়, তার ৮০ শতাংশের বেশি সে দেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয়, সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সে দেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য। ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প য ক তর ষ ট র র র য ক তর ষ ট র র রহম ন উল ল খ আমদ ন সরক র মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল