কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
Published: 29th, July 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তরে মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভেসে আসে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মৃত ব্যক্তি কোনো জেলে হতে পারেন। তবে আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহটি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, মহেশখালী থানার পুলিশ সোনাদিয়া উপকূল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে বেসরকারি উদ্ধারকারী সংস্থা সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। মরদেহটি পচে বিকৃত হয়ে গেছে। মাথার চুল উঠে গেছে। সাধারণত মৃত্যুর ২ থেকে ৪ দিন পর সাগরে ভেসে থাকলে এমন অবস্থা হয়। তবে এটি নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের মরদেহ নয়। কারণ, অরিত্রর বয়স ২২ বছর।
ইমতিয়াজ আহমদ জানান, ৭ জুলাই সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন অরিত্র। এর পর থেকে বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল ও মোহনায় তাঁর সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। কোথাও লাশ ভেসে উঠলেই যাচাই করা হচ্ছে সেটি অরিত্রর কি না।
সাত দিন আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মেঘনা মোহনায় এক ব্যক্তির লাশ ভেসে ওঠে। সেটিও অরিত্র ভেবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সেটিও তাঁর লাশ ছিল না। ওই মৃত ব্যক্তির বয়স ছিল ৩২ বছর। পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি। কিন্তু অরিত্রর গায়ে ছিল নীল গেঞ্জি ও থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।
এখনো নিখোঁজ অরিত্র
৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নামেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী—অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। তাঁদের মধ্যে প্রথমে সাদমান রহমানের লাশ উদ্ধার হয় হিমছড়ি সৈকত থেকেই। পরদিন সকালে নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ। কিন্তু ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খোঁজ নেই অরিত্রর।
সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, অরিত্রকে খুঁজতে কক্সবাজার উপকূলের ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছে। মহেশখালী, সোনাদিয়া, নুনিয়াছড়া উপকূল, বিভিন্ন মোহনা এবং সাগর চ্যানেলেও তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান পরিচালনায় ছিলেন বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পর্যটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিচের কর্মীরা।
ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ণিমার জোয়ারের টানে অরিত্রের মরদেহ গভীর সাগরে ভেসে গেছে। গত তিন দশকে ৭০ জনের বেশি পর্যটক সৈকতে ডুবে মারা গেলেও তাঁদের কারও লাশ তিন দিনের বেশি নিখোঁজ ছিল না। শুধু অরিত্রর ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীদের মতে, চলতি জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে পাঁচটি নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে সৈকতে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, অরিত্রের লাশ হয়তো এসব গুপ্তখালের তলদেশে বালুচাপায় আটকে আছে অথবা গভীর সাগরে হারিয়ে গেছে।
তাঁরা জানান, বিমানবাহিনীর ড্রোন দিয়ে সাত দিন ধরে সাগরের গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান চালানো হয়। তাতেও কোনো ফল মেলেনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জানানো হয়েছে—লাশ ভেসে উঠলে যেন সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়।
অরিত্রর বাবা সাকিব হাসান ঢাকায় একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে আসেন। টানা ১৯ দিন ধরে বিভিন্ন সৈকত চষে বেড়িয়েছেন। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কখনো নিঃশব্দে তাকিয়ে থেকেছেন সাগরের দিকে।
সাকিব হাসান বলেন, ‘শুনেছি, সাগর যা নেয়, তা ফিরিয়ে দেয়। তবে অরিত্রর ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রম হলো কেন? আমরা যেকোনো অবস্থায় ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’
অরিত্রর মা জেসমিন আক্তার এখনো অপেক্ষায় আছেন—যদি কোনো এক ঢেউয়ে ভেসে আসে অরিত্র।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব