ইউক্রেনের গ্রামের পর গ্রাম কীভাবে দখলে যাচ্ছে রাশিয়ার
Published: 30th, July 2025 GMT
ভ্যালেন্টিন ভেলিকিই গত বছর খেয়াল করেন, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ তাঁদের এলাকার আরও কাছাকাছি চলে আসছে। চলতি গ্রীষ্মের শুরুতে যুদ্ধ তাঁর বাড়ির দোরগোড়ায় চলে আসে। তিনি বলেন, ‘দিন–রাত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যেত। সম্প্রতি আমার ঘরের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র যেতে শুরু করেছে। গর্জনের মতো শব্দ হয়। আকাশে ধোঁয়ার মতো একটি রেখা দেখা যায়।’ ৭২ বছর বয়সী পেনশনভোগী ভেলিকিই যুদ্ধের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে এ কথা বলেন।
ভেলিকিইয়ের বাড়ি কৃষিপ্রধান মালিয়িভকা গ্রামের ১৮ নম্বর পেট্রেংকো স্ট্রিটে। এটি কেন্দ্রীয় পূর্ব ইউক্রেনের দনিপ্রোপেত্রোভস্ক এবং দোনেৎস্ক প্রদেশের প্রশাসনিক সীমান্তে অবস্থিত। আগে রাশিয়ার সেনারা অনেক দূরে ছিলেন। পরে তাঁরা ধীরে ধীরে কাছে চলে আসেন। এখন তাঁরা পৌকোভস্ক শহরকে ঘেরাও করছেন এবং একটির পর একটি উন্মুক্ত প্রান্তর দখল করছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপে ১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, যা এখন পুরোদমে চলছে। প্রায় ৯৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনজুড়ে যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের শহর ও গ্রামে বোমাবর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। প্রতি রাতে তারা শত শত ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষ আকাশপথে হামলার সাইরেন ও বিস্ফোরণের গর্জনের শব্দে ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
মে মাসে মালিয়িভকা গ্রামে তীব্র লড়াই শুরু হয়। এ অঞ্চল রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। হামলার শুরুতেই পুরোনো বাসস্টেশনের পাশের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গ্রামটির বাকি সবকিছুতেই আঘাত করা হয়। এর ফলে গ্রামটির প্রায় ৩০০ বাসিন্দা অন্যত্র চলে যায়। শুধু ভেলিকিই ও তাঁর মতো জেদি প্রতিবেশী মাইকোলা থেকে যান। কিছুদিন স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁদের খাবার ও পানি দিয়ে যেতেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠার পর তাঁরা আসা বন্ধ করে দেন।
গত সপ্তাহে ভেলিকিই তাঁর বন্ধু মাইকোলার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। সব সময়ের মতো এবারও তিনি সঙ্গে করে চা ও মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখেন, মাইকোলা নিখোঁজ। উঠানে পড়ে আছে মৃত মুরগি। তিনি বলেন, ‘আমি মাইকোলার নাম ধরে ডাকলাম। কিন্তু সে তো চলে গেছে। আমি ভাবলাম, হায় ঈশ্বর, সত্যি কি আমাদের সেনাবাহিনী পিছু হটতে যাচ্ছে?’ পরদিন তিনি পুরোটা সময় ইউক্রেনের সেনাদের খোঁড়া আশ্রয়স্থলে লুকিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় বেরিয়ে মাইকোলার কুয়ো থেকে তিনি পানি নিয়ে আসেন।
যখন ভেলিকিই বাইরে ছিলেন, তখন তাঁর বাড়ির ওপর একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিকট শব্দ শুনলাম! আমার ঝুপড়িটি একমুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল। কিছুই বাকি রইল না। এটা সম্ভবত একটা গ্লাইড বোমা ছিল।’ গ্লাইড বোমা বলতে এমন একধরনের বোমাকে বোঝায়, যা বিমান থেকে ফেলা বা ছোড়ার পর নিশানায় আঘাত করার আগপর্যন্ত আকাশে ভেসে থাকতে পারে।
ভোরের দিকে ভেলিকিই নিজের পোষা প্রাণীগুলোকে ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে মাঠ ধরে যাত্রা শুরু করেন। পেছনে তাঁর বিধ্বস্ত বাড়ি, ডান পাশে একটি এবড়োখেবড়ো রাস্তা, আর সামনে ভেলিকোমিখাইলিভকা নামের একটি বড় গ্রাম। তপ্ত রোদে তিনি ছয় ঘণ্টা হেঁটে চলেন।
প্রথমবারের মতো, রাশিয়ার যুদ্ধরত সেনাদের ইউনিটগুলো দনিপ্রোপেত্রোভস্ক প্রদেশে ভূখণ্ড দখলের খুব কাছে চলে এসেছে। ২০২২ সালে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছিল, তারা ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ—লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝঝিয়া দখল করে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু আসল বিষয় হলো, তারা শুধু লুহানস্কই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে।
অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, রুশ সেনারা মালিয়িভকা এবং অন্যান্য এলাকায় প্রবেশ করতে পারলে দনিপ্রোপেত্রোভস্কও এই তালিকায় যোগ হবে। অর্থাৎ রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হবে।
গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ক্রেমলিনের সঙ্গে আবার সরাসরি আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন পর্যন্ত আপস করতে রাজি হননি। তিনি চান, জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া হোক, ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা হোক এবং ইউরোপের একটি নতুন মানচিত্র তৈরি করা হোক, যেখানে রাশিয়ার আয়তন হবে বর্তমানের চেয়ে বড়।
রাশিয়ার বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি কারাগারে শুয়ে আছেন এক বন্দী। ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে
ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাত্র ১২৭ রানে অলআউট হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আরও কম, ১২৫ রানে। কিন্তু রোববার (০২ নভেম্বর) তারা চোখে চোখ রেখে লড়াই করল আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে আফগানদের করা ২১০ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করে হার মানে মাত্র ৯ রানে। দুই ইনিংসে রান হয়েছে মোট ৪১১টি। যা আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ।
আরো পড়ুন:
কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস
ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
স্বাগতিকরা থেমে থেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ব্রিয়ান বেনেট, সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল ও তাশিনগা মুসেকিওয়ার ব্যাটে লড়াই করে শেষ বল পর্যন্ত। বেনেট ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৭ রান। অধিনায়ক রাজা ৭টি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৫১ রান। বার্ল ১৫ বলে ৫ ছক্কায় খেলেন ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর মুসেকিওয়া ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২৮ রান।
বল হাতে আফগানিস্তানের আব্দুল্লাহ আহমদজাই ৪ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ফজল হক ফারুকি ৪ ওভারে ২৯ রানে ২টি ও ফরিদ আহমদ ৩ ওভারে ৩৮ রানে নেন ২টি উইকেট।
তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ১৫.৩ ওভারে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। এই রানে গুরবাজ আউট হন ৪৮ বলে ৮টি চার ও ৫ ছক্কায় ৯২ রানের ইনিংস খেলে। মাত্র ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। ১৬৩ রানের মাথায় ইব্রাহিম আউট হন ৭টি চারে ৬০ রান করে। এরপর সেদিকুল্লাহ অটল ১৫ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহকে ২১০ পর্যন্ত নিয়ে যান।
বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্রাড ইভান্স ৪ ওভারে ৩৩ রানে ২টি উইকেট নেন। অপর উইকেটটি নেন রিচার্ড এনগ্রাভা।
৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন গুরবাজ। আর মোট ১৬৯ রান করে সিরিজ সেরা হন ইব্রাহিম জাদরান।
ঢাকা/আমিনুল