ভ্যালেন্টিন ভেলিকিই গত বছর খেয়াল করেন, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ তাঁদের এলাকার আরও কাছাকাছি চলে আসছে। চলতি গ্রীষ্মের শুরুতে যুদ্ধ তাঁর বাড়ির দোরগোড়ায় চলে আসে। তিনি বলেন, ‘দিন–রাত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যেত। সম্প্রতি আমার ঘরের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র যেতে শুরু করেছে। গর্জনের মতো শব্দ হয়। আকাশে ধোঁয়ার মতো একটি রেখা দেখা যায়।’ ৭২ বছর বয়সী পেনশনভোগী ভেলিকিই যুদ্ধের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে এ কথা বলেন।

ভেলিকিইয়ের বাড়ি কৃষিপ্রধান মালিয়িভকা গ্রামের ১৮ নম্বর পেট্রেংকো স্ট্রিটে। এটি কেন্দ্রীয় পূর্ব ইউক্রেনের দনিপ্রোপেত্রোভস্ক এবং দোনেৎস্ক প্রদেশের প্রশাসনিক সীমান্তে অবস্থিত। আগে রাশিয়ার সেনারা অনেক দূরে ছিলেন। পরে তাঁরা ধীরে ধীরে কাছে চলে আসেন। এখন তাঁরা পৌকোভস্ক শহরকে ঘেরাও করছেন এবং একটির পর একটি উন্মুক্ত প্রান্তর দখল করছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপে ১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, যা এখন পুরোদমে চলছে। প্রায় ৯৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনজুড়ে যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের শহর ও গ্রামে বোমাবর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। প্রতি রাতে তারা শত শত ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষ আকাশপথে হামলার সাইরেন ও বিস্ফোরণের গর্জনের শব্দে ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

মে মাসে মালিয়িভকা গ্রামে তীব্র লড়াই শুরু হয়। এ অঞ্চল রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। হামলার শুরুতেই পুরোনো বাসস্টেশনের পাশের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গ্রামটির বাকি সবকিছুতেই আঘাত করা হয়। এর ফলে গ্রামটির প্রায় ৩০০ বাসিন্দা অন্যত্র চলে যায়। শুধু ভেলিকিই ও তাঁর মতো জেদি প্রতিবেশী মাইকোলা থেকে যান। কিছুদিন স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁদের খাবার ও পানি দিয়ে যেতেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠার পর তাঁরা আসা বন্ধ করে দেন।

গত সপ্তাহে ভেলিকিই তাঁর বন্ধু মাইকোলার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। সব সময়ের মতো এবারও তিনি সঙ্গে করে চা ও মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখেন, মাইকোলা নিখোঁজ। উঠানে পড়ে আছে মৃত মুরগি। তিনি বলেন, ‘আমি মাইকোলার নাম ধরে ডাকলাম। কিন্তু সে তো চলে গেছে। আমি ভাবলাম, হায় ঈশ্বর, সত্যি কি আমাদের সেনাবাহিনী পিছু হটতে যাচ্ছে?’ পরদিন তিনি পুরোটা সময় ইউক্রেনের সেনাদের খোঁড়া আশ্রয়স্থলে লুকিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় বেরিয়ে মাইকোলার কুয়ো থেকে তিনি পানি নিয়ে আসেন।

যখন ভেলিকিই বাইরে ছিলেন, তখন তাঁর বাড়ির ওপর একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিকট শব্দ শুনলাম! আমার ঝুপড়িটি একমুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল। কিছুই বাকি রইল না। এটা সম্ভবত একটা গ্লাইড বোমা ছিল।’ গ্লাইড বোমা বলতে এমন একধরনের বোমাকে বোঝায়, যা বিমান থেকে ফেলা বা ছোড়ার পর নিশানায় আঘাত করার আগপর্যন্ত আকাশে ভেসে থাকতে পারে।

ভোরের দিকে ভেলিকিই নিজের পোষা প্রাণীগুলোকে ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে মাঠ ধরে যাত্রা শুরু করেন। পেছনে তাঁর বিধ্বস্ত বাড়ি, ডান পাশে একটি এবড়োখেবড়ো রাস্তা, আর সামনে ভেলিকোমিখাইলিভকা নামের একটি বড় গ্রাম। তপ্ত রোদে তিনি ছয় ঘণ্টা হেঁটে চলেন।

প্রথমবারের মতো, রাশিয়ার যুদ্ধরত সেনাদের ইউনিটগুলো দনিপ্রোপেত্রোভস্ক প্রদেশে ভূখণ্ড দখলের খুব কাছে চলে এসেছে। ২০২২ সালে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছিল, তারা ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ—লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝঝিয়া দখল করে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু আসল বিষয় হলো, তারা শুধু লুহানস্কই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে।

অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, রুশ সেনারা মালিয়িভকা এবং অন্যান্য এলাকায় প্রবেশ করতে পারলে দনিপ্রোপেত্রোভস্কও এই তালিকায় যোগ হবে। অর্থাৎ রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হবে।

গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ক্রেমলিনের সঙ্গে আবার সরাসরি আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন পর্যন্ত আপস করতে রাজি হননি। তিনি চান, জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া হোক, ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা হোক এবং ইউরোপের একটি নতুন মানচিত্র তৈরি করা হোক, যেখানে রাশিয়ার আয়তন হবে বর্তমানের চেয়ে বড়।

রাশিয়ার বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি কারাগারে শুয়ে আছেন এক বন্দী। ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ