দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল খালাসে শুল্ক জটিলতার সমাধান হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৬৩.৫ শতাংশ শুল্কহার কমিয়ে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর নির্ধারণ করেছে। ফলে এই বন্দরে গত ছয়দিন ধরে আটকে থাকা ২ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল খালাসে আর বাধা নেই।

সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরের দিকে কাস্টমসের এসআই কোডা সার্ভারে এই হালনাগাদ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে হিলি কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে। 

আরো পড়ুন:

ভোমরা স্থলবন্দর এল ২০২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ

পানামা পোর্ট লিংকের এমডি মারা গেছেন

আরো পড়ুন: হিলি বন্দরে আটকা চালবোঝাই ৬৪ ট্রাক, বিপাকে ভারতীয় চালকরা

হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রদানের নির্দেশনা জারি হয়েছে। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা এই হারেই চাল খালাস করতে পারবেন।

এদিকে, শুল্ক জটিলতা কেটে যাওয়ায় বন্দরে আটকে থাকা চাল খালাসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দ্রুত চাল খালাস শুরু হলে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং চালের দাম কমে আসবে।

প্রায় চার মাস বন্ধ থাকার পর গত ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানি শুরু হয় হিলি স্থলবন্দরে। ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৬৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে ২ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে এই বন্দরে।

রবিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে হিলি স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারত থেকে আসা চালবোঝাই ট্রাক। গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) থেকে এসব ট্রাক চাল খালাসের অপেক্ষায় আছে। 

রিপন মন্ডল নামের এক ভারতীয় ট্রাকচালক বলেছেন, গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে চালবোঝাই ট্রাক নিয়ে এই বন্দরে নিয়ে এসেছি। রবিবার পর্যন্ত চালের মালিক চাল খালাস করেননি। ছয় দিন হয়ে যাচ্ছে, এখানে পড়ে আছি।

গত রবিবার চাল আমদানিকারকরা জানান, ৬৩.

৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজিতে কাস্টমস শুল্ক-কর পড়বে ৩১ টাকা। আবার ভারতে চালের আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৫২০ থেকে ৫৩০ ডলার। তাতে প্রতি কেজি চাল বাংলাদেশি টাকায় ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা পড়ে। সবমিলিয়ে প্রতি কেজি চাল আমদানি করতে পড়বে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা। ফলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল আমদানি সম্ভব না। সরকার যদি আগের মতো চাল আমদানিতে ২ শতাংশ শুল্ক-কর বসায়, তাহলে আমদানি করা যাবে এবং বন্দরে যেসব চাল আমদানি করা হয়েছে, সেসব চাল খালাস করা হবে।

ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন ম ট র ক টন চ ল আমদ ন ক স টমস আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ