বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই পাবনা-৩ এবং পাবনা-৪ আসনে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। আসন দুটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মাঠে নেমেছে দলের একাংশ। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ। 

পাবনার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। পাবনা-১ (সাঁথিয়া) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। 

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহ করবে, অবশ্যই তাদের বিষয়ে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে আমরা মনে করি, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এসব বিরোধ থাকবে না।’

এদিকে জামায়াতে ইসলামী জেলার সব কটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছে। দলীয় নেতা–কর্মীরা এখন ব্যস্ত নির্বাচনী মাঠ গোছানো নিয়ে। তবে একটি আসনে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্যের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা দলীয় প্রার্থীর চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন ভোটারদের অনেকে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পাঁচটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। কয়েকটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

পাবনা-১ (সাঁথিয়া)

আসনটি সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার একাংশ নিয়ে ছিল। এবার বেড়ার অংশ বাদ দিয়ে আসনটি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আসনটিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৬ সালে তাঁর ফাসি কার্যকর হয়।

এবার জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমেন।

আসনটিতে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুর রহমান, সদস্যসচিব মো.

সালাহ উদ্দিন খান, সাংবাদিক এম এ আজিজসহ অন্তত পাঁচজন দলীয় মনোনয়নের আশায় প্রচার চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের আবদুল গণি এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমজাদ হোসেন দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর)

আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব। তিনি ২০০১ সালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। 

জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় আছেন দলের সুজানগর উপজেলা শাখার আমির হেসাব উদ্দিন। আগে কখনো জয় না পাওয়া আসনটিতে এবার বেশ নড়েচড়ে বসেছে দলটি।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আফজাল হোসেন, খেলাফত মজলিসের আলতাব হোসেন এবং গণ অধিকার পরিষদের গোলাম সরওয়ার খান মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।

পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর)

চলনবিল বিস্তৃত তিনটি উপজেলা পড়েছে এই আসনে। বিএনপি এখানে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফিরকে (তুহিন) মনোনয়ন দিয়েছে। তবে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা হাসানুল ইসলাম। এই তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সমর্থকেরা নিয়মিত বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি করছেন। প্রার্থী পরিবর্তন না হলে তিনজনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হাসান জাফির বলেন, ‘অনেক আসনেই এমন বিরোধিতা চলছে। আমরা এসব আমলে নিচ্ছি না। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি’

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন মো. আলী আছগার। তিনি ভাঙ্গুড়া উপজেলা জামায়াতের আমির। এবার প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

অন্যদের মধ্যে গণফোরামের সরদার আশা পারভেজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মো. মফিজ উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুল খালেক প্রচার চালাচ্ছেন। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় খন্দকার আক্তার হোসেন।

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া)

নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ নভেম্বর ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। সংঘর্ষের সময় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা জামায়াত কর্মী তুষার হোসেনকে (২১) গত ১ ডিসেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা শাখার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান আসনটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

জাকারিয়া পিন্টু দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন না করা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকেই চাইতে পারে, দল আমাকে পছন্দ করে প্রার্থী মনোনীত করেছে। আমি দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে কাজ করছি।’

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা শাখার আমির আবু তালেব মণ্ডল। তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন করছেন। 

অন্য দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের  আনোয়ার হোসেন ও খেলাফত মজলিসের আল আমিন প্রচারণায় আছেন। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর বিএফ শাহীন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ।

পাবনা-৫ (সদর)

জেলার শহর হিসেবে আসনটি বরাবরই আলোচনায় থাকে। এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শ্রমিকনেতা হিসেবে তাঁর পরিচিত রয়েছে।

জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইকবাল হুসাইনকে এখানে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আসনটিতে নির্বাচিত হন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির প্রয়াত আবদুস সুবহান। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। কারাবন্দী অবস্থায় ২০২০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এবারের নির্বাচনে তাঁর ছেলে নেছার আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান। তিনি এলাকায় পোস্টারিংসহ নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ভোটারদের অনেকেই বলেন, এখানে আবদুস সুবহানের ব্যক্তি ইমেজ আছে। এর ফলে নেছার আহমেদ শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হলে জামায়াতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আসনটিতে অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটির উপদেষ্টা মুফতি নাজমুল হাসান, খেলাফত মজলিসের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ওয়ালী উল্লাহ প্রচার চালাচ্ছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বতন ত র প র র থ দল য় প র র থ র রহম ন ব এনপ র ল ইসল ম আসনট ত ন প বন কম ট র করছ ন এনস প উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

তফসিলের আগেই নির্বাচনী হাওয়া, বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীর পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সরব হয়ে উঠেছে। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন। তাঁরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার–ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে জেলা শহর ও উপজেলাগুলো। ফলে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে শিল্প–অধ্যুষিত এ জেলায়।

নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদর) আসনটি ফাঁকা রেখে জেলার অন্য চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলীয় প্রার্থী নিয়ে দুটি আসনে বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে, যা দলীয় রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও সব কটি আসনে নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে। একাধিক আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বেশ কয়েকজন নেতা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ)

রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীর লাগোয়া আসনটিতে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুবার, বিএনপি একবার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। এবার জাতীয় পার্টি এখনো মাঠে নেই। আওয়ামী লীগ বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল। বিএনপি ও জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীরা এলাকায় তৎপর।

বিএনপি এখানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়াকে (দিপু ভুঁইয়া) প্রার্থী করেছে। তিনি এবার প্রথম সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে এখানে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি এবার মনোনয়ন পাননি।

জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন। তাঁরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার–ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে জেলা শহর ও উপজেলাগুলো।

গণসংযোগ শুরুর পর থেকে মানুষের সাড়া পাচ্ছেন উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কে এমপি-মন্ত্রী হলো সেট বড় বিষয় নয়, রূপগঞ্জবাসীর জন্য উন্নয়ন ও দলের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’

জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে আনোয়ার হোসেন মোল্লাকে। রূপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের মজলিশে শুরার এই সদস্য এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সাবেক আহ্বায়ক নীরব রায়হান ও যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক সাইফুল ইসলাম এখানে এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদর) আসনটি ফাঁকা রেখে জেলার অন্য চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলীয় প্রার্থী নিয়ে দুটি আসনে বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে, যা দলীয় রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার)

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। দলের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে এক মঞ্চে সভা–সমাবেশ করছেন অপর তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার অনুসারীরা। তাঁরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার।

অবশ্য নজরুল ইসলাম মনে করেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই।

মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুনাম ও জনপ্রিয়তা যাঁর আছে, তাঁকে প্রার্থী করা হলে
জনগণ আনন্দ উৎসব নিয়ে ভোট দিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করবেন।

এ আসনে জামায়াত প্রার্থী করেছে জেলার কর্মপরিষদ সদস্য ইলিয়াছ মোল্লাকে। তিনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি মো. হাবিব উল্লাহও মাঠে তৎপর।

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ)

আসনটিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম (মান্নান) মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই তিন সদস্যসহ ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এক হয়ে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রে চিঠি, এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করে আসছেন।

তবে আজহারুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা মাঠে ছিলেন না, তাঁদের নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি জনগণের হৃদয়ে আছি, জনগণের এমপি হতে চাই।’

সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, ‘দল এখনো কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়নি। আমরা বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবে—এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের কাছে দাবি জানিয়েছি।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ইকবাল হোসেন ভুঁইয়া এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এনসিপি থেকে দলটির যুবসংগঠন যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সাবেক সদস্যসচিব জাবেদ আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও সব কটি আসনে নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদর উপজেলা)

সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন গঠিত। শিল্প ও শ্রমিক–অধ্যুষিত এ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহ্ আলমের পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এই আসনেও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

২০০৮ ও ২০১৮ সালে এখানে প্রথমে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন মোহাম্মদ শাহ্ আলম। তবে ২০১৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমীকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। এবারও বিএনপি আসনটিতে জোটের প্রার্থীকে ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা আছে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, ‘গত দুটি নির্বাচনে দলের নির্দেশে জোটের জন্য আসনটি ছেড়ে দিয়েছি। এবার দলীয় প্রার্থী চান নেতা–কর্মী ও ভোটাররা।’

জামায়াত এখানে দলের মহানগরের আমির আবদুল জব্বারকে প্রার্থী করেছে। তিনি এলাকায় প্রচার চালিয়ে আসছেন। আবদুল জব্বার বলেন, মানুষ আর ভোট ডাকাতি চায় না।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন থেকে ওলামা মাসায়েক আইমা পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মুফতি ইসমাঈল সিরাজী, খেলাফত মজলিস থেকে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ হোসেন গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

এ আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ্ আল আমিন প্রার্থী হতে চান। তিনি বলেন, চলতি মাস শেষেই দলের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর)

শীতলক্ষ্যার দুই পাড় নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি এবার প্রার্থী করেছে ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্প উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান মাসুদকে। তিনি এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে আসছেন।

মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত একটি আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়াই আমার মূল লক্ষ্য।’

মাসুদুজ্জামান ছাড়াও এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন, শিল্পপতি আবুল জাফর বাবুল।

এদিকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করছেন। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এ বি এম সিরাজুল মামুনকে এ আসনে প্রার্থী করেছে দলটি। জামায়াতসহ আটটি ইসলামপন্থী দল মিলে নির্বাচনী জোট হলে এ আসনে সিরাজুল মামুন প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

সিরাজুল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলামিক আদর্শের ভিত্তিতে আমরা ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক, জনকল্যাণমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে নির্বাচনী মাঠে অবতীর্ণ হয়েছি।’

গণসংহতি আন্দোলন তরিকুল সুজনকে এবং ইসলামী আন্দোলন মাসুম বিল্লাহকে মনোনয়ন দিয়েছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান ও দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী এখানে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামের দুই আসন এখনো ফাঁকা, কারা হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী
  • রেজা কিবরিয়া মনোনয়ন পাওয়ায় খুশি বিএনপির একাংশ, অসন্তুষ্ট ‘বঞ্চিত’ নেতারা
  • তফসিলের আগেই নির্বাচনী হাওয়া, বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে
  • খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করল জামায়াত