মিয়ানমারের অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্র থেকে ২ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার
Published: 22nd, October 2025 GMT
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি বড় অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করেছে এবং বেশ কিছু স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট টার্মিনাল জব্দ করেছে। সোমবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ‘মায়ানমা অ্যালিন’ এই খবর জানিয়েছে।
মায়ানমা অ্যালিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইন প্রতারণা, অবৈধ জুয়া এবং সীমান্তপারের সাইবার অপরাধ দমনের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে অভিযান শুরু করে। সেটার আওতায় কুখ্যাত সাইবার অপরাধ কেন্দ্র ‘কে কে পার্কে’ অভিযান চালানো হয়।
সংবাদমাধ্যমটি জব্দ করা স্টারলিংকের সরঞ্জাম এবং অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাদের ছবি প্রকাশ করেছে। তবে সেগুলি ঠিক কখন তোলা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী জোরে দিয়ে বলেছে, কে কে পার্কের ২৬০টির বেশি ভবন অনিবন্ধিত। তাঁরা ৩০ সেট স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট টার্মিনালসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম জব্দ করেছে। ২ হাজার ১৯৮ জনকে আটক করেছে। তবে তাঁরা কোন দেশের নাগরিক, তা জানানো হয়নি।
বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষকে প্রতারণার জন্য দায়ী নানা স্ক্যাম অপারেশন মিয়ানমার থেকে পরিচালিত হয়। সাধারণত অনলাইনে রোমান্টিক প্রলোভন এবং ভুয়া বিনিয়োগ প্রস্তাবের মাধ্যমে এসব করা হয়।
কেন্দ্রগুলো বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের সময় ভুয়া প্রতিশ্রুতি দেয়, তাঁদের বৈধ চাকরির প্রলোভন দেখায়, তারপর বন্দী করে রেখে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে বাধ্য করে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কম্বোডিয়ার একটি বড় সাইবার স্ক্যাম গ্যাংয়ের সন্দেহভাজন সংগঠকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিউ ইয়র্কের একটি কেন্দ্রীয় আদালত সেই গ্যাংয়ের সন্দেহভাজন প্রধানকে অভিযুক্ত করেন। এরপর স্ক্যাম অপারেশনগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে।
কে কে পার্ক মিয়ানমারের থাইল্যান্ড সীমান্তের কায়িন রাজ্যের মায়াওয়াড্ডি শহরে অবস্থিত। এই এলাকায় মিয়ানমারের সামরিক সরকারের তেমন একটা নিয়ন্ত্রণ নেই। এলাকাটিতে বরং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীগুলোর প্রভাব রয়েছে।
সোমবার রাতে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন অভিযোগ করেন, কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা কে কে পার্ক পরিচালিত স্ক্যাম প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িত।
আগেও এই অভিযোগ করা হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তি ছিল, কারেন গ্রুপ সমর্থিত একটি কোম্পানি সেই জমি ইজারা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক সরকার-বিরোধী চলমান সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
স্টারলিংক বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির একটি উদ্যোগ। এর টার্মিনালগুলো কোম্পানির উপগ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মিয়ানমারে এই কোম্পানির লাইসেন্স নেই। তা সত্ত্বেও দেশটিতে অবৈধভাবে স্টারলিংকের শত শত টার্মিনাল প্রবেশ করেছে।
এই বিষয়ে জানতে সোমবার ইলন মাস্কের কোম্পানির সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নীতিমালা অনুযায়ী তাদের টার্মিনাল ব্যবহার করে ‘মানহানিকর, প্রতারণামূলক, অশ্লীল বা বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ড’ পরিচালনা নিষিদ্ধ।
চীনের চাপের মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে স্ক্যাম কেন্দ্রে একবার অভিযান চালিয়েছিল থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার। স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত সেই অভিযানের মাধ্যমে পাচারের শিকার কয়েক হাজার মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্যাসিফিক জিনসের বন্ধ সাত কারখানা খুলবে কবে
‘কারখানায় হামলা ও কর্মপরিবেশ না থাকায়’ গত বৃহস্পতিবার বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশে পোশাক রপ্তানি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের সাতটি কারখানা। বন্ধ থাকা এসব কারখানা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় খুলছে। প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বন্ধ সাত থাকা কারখানা হলো প্যাসিফিক জিনস, জিনস ২০০০, ইউনিভার্সেল জিনস, এনএইচটি ফ্যাশন, প্যাসিফিক এক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স। এর মধ্যে প্যাসিফিক জিনসের কারখানা দুটি ও ইউনিভার্সেল জিনসের ইউনিট চারটি।
কারখানা খোলার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে কারখানা পুনরায় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সবাইকে নিজ নিজ বিভাগে উপস্থিত থেকে কর্মস্থলে শৃঙ্খলা, পেশাদারত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় নির্বিঘ্নভাবে পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য আহ্বান করা হলো।’
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর ‘সংঘর্ষে দুই শ্রমিক নিহত’ দাবি করে একটি ভিডিও শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি দেখার পর কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এরপর গত শনিবার বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।
প্যাসিফিক গ্রুপের অন্তত সাতজন শ্রমিক ও আশপাশের কয়েক কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝুট (অবশিষ্ট কাপড়) ব্যবসা নিয়ে ইপিজেড এলাকায় কয়েকটি পক্ষ সক্রিয়। আগে প্যাসিফিকের ঝুট বাইরে বিক্রি হতো, এখন প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব রিসাইক্লিং ইউনিটে তা ব্যবহার করা হয়। ঝুট ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে একটি মহল শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে।
শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংঘর্ষের দিন সেখানে বহিরাগত কয়েকজন প্রবেশ করেছেন। বর্তমানে সংস্কারকাজের জন্য সিইপিজেডের মূল গেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে বহিরাগতরাও ভেতরে প্রবেশ করেছেন।
শ্রমিকদের দাবি, বহিরাগতরা তাঁদের মারধর করেছেন। অন্যদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, বহিরাগতরা শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে কারখানায় হামলা করতে বাধ্য করেছেন।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘সেখানে শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে। শ্রমিক নিহত হয়েছে দাবি করা ভিডিওটি ভুয়া। এটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। কারা এটি করেছে, তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। বাইরের কোনো ইন্ধন আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’