দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল
Published: 23rd, October 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা আরও সময় নিতে চেয়েছেন। এই দুই উপদেষ্টা হলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, মাহফুজ আলম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তিনি সরকারে থাকতে চান। আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন। অবশ্য কোনো বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও দুই উপদেষ্টার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আসিফ মাহমুদ গত ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম গত ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি যে আমি কখন নেমে যাই। মানে আমি কখন নামব, আমি জানি না।’
সূত্র বলছে, ছাত্র প্রতিনিধিদের কেউ না কেউ উপদেষ্টা পরিষদে শেষ পর্যন্ত থাকুক, এটা চান ছাত্র উপদেষ্টারা। তাঁরা মনে করছেন, না থাকলে উপদেষ্টা পরিষদে কেউ কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি।
সরকার গঠনের সময় উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন ছাত্র প্রতিনিধি মো.
মাহফুজ আলম শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন। নিয়োগ পান গত বছরের ২৮ আগস্ট। পরে ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তবে সে সময় তাঁকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করার পর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ শুরুতে ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ এফ হাসান আরিফকে (প্রয়াত) সরিয়ে আসিফ মাহমুদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় গত বছরের নভেম্বরে। এখন তিনি স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমন ধারণা করতে অসুবিধা হয় না যে এই দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা এনসিপির ঘনিষ্ঠ। তাঁরা দলটির পরামর্শকের ভূমিকায় থাকেন। সর্বশেষ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করা নিয়ে সংকটের মধ্যে ১৪ অক্টোবর রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে। বৈঠকে দলটির পক্ষে অন্য নেতাদের পাশাপাশি অংশ নেন একজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাও।
শুধু দুজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সরকার থেকে সরে যেতে বলা তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়টি গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি নেতারা তুলেছেন বলে জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।অবশ্য এনসিপি নেতাদের মত হলো, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় বিভিন্ন দলের কাছ থেকে নাম নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শুধু দুজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সরকার থেকে সরে যেতে বলা তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়টি গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি নেতারা তুলেছেন বলে জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যেসব বক্তব্য আসছে, তা সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদআগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ঠিক করা হতে পারে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য রাজনীতিতে আলোচনা তৈরি করেছে। বিএনপি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দলীয় লোকদের অপসারণ চেয়েছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের কোনো কোনো উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যেসব বক্তব্য আসছে, তা সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। এসব বক্তব্য জনগণের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতে পারে। তাই এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, দুই ছাত্র উপদেষ্টার উচিত পদত্যাগ করা অথবা ঘোষণা দেওয়া যে তাঁরা নির্বাচন করবেন না এবং এনসিপির সঙ্গে তাঁদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোনো সম্পর্ক নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ক র উপদ ষ ট উপদ ষ ট র কখন ন ম সরক র র এনস প র আগস ট ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ি এক কিশোরীকে (১৫) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত আরও একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাটিরাঙ্গার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামির নাম রিমন ত্রিপুরা (২২)।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় একই ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরসহ দুজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আরেকজন এখনো পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই কিশোরী গত সোমবার উপজেলার একটি ইউনিয়নে বেড়াতে এসেছিল। ওই রাতে স্থানীয় একটি মন্দিরে শ্যামাপূজা দেখতে যায় সে। একপর্যায়ে আসামিরা কিশোরীকে আরেকটি মন্দিরে পূজা দেখতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সেখান থেকে ঘটনার এক দিন পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সালিস ডাকা হয়। সালিসে অভিযুক্ত এক কিশোর ও রনি বিকাশ ত্রিপুরা নামের এক তরুণ উপস্থিত হলে স্থানীয় লোকজন আটক করে তাঁদের মাটিরাঙ্গা থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় কিশোরীর বড় বোন বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দুজন গ্রেপ্তার৪ ঘণ্টা আগেজানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আরেকজনকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী কিশোরীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।