শিক্ষায় এত পচন ধরেছে যে শুধু কমিশন করে সমাধান হবে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
Published: 29th, October 2025 GMT
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার এত খারাপ অবস্থা যে কেবল কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দিয়ে একটি শিক্ষা কমিশন বানালেই সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, শিক্ষায় এত পচন ধরেছে যে মৌলিক জায়গায় আগে ঠিকঠাক না করলে শিক্ষা কমিশন করে কোনো লাভ হবে না।
তরুণদের নিয়ে আয়োজিত ‘ইউথ পারসপেকটিভস অন স্যোশাল প্রগ্রেস: গ্রাসরুটস, নেটওয়ার্কস অ্যান্ড লিডারশিপ ভয়েসেস’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলন হয়। এর আয়োজন করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তাঁরা যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকবিহীন ছিল। শিক্ষা কমিশন এগুলো ঠিক করতে পারত না। কয়েকজন মানুষকে ওপরে বসিয়ে শিক্ষা ভালো করতে বলাটা তাদের জন্যও বিব্রতকর হতো। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে তিনটি শিক্ষা কমিশন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই রিপোর্টগুলোতেও অনেক ভালো সুপারিশ আছে। সেগুলো না মেনে নতুন কমিশন কেন এমন প্রশ্নও করেন তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে তরুণদের মধ্যে একধরনের মানসিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জুলাই আন্দোলনে নৃশংস দৃশ্য ও স্বজনদের মৃত্যুকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যাঁরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা দেশের জন্য কিছু করতে চাইছেন। তবে ঠিক কীভাবে করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে প্রবীণদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অস্থিরতার একটি নেতিবাচক দিক হলো দাবি আদায়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ, যা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি খারাপ দিক। তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের আন্দোলনগুলোর সময়কার গাড়ি ভাঙচুরের সংস্কৃতি বিদায় নিয়েছে। তবে অবরোধ থেকে গেছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যায় এখন বয়সের দিক থেকে তরুণদের সংখ্যা অনেক বেশি, যা একধরনের ‘ইয়ুথ পাওয়ার’ বা ‘পপুলেশন’ সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগ ১৫ বছর ধরে শুরু হয়েছে এবং আগামী আরও ১৫ বছর থেকে ২ দশকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে তরুণদের নিজেদের গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘চায়না দুয়ারি’ নিষিদ্ধ করুন
নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে দেশের ঐতিহ্যবাহী মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বিধিমালা আছে। তা সত্ত্বেও বরেন্দ্র অঞ্চলে আজকের বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। সেখানে ‘চায়না দুয়ারি’ নামে পরিচিত ছোট ফাঁসযুক্ত একধরনের জালের অবাধ ও নিয়মবিরোধী ব্যবহার নদ-নদী ও খাল-বিলের বাস্তুসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এ সংকটকে আরও জটিল ও সুদূরপ্রসারী করে তুলেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলেদের পর্যবেক্ষণভিত্তিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই জাল দিয়ে মাছের পোনাসহ সব প্রজাতির দেশীয় মাছ নির্বিচার নিধন হচ্ছে। এটি একধরনের ‘নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ’। এটি শুধু খাদ্যনিরাপত্তা বিপন্ন করছে না, এটি বরং জলজ উদ্ভিদ, পাখি, ব্যাঙ, কচ্ছপসহ সম্পূর্ণ জলজ বাস্তুসংস্থানকে ভয়ংকর হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিধি অনুযায়ী, সাড়ে চার সেন্টিমিটারের কম আয়তনের ফাঁসের জাল নিষিদ্ধ হলেও মাঠপর্যায়ে এই বিধির কোনো কার্যকর প্রয়োগ নেই। এই ব্যবস্থাপনার অভাবই ‘চায়না দুয়ারি’ জালের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।
পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর এই জালের ক্ষতিকর প্রভাব গভীর। ক্ষুদ্র ফাঁসের কারণে পোনা মাছ নিধন হয়। এতে মাছের প্রজনন হ্রাস পায়। দীর্ঘ মেয়াদে নদ-নদীর মাছের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিলুপ্তির পথে চলে। পাশাপাশি জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণী, যেমন ব্যাঙ, কচ্ছপ এবং জলজ পাখির প্রজনন চক্র বিঘ্নিত হয়।
এটি শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ক্ষতি করছে না, বরং স্থানীয় জেলেদের জীবিকা ও খাদ্য সুরক্ষার ওপরও বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি রাজশাহীতে ভুক্তভোগী জেলেরা এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছেন। তাঁরা চায়না দুয়ারি জালের আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করা, জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, জলজ বাস্তুসংস্থান রক্ষায় সমন্বিত নীতি গ্রহণসহ কিছু দাবি তুলেছেন।
তাঁদের দাবিগুলো সংগতিপূর্ণ ও অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ, সমস্যার সমাধান একমাত্র কার্যকর সমাধান নীতিনির্ধারণ ও কঠোর নিয়ন্ত্রণে নিহিত। সে কারণে প্রাথমিকভাবে চায়না দুয়ারি জালের আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কারখানা ও উৎপাদন কেন্দ্রও বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে আইন প্রয়োগ িনশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে।
মনে রাখা দরকার, জলজ বাস্তুসংস্থান রক্ষা শুধু পরিবেশ সংরক্ষণ নয়, এটি জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। চায়না দুয়ারির অবাধ ব্যবহার বন্ধ করা হলে বরেন্দ্র অঞ্চলের নদ-নদী পুনরায় প্রাণবন্ত হবে, দেশীয় মাছের প্রজনন স্বাভাবিক হবে ও স্থানীয় জেলেদের জীবনমান উন্নত হবে। ফলে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সুস্পষ্ট: প্রশাসনিক কার্যকারিতা, আইন প্রয়োগ ও নাগরিক অংশগ্রহণের সমন্বয়।