মিম ছাপিয়ে হঠাৎ কেন রাজপথে নোয়াখালী বিভাগের দাবি
Published: 29th, October 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টিকটকে ‘নোয়াখালী বিভাগ চাই’ মিমের (হাস্যরসাত্মক ছবি, ভিডিও) ছড়াছড়ি। কানাডার টিকটকার বোরজাহ ইয়াংকিও এ নিয়ে টিকটকটি করতে ছাড়েননি। তবে এখন আর হাস্যরসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই নোয়াখালী বিভাগের দাবি। সম্প্রতি প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। মতভিন্নতা থাকলেও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ জেলার সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো এই দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ রাজপথে এই আন্দোলন জোরালো হওয়ার পেছনের কারণ কী? কী বলছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা?
যে কারণে বিভাগ আন্দোলন
সরকারি দপ্তরে পাওয়া নথি অনুযায়ী, নোয়াখালীর সাবেক নাম ছিল ভুলুয়া। ১৮২১ সালে নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে ভুলুয়া নামে একটি স্বতন্ত্র জেলা গঠন করা হয়। পরে ১৮৬৮ সালে ভুলুয়ার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নোয়াখালী।
২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা বিভাগ’ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে ‘মেঘনা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। তবে তখন চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রি-নিকার বৈঠকে। ওই বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা জেলার নামেই নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ এবং নতুন দুটি উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলনের দাবিটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
কুমিল্লা বিভাগের সঙ্গে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রামেও এ নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। পাশাপাশি বিভাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোও। আন্দোলনে শামিল জেলার সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ নানা পেশার মানুষও।
নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি সাইফুর রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা কুমিল্লার নামে বিভাগ করার বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই মূলত বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা প্রথমে নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। এরপর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, নোয়াখালীতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন চত্বর, সোনাইমুড়ী বাইপাস, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, নোয়াখালীর চাটখিল, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে, চৌমুহনী চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। কেবল দেশেই নয়, দেশের বাইরেও এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসেও নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন প্রবাসীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বিভাগের দাবি নিয়ে একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। ওই সব কর্মসূচিতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ ঘোষণা করা হবে।বিভাগের দাবি নতুন নয়
নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি এখনকার নয়। গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে নানা পরিসরে এই দাবি উঠতে থাকে। নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি সাইফুর রহমানের মতে, ১৯৯৪ সালে আইনজীবী আবুল কালামের নেতৃত্বে নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের ১ নভেম্বর মাইজদী কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে ১০ দফা দাবিতে গণ-অনশনসহ একটি বড় কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর ২০১২ সালে ‘নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়। তবে এবারের মতো এমন জোরালো ছিল তখনকার কর্মসূচি।
বিভাগের দাবিতে জেলার মাইজদীর মোহাম্মদীয় সড়ক অবরোধ। ৫ অক্টোবর তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে নিহত সহপাঠীদের ছবি নিয়ে শহরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নিহত ও আহত সহপাঠীদের ছবি নিয়ে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়। বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আক্রান্ত হয়ে যেসব সহপাঠীরা মারা গেছে তারা আর ফিরে আসবেনা, আমরা আর কোনো সহপাঠীকে ডেঙ্গুতে হারাতে চাই না।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের বক্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, একের পর এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এই মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে হবে। নারায়ণগঞ্জ শহরের লার্ভা উৎপাদনের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র জিউস পুকুর।
যা এক সময়ে একটি স্বচ্ছ পানির পুকুর ছিল।এখানে মানুষ গোসল করত, সাঁতার কাটত। অবহেলার কারণে তা একটি নোংরা ডোবাতে পরিণত হয়েছে যা এখন শহরে মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।
এসময় ব্যানার-ফেস্টুন হাতে শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলে “জিউস পুকুর বাঁচাও, জীবন বাঁচাও।”
বক্তারা অভিযোগ করেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী জিউস পুকুরটি অবৈধ দখল ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ জায়গাই এখন ডেঙ্গু বাহক এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে।
শিক্ষকরা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ শহরকে ‘ডেঙ্গু রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখন ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা অবিলম্বে জিউস পুকুর পরিষ্কার ও পুনর্গঠনের দাবি জানান।
কর্মসূচি শেষে এলাকাবাসীর পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল সিটি করপোরেশন প্রশাসকের কাছে পুকুরটি দ্রুত সংস্কার ও পরিষ্কার করার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন।