প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে প্রাণনাশের হুমকি এইচ বি এম ইকবালের
Published: 28th, October 2025 GMT
প্রিমিয়ার ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমডিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল। পাশাপাশি ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও বনানী শাখা এইচ বি এম ইকবালের মালিকানাধীন ইকবাল সেন্টারে। এ নিয়ে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
এদিকে ইকবাল সেন্টার ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ব্যাংকটি। এ জন্য ইতিমধ্যে ভবনের জায়গার খোঁজে আগ্রহপত্র আহ্বান করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির কর্মকর্তারা গুলশান, বনানী এলাকায় প্রধান কার্যালয়ের জন্য জায়গা খুঁজছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বনানীর ইকবাল সেন্টার। এ ভবনে বিভিন্ন সময় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আটকে রাখার খবর ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোসহ একাধিক গণমাধ্যমে।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংক ছেড়ে দেন। এরপর গত আগস্টে ব্যাংকটিতে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংকটিতে এইচ বি ইকবালের বেনামি ঋণ, কেনাকাটা, ভাড়ায় অনিয়মসহ নানা অনিয়ম বের হয়ে আসছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন পর ব্যাংকে ফিরেছি। এরপর এসে নানা সমস্যা পাচ্ছি। কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে, হুমকিও পাচ্ছি। এরপরও কাজ করে যাচ্ছি। খরচ কমাতে প্রধান কার্যালয়সহ একাধিক শাখা সরিয়ে ফেলা হবে।’
জিডিতে যা বলা হয়েছেপ্রিমিয়ার ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) শাহেদ সেকান্দার গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পক্ষে বনানী থানায় জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ৮ মিনিটে ফোন করে প্রথমে ৩১ মিনিট ও একই দিন রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে ফোন করে আরও ২ মিনিট কথা বলেন। এ সময় তিনি ইকবাল সেন্টার ও গুলশানের রেনেসাঁ হোটেলে থাকা গুলশান শাখার ভাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার মধ্যে পরিশোধ করতে বলেন। অন্যথায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান ও এমডি মোহাম্মদ আবু জাফরের সমস্যা হবে এবং এমডি মোহাম্মদ আবু জাফরের বাড়ি ‘ভ্যানিশ’ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে এ কথা জানিয়ে কর্মকর্তাদের নিজ দায়িত্বে অফিসে আসতে বলেন।
এইচ বি এম ইকবাল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকব ল স ন ট র এইচ ব
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুর সাফারি পার্কে দুটি শাবকের জন্ম দিল দুই নীলগাই
মায়ের ছায়ায় ছায়ায় ঘুরে বেড়ায়। বাদামি রঙের রোমশ শরীর। স্বভাবে চনমনে। কিছুটা গরুর বাছুরের মতো দেখতে, তবে মুখাবয়ব লম্বাটে। দুটি নীলগাইয়ের শাবক তারা। শাবক দুটি মায়েদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনজুড়ে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে গাজীপুর সাফারি পার্কের কোর সাফারি এলাকায় বনের ভেতর তাদের দেখা মিলছে। মানুষের ছায়া দেখলেও শাবকদের নিয়ে দৌড়ে বনের অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে মায়েরা।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর প্রথমবার তারা শাবক দুটি দেখতে পায়। এরপর প্রতিদিন খাবার খেতে এলে নির্দিষ্ট স্থানে তাদের দেখা মিলছে। তবে শাবক দুটি স্ত্রী না পুরুষ, তা জানা যায়নি। নিরাপত্তার কারণে কাছাকাছি গিয়ে তা নির্ধারণের চেষ্টাও করেনি কর্তৃপক্ষ।
পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক মো. রাজু আহমেদ জানান, আগেও কয়েকবার সেখানে নীলগাই শাবক জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ দুটি শাবকসহ এখন নীলগাইয়ের পালে সদস্যসংখ্যা ১১। এর মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ৯টি। এর মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী নীলগাই।
আজ সোমবার দুপুরে পর্যটক বাসে চড়ে কোর সাফারির মূল ফটক পেরিয়ে বেশ কিছুটা ভেতরে গিয়ে দূর থেকে দেখা মেলে দুটি পূর্ণবয়স্ক মা নীলগাইয়ের। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের পাশে দেখা যায় শাবক দুটিকে। পর্যটক বাস দেখে অভ্যস্ত হওয়ায় তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মা নীলগাই দুটি বনের পাশের খোলা জায়গায় নেমে আসে। নেমে আসে দুটি শাবকও। মাঝেমধ্যে মায়ের দুধ পান করছিল তারা। আবার হেঁটে বেড়াচ্ছে। কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ দৌড়ে বনের ভেতর শাবক নিয়ে লুকিয়ে পড়ে মা দুটি। আবার বনের অন্য প্রান্তে দেখা যায় তাদের। পুরো সময় ধরে শাবক দুটি মায়ের কাছাকাছি অবস্থান করছিল।
পার্কের বন্য প্রাণী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নীলগাই সাধারণত শাবকের বিষয়ে সতর্ক থাকে। তারা শাবকের নিরাপত্তায় অনেক সময় কিছু না খেয়ে দীর্ঘ সময় তাদের নিরাপত্তা দিতে থাকে। এ জন্য এদের শাবক দেখার সুযোগ কম হয়। পার্কে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শাবকগুলো একটু পরিণত হওয়ায় মায়েরা তাদের নিয়ে বাইরে আসা শুরু করেছে। নীলগাই সাধারণত একসঙ্গে একটি থেকে তিনটি শাবকের জন্ম দেয়। জন্মের পর প্রায় ছয় মাস ধরে বাচ্চাগুলো দুধ পান করে। এরপর তারা মায়েদের সঙ্গে অন্যান্য খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হতে থাকে। অ্যান্টিলোপ প্রজাতির মধ্যে নীলগাই সবচেয়ে বড় প্রাণী। পুরুষ নীলগাইয়ের শিং থাকে। এদের গায়ের রং হয় কিছুটা কালচে। একই প্রজাতির স্ত্রীদের ক্ষেত্রে শিং থাকে না। স্ত্রী নীলগাইয়ের রং হয় কিছুটা বাদামি। এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয় দুই বছরে। পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় নেয় পাঁচ বছর।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একসময় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এই প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে ১৯৪০ সালের পর থেকে এ দেশের বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীটিকে আর দেখা যায়নি। তাই নীলগাইকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে ভারত সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশ অংশে বেশ কিছু নীলগাই স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে। এরপর সেগুলোকে সাফারি পার্কে এনে রাখা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্ধার হওয়া একটি স্ত্রী নীলগাইকে প্রথমে গাজীপুর সাফারি পার্কে আনা হয়। পরে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান থেকে আনা হয় একটি পুরুষ নীলগাই। এই দুটি নীলগাই ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। সাফারি পার্কে আসার পর দুটি নীলগাই থেকে পর্যায়ক্রমে শাবক পাওয়া গেছে।
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুর সাফারি পার্কে নীলগাই নিয়মিত শাবকের জন্ম দিচ্ছে। পার্কের উন্মুক্ত ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ায় বংশবিস্তার ঘটছে।