বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা জানল আজ পরীক্ষা হবে না
Published: 1st, December 2025 GMT
জোসনা রানী রায় আজ সোমবার সকালে মেয়ে পুর্বাশাকে সঙ্গে নিয়ে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পৌঁছান। সময় তখন সকাল ৯টা ৪০ মিনিট। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে তিনি দেখেন শিক্ষকদের কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছে। জোসনার মতো অনেক অভিভাবকই স্কুলের ফটক বন্ধ দেখে সন্তানকে নিয়ে ফিরে যান।
দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকায় জোসনা রানীদের বাড়ি। মেয়ে পুর্বাশা বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। গত ২৪ নভেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষার অংশ হিসেবেই এ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল।
জোসনা রানী বলেন, ‘এখানে এসে শুনলাম পরীক্ষা হবে না। রাতে নাকি মোবাইলে মেসেজ দিয়েছে, আমরা পাইনি।’ পুর্বাশা বলে, ‘রাত জেগে পড়লাম। সকালে এসে এখন শুনলাম পরীক্ষা হবে না। স্যাররা আজকের পরীক্ষাটা নিয়ে তারপর ঘোষণা দিলে ভালো হতো।’
দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চার দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) ব্যানারে দিনাজপুর জিলা স্কুল ও দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে আছেন।
চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—‘সহকারী শিক্ষক’ পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন; সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান; এবং ২০১৫ সালের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২-৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন পুনর্বহাল করা।
পরীক্ষা চলাকালীন আকস্মিক স্থগিত ঘোষণায় অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অভিভাবক আনিসুল জুয়েল বলেন, ‘আমার ছেলে জিলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আজ জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। যদ্দুর জানলাম, শিক্ষকদের এই দাবিগুলো অনেক পুরোনো। তাহলে গত ১৫ বছর আন্দোলনে যান নাই কেন? আর যাই বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা উচিত হয়নি।’
অন্য অভিভাবক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে বালিকা স্কুলের শিক্ষার্থী। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ পেলাম পরীক্ষা হবে না। প্রথমে ভাবলাম ভুয়া মেসেজ। পরে আবার এক শিক্ষককে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। সকালে শুনলাম অনেকের কাছে মেসেজ পৌঁছেনি। অনেকে নিশ্চিত হতে সকালে স্কুলে চলে আসছেন। মেনে নিতে হবে, কিছু করার নাই। তাদেরও নিশ্চয়ই যৌক্তিক আন্দোলন। তা না হলে শিক্ষকেরা এমন হার্ড লাইনে যাবেন কেন?’
আন্দোলনের বিষয়ে দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মমতাজউদ্দিন বলেন, ‘২৬ বছর ধরে চাকরি করছি। একটা টাইমস্কেল পাইনি। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল না করলে শিক্ষকদের দোষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের কথা কেউ ভাবে না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। মামলা হয়েছে। মামলার রায়ও আমাদের পক্ষে। কিন্তু কার্যকর হয় না। আজকে শিক্ষকেরা কর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।’
জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। আজকে এ ধরনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছে, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় আমরা খুঁজে পাইনি। আগের রাতেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মোবাইলে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শিক্ষকদের সংগঠন থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র পর ক ষ সরক র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৫ টাকায় সিরাজগঞ্জে মেলে শীতের কম্বল
দিনের আলো ফুটতেই সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের কম্বলপল্লীতে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই উপজেলার শিমুলদাইড় বাজারে ৭৫ টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় মেলে বিভিন্ন ধরন ও সাইজের শীতের কম্বল। প্রায় তিন দশক ধরে উপজেলার ৪৫টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ এই কম্বল তৈরির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিলে শিল্পটির বিকাশ আরো দ্রুত সম্ভব এমনটি আশা করছেন তারা।
চলতি মৌসুমে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এখানকার কারিগরদের। ফলে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এরই মধ্যে ১৫-২০ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আরো পড়ুন:
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে
চায়ের রাজ্যে শীতের দাপট
কম্বলের কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত কারিগররা
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে ছোট পরিসরে শুরু হওয়া এই শিল্প ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল অফলাইনে। ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনেও বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দেশজুড়ে এই ব্যবসা বিস্তৃত। শীতের শুরুতে গত বছরের তুলনায় এবার আরো প্রাণ ফিরে পেয়েছে কম্বলপল্লী। উপজেলার শিমুলদাইড়, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, সাতকয়া, গাড়াবেড়, চকপাড়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়াসহ প্রায় ৪৫টি গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষের হাতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাজারো কম্বল।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, “এই বাজারে কম্বলের শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান থেকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় কম্বল সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দ করে দরদাম ঠিক করে টাকা পাঠালে এখান থেকে ট্রাকে কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিনই ট্রাকে করে কম্বল যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।”
দিনাজপুর থেকে কম্বল কিনতে আসা ফরিদুল করিম বলেন, “শীত এলেই গরিব মানুষের কাছে এখানকার ঝুট কাপড়ের কম্বলের কদর বেড়ে যায়। দামে কম, টেকসই আর ভালো মান হওয়ায় এ কম্বলের চাহিদা বেশি। ঝুট কাপড়ের পাশাপাশি নতুন কাপড়ের কম্বলও তৈরি করা হচ্ছে। দেখতে সুন্দর ও নাগালের মধ্যে দাম থাকায় অনেকেই এখান থেকে কম্বল কিনছেন।”
ছালাভরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, “২০২৩ সাল থেকে কম্বল বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম খুলেছি। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকার কম্বল বিক্রির অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এ আয়ে ৩৫-৪০ জন শ্রমিকের সংসার চলছে। এবার অনলাইনের মাধ্যমেই ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা করছি।”
শিমুলদাইড় কম্বল বাজার সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন বলেন, “বর্তমানে ৩০৭ জন সদস্য রয়েছেন। প্রত্যেকেই ছোট-বড় কম্বল ব্যবসায়ী। এ মৌসুমে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরি করে বিক্রি করা হবে। এতে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।”
এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাকি কম্বল ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে বিক্রি হবে। শীতের তীব্রতা বাড়লে কম্বল বিক্রি হতে সময় কম লাগবে।”
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কম্বল তৈরির কাজ করে নারী-পুরুষরা অনেকটাই সচ্ছল হয়েছেন। আমরা কম্বল ব্যবসায়ীদের পাশে সব সময় আছি।”
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রির প্রেসিন্ডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, “কম্বলপল্লীতে ব্যাংকিং সেবার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা কম্বলপল্লীতে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বল্প সুদে যদি ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া যায়, তাহলে এই শিল্পটি আরো উন্নত হবে।”
ঢাকা/মাসুদ