৭৫ টাকায় সিরাজগঞ্জে মেলে শীতের কম্বল
Published: 1st, December 2025 GMT
দিনের আলো ফুটতেই সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের কম্বলপল্লীতে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই উপজেলার শিমুলদাইড় বাজারে ৭৫ টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় মেলে বিভিন্ন ধরন ও সাইজের শীতের কম্বল। প্রায় তিন দশক ধরে উপজেলার ৪৫টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ এই কম্বল তৈরির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিলে শিল্পটির বিকাশ আরো দ্রুত সম্ভব এমনটি আশা করছেন তারা।
চলতি মৌসুমে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এখানকার কারিগরদের। ফলে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এরই মধ্যে ১৫-২০ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আরো পড়ুন:
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে
চায়ের রাজ্যে শীতের দাপট
কম্বলের কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত কারিগররা
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে ছোট পরিসরে শুরু হওয়া এই শিল্প ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল অফলাইনে। ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনেও বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দেশজুড়ে এই ব্যবসা বিস্তৃত। শীতের শুরুতে গত বছরের তুলনায় এবার আরো প্রাণ ফিরে পেয়েছে কম্বলপল্লী। উপজেলার শিমুলদাইড়, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, সাতকয়া, গাড়াবেড়, চকপাড়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়াসহ প্রায় ৪৫টি গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষের হাতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাজারো কম্বল।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, “এই বাজারে কম্বলের শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান থেকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় কম্বল সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দ করে দরদাম ঠিক করে টাকা পাঠালে এখান থেকে ট্রাকে কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিনই ট্রাকে করে কম্বল যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।”
দিনাজপুর থেকে কম্বল কিনতে আসা ফরিদুল করিম বলেন, “শীত এলেই গরিব মানুষের কাছে এখানকার ঝুট কাপড়ের কম্বলের কদর বেড়ে যায়। দামে কম, টেকসই আর ভালো মান হওয়ায় এ কম্বলের চাহিদা বেশি। ঝুট কাপড়ের পাশাপাশি নতুন কাপড়ের কম্বলও তৈরি করা হচ্ছে। দেখতে সুন্দর ও নাগালের মধ্যে দাম থাকায় অনেকেই এখান থেকে কম্বল কিনছেন।”
ছালাভরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, “২০২৩ সাল থেকে কম্বল বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম খুলেছি। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকার কম্বল বিক্রির অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এ আয়ে ৩৫-৪০ জন শ্রমিকের সংসার চলছে। এবার অনলাইনের মাধ্যমেই ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা করছি।”
শিমুলদাইড় কম্বল বাজার সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন বলেন, “বর্তমানে ৩০৭ জন সদস্য রয়েছেন। প্রত্যেকেই ছোট-বড় কম্বল ব্যবসায়ী। এ মৌসুমে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরি করে বিক্রি করা হবে। এতে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।”
এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাকি কম্বল ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে বিক্রি হবে। শীতের তীব্রতা বাড়লে কম্বল বিক্রি হতে সময় কম লাগবে।”
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কম্বল তৈরির কাজ করে নারী-পুরুষরা অনেকটাই সচ্ছল হয়েছেন। আমরা কম্বল ব্যবসায়ীদের পাশে সব সময় আছি।”
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রির প্রেসিন্ডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, “কম্বলপল্লীতে ব্যাংকিং সেবার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা কম্বলপল্লীতে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বল্প সুদে যদি ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া যায়, তাহলে এই শিল্পটি আরো উন্নত হবে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৭৫ টাকায় সিরাজগঞ্জে মেলে শীতের কম্বল
দিনের আলো ফুটতেই সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের কম্বলপল্লীতে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই উপজেলার শিমুলদাইড় বাজারে ৭৫ টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় মেলে বিভিন্ন ধরন ও সাইজের শীতের কম্বল। প্রায় তিন দশক ধরে উপজেলার ৪৫টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ এই কম্বল তৈরির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিলে শিল্পটির বিকাশ আরো দ্রুত সম্ভব এমনটি আশা করছেন তারা।
চলতি মৌসুমে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এখানকার কারিগরদের। ফলে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এরই মধ্যে ১৫-২০ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আরো পড়ুন:
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে
চায়ের রাজ্যে শীতের দাপট
কম্বলের কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত কারিগররা
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে ছোট পরিসরে শুরু হওয়া এই শিল্প ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল অফলাইনে। ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনেও বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দেশজুড়ে এই ব্যবসা বিস্তৃত। শীতের শুরুতে গত বছরের তুলনায় এবার আরো প্রাণ ফিরে পেয়েছে কম্বলপল্লী। উপজেলার শিমুলদাইড়, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, সাতকয়া, গাড়াবেড়, চকপাড়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়াসহ প্রায় ৪৫টি গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষের হাতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাজারো কম্বল।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, “এই বাজারে কম্বলের শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান থেকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় কম্বল সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দ করে দরদাম ঠিক করে টাকা পাঠালে এখান থেকে ট্রাকে কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিনই ট্রাকে করে কম্বল যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।”
দিনাজপুর থেকে কম্বল কিনতে আসা ফরিদুল করিম বলেন, “শীত এলেই গরিব মানুষের কাছে এখানকার ঝুট কাপড়ের কম্বলের কদর বেড়ে যায়। দামে কম, টেকসই আর ভালো মান হওয়ায় এ কম্বলের চাহিদা বেশি। ঝুট কাপড়ের পাশাপাশি নতুন কাপড়ের কম্বলও তৈরি করা হচ্ছে। দেখতে সুন্দর ও নাগালের মধ্যে দাম থাকায় অনেকেই এখান থেকে কম্বল কিনছেন।”
ছালাভরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, “২০২৩ সাল থেকে কম্বল বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম খুলেছি। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকার কম্বল বিক্রির অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এ আয়ে ৩৫-৪০ জন শ্রমিকের সংসার চলছে। এবার অনলাইনের মাধ্যমেই ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা করছি।”
শিমুলদাইড় কম্বল বাজার সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন বলেন, “বর্তমানে ৩০৭ জন সদস্য রয়েছেন। প্রত্যেকেই ছোট-বড় কম্বল ব্যবসায়ী। এ মৌসুমে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরি করে বিক্রি করা হবে। এতে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।”
এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাকি কম্বল ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে বিক্রি হবে। শীতের তীব্রতা বাড়লে কম্বল বিক্রি হতে সময় কম লাগবে।”
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কম্বল তৈরির কাজ করে নারী-পুরুষরা অনেকটাই সচ্ছল হয়েছেন। আমরা কম্বল ব্যবসায়ীদের পাশে সব সময় আছি।”
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রির প্রেসিন্ডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, “কম্বলপল্লীতে ব্যাংকিং সেবার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা কম্বলপল্লীতে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বল্প সুদে যদি ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া যায়, তাহলে এই শিল্পটি আরো উন্নত হবে।”
ঢাকা/মাসুদ