নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় একটি মালবাহী নৌকার ইঞ্জিনে পরনের লুঙ্গি পেঁচিয়ে হানিফ মিয়া (৩৬) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আজ বুধবার সকালে উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের রসুলপুর ফেরিঘাটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

হানিফ মিয়া পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের আবদুর সোবহানের ছেলে।

নৌ পুলিশ ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, মাসখানেক আগে কিশোরগঞ্জের ইটনা এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি ছয় মাসের জন্য ভাড়া নেন হানিফ মিয়া। এরপর তিনি ওই নৌকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহন করতেন।

আজ সকালে রসুলপুর ফেরিঘাটে নৌকাটি নোঙর করে কিছুক্ষণ বিরতি নেন হানিফ ও তাঁর এক সহযোগী। তাঁরা সকাল সাতটার দিকে রসুলপুর ফেরিঘাট থেকে নৌকায় বাঁশবোঝাই করে ধনু নদ দিয়ে তাহিরপুরের দিকে রওনা হন। নৌকাটি চালু করা সময় হানিফ ইঞ্জিনের কাছাকাছি ছিলেন। একপর্যায়ে ইঞ্জিনের পাখার সঙ্গে তাঁর পরনের লুঙ্গিটি প্যাঁচ লেগে যায়। এতে আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে খালিয়াজুরির লেপসিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

লেপসিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জগৎজ্যোতি চৌধুরী বলেন, অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করেছেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি গ্রহণের আবেদন করেছেন স্বজনেরা। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানের ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ‘মনসুন প্রোটেস্ট আর্কাইভস’–এর যাত্রা শুরু

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও তথ্য সংরক্ষণের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘মনসুন প্রোটেস্ট আর্কাইভস’–এর যাত্রা শুরু হয়েছে।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়।
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট, ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ও নেত্র নিউজ—তিন প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ প্ল্যাটফর্ম।

আর্কাইভে ৯৩৩ জন ভুক্তভোগীর যাচাইকৃত তথ্য এবং ৮ হাজারের বেশি অডিও, ভিডিও, ঘটনার স্থান, সময়, ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ, আহত ব্যক্তিদের অবস্থা, এমনকি ঘটনায় জড়িত বাহিনীর তথ্যও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তথ্যগুলো একটি মানচিত্রের ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্ল্যাটফর্মের বিস্তারিত তুলে ধরেন টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ শাখার প্রধান ফওজিয়া আফরোজ। তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ অনলাইনে এলেও কিছুদিন পর আবার হারিয়ে যায়। তাই আমরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ভিডিও, তথ্যপ্রমাণ একটা প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ করারর উদ্যোগ নিয়েছি।’

গত জুলাইয়ের শুরু থেকে এসব প্রমাণ সংরক্ষণ করা শুরু হয় জানিয়ে ফওজিয়া আফরোজ বলেন, ‘এটি শুধু একটি সংগ্রহশালা নয়; এটি বিচারপ্রক্রিয়া, জবাবদিহিতা ও সত্য প্রতিষ্ঠায়ও সহায়তা করবে।’

ফওজিয়া আফরোজ বলেন, এই প্ল্যাটফর্মে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে যাচাই–বাছাই করা হয়েছে। এগুলোর পেছনের গল্প ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিটি ঘটনা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এ সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা করা হয়। সেখানে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় নিহত হৃদয়ের বোন জেসমিন আক্তার, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান হুমা খান, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান অংশ নেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন ফওজিয়া আফরোজ।

এটি শুধু একটি সংগ্রহশালা নয়; এটি বিচারপ্রক্রিয়া, জবাবদিহিতা ও সত্য প্রতিষ্ঠায়ও সহায়তা করবে।ফওজিয়া আফরোজ, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ শাখাপ্রধান

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ প্রতিবেদনের বিষয়ে আলোচনা করেন হুমা খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সত্যকে লিপিবদ্ধ করা এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য ছিল।

হুমা খান বলেন, ‘প্রতিবেদনের অনেক সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আবার কিছু এখনো হয়নি। আমরা র‌্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, সেটি হয়নি। কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা ফৌজদারি আদালত ব্যবস্থায় দেখেছি, যা আগেই শুরু হয়েছে। গুম-সংক্রান্ত আইনও এসেছে, যা আমরা সুপারিশ করেছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি এত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, আমরা আশা করিনি। তাই অগ্রগতির কিছু অংশ প্রশংসনীয়, কিছু অংশ ধীরগতির। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আসন্ন নির্বাচনও এর একটি কারণ। তবে নির্বাচনের পর এ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।’

আলোচনায় ডেভিড বার্গম্যান অভ্যুত্থান–সংশ্লিষ্ট ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা এবং এ কাজে ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ কীভাবে সহায়তা করছে, তা তুলে ধরেন।

বার্গম্যান বলেন, বাংলাদেশে দুই ধরনের বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। প্রথমটি হলো, দণ্ডবিধির আওতায় খুনের মামলা। খুনের মামলায় প্রমাণ ছাড়াই অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, যদিও কিছু ব্যক্তি এসব অপরাধে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয়টি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা। এ মামলায়ও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বিচারকেরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে অভিজ্ঞ নন। আবার অনেক অভিযুক্ত দেশেই নেই। ফলে তাঁদের পক্ষে আইনজীবীর কার্যকারিতা সীমিত রয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে। ডিজিটাল প্রমাণ, জব্দ করা যোগাযোগের রেকর্ড ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা—এসবের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ তৈরি হচ্ছে।

এদিকে হৃদয়ের বোন জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই ৫ আগস্ট শহীদ হন। তার লাশ আমরা খুঁজে পাইনি। শুনেছি, পুলিশ নাকি লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দিয়েছে। লাশ না পাওয়ায় সে শহীদের মর্যাদা পায়নি। গুলি করার সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও লাশ না পাওয়ায় তাঁকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি।’

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্টের প্রধান ও মানবাধিকার আইনজীবী ইয়াসমিন সুকা, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক শাবনাজ রশিদ এবং নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ