সিট কয়টি পাবে, সে হিসাব করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এনসিপি: নাহিদ
Published: 10th, December 2025 GMT
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থী ঘোষণা শুরু করলেও ভোটে জেতাই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনে আসন জেতাই যদি তাঁদের লক্ষ্য হতো, তাহলে তাঁরা কোনো না কোনো জোটে ভিড়তেন।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলে অস্থায়ী কার্যালয়ে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এর ঠিক আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে এনসিপি।
অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা এনসিপি গঠন করে শাপলা কলি প্রতীকে সেই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। নাহিদ ইসলাম প্রার্থী হতে যাচ্ছেন ঢাকা–১১ আসনে।
‘বিভিন্ন জায়গায় মাফিয়াদের নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কি না, এর ওপর নির্ভর করবে কমিশন কতটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় কাজ করছে।’নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে এখনো পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখছি যে আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে এবং নির্বাচনী বিধিবিধান লঙ্ঘন করেই নির্বাচনী প্রচারণার কাজ পোস্টারিং বা টাকা খরচের যে বিষয়গুলো, এগুলো কিন্তু আসতেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে বলে আসছি যে প্রার্থীদের যেই খরচের হিসাব, সেটা যাতে যথাযথভাবে নির্বাচন কমিশন যাচাই–বাছাই করে আদায় করে নেয়। আমরা দেখছি বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রের মহড়া হচ্ছে। বিএনপি–জামায়াত উভয় দল থেকে আমরা এই ধরনের সংস্কৃতি দেখছি।’
বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় মাফিয়াদের নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কি না, এর ওপর নির্ভর করবে কমিশন কতটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় কাজ করছে।’
বিপরীতে নিজেদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে আমাদের এই যে মনোনয়ন তালিকাটা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক…সেখানে নারী-পুরুষ, সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সবকিছুর সমন্বয় আমরা করব।’
এনসিপি আজ ১২৫ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। মনোনীত কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রার্থিতা বাতিল হবে বলে জানান নাহিদ।
আগামী নির্বাচনের তাৎপর্য তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা গণভোট, এটা যাতে আমরা কেউ ভুলে না যাই। বলা হচ্ছে, প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন, নাকি মার্কা দেখে ভোট দেবেন। কিন্তু ভোটটা যে গণভোট, ভোটের অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে হ্যাঁ অথবা না, এই কথাটাই বলার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি। আপনারা অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে আমরা কয়টা সিট পাব বা আমরা কয়টা সিট প্রত্যাশা করি। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না, এটা খুবই পরিষ্কার। সিট কয়টা পাব কি পাব না, সেটা বিবেচনায় রেখেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না। সিট নিশ্চিত করতে হলে আমরা কোনো না কোনো জোটের সঙ্গে চলে যাইতাম।’
আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না। সিট কয়টা পাব কি পাব না, সেটা বিবেচনায় রেখেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না। সিট নিশ্চিত করতে হলে আমরা কোনো না কোনো জোটের সঙ্গে চলে যাইতাম।নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, এনসিপিরাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি গঠনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে অভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, যদি গণঅভ্যুত্থানের পরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাজনীতি পুনর্গঠিত করত, নিজেদের দলের ভেতরে সংস্কার আনত, নিজেদের নীতি–আদর্শকে আরও ঠিক করত, তাহলে এনসিপির জন্মের প্রয়োজন ছিল না। এনসিপি সাত মাস অপেক্ষা করেছে, যাতে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো একটা সমঝোতায় এসে আমাদের তরুণ প্রজন্মের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করে। যেহেতু তারা সেটা করে নাই। যেহেতু তারা নিজেদের দলাদলি–অন্তর্দ্বন্দ্বে ব্যস্ত ছিল, নিজেদের দলীয় এজেন্ডাকে প্রধান করে তুলেছে, তার ফলেই কিন্তু এনসিপির জন্ম হয়েছে।’
আরও পড়ুন১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা এনসিপির: কে কোথায় মনোনয়ন পেলেন২ ঘণ্টা আগেঅন্য দলগুলোর সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সংস্কার ছিল গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা। দ্বিতীয় এজেন্ডা ছিল বিচার। এই যে সামনে একটা গণভোট হবে এবং গণভোটে যে সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে, এই আলাপটাই কোনো রাজনৈতিক দল করছে না। সবাই তার নিজের দলের যার যার যে এজেন্ডা, সেই এজেন্ডাকে নিয়ে ক্যাম্পেইন করতেছে বা সেটাকে তুলে ধরতেছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল প রক র য় এনস প র গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের উন্নতির সম্ভাবনা নিয়ে হতাশ ৪৬%, আশাবাদী ৩৫%
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় অর্ধেক মানুষ হতাশ। এক-তৃতীয়াংশের বেশি কিছু মানুষ দেশ নিয়ে আশাবাদী। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কর্মসংস্থান বা আয়ের সুযোগ এখন অনুকূলে নয়। বর্তমান অবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যের উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন ৭৭ শতাংশ মানুষ।
দেশ নিয়ে আশা-হতাশা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এবং দেশ ছাড়ার বিষয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’-এ। প্রথম আলোর জন্য জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিডেট।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির সম্ভাবনা নিয়ে কতটা আশাবাদী? উত্তরে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা হতাশার কথা বলেছেন। একই প্রশ্নে খুবই হতাশ ১১ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা। ফলে হতাশ ও খুবই হতাশ উত্তরদাতার হার দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে কিছুটা আশা আছে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার। অত্যন্ত আশাবাদী ৩ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। দুয়ে মিলে আশাবাদী উত্তরদাতার হার দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ। হতাশ নন, আবার আশাবাদীও নন ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপ বলছে, দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির বিষয়ে নারী-পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। নারীর মধ্যে দেশ নিয়ে আশাবাদ বেশি। একইভাবে বয়স্কদের চেয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেশ নিয়ে আশাবাদ কিঞ্চিৎ বেশি দেখা গেছে।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা জরিপে দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর।
অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, দেশে আয়-উপার্জন-ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ভালো নয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা বলছেন, পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূলে নয়। ২০ শতাংশের মতো উত্তরদাতা মনে করেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে।জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।
উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কর্মসংস্থান ও আয়-উপার্জনের সুযোগ পাওয়ার জন্য কতটা অনুকূল। পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ উত্তর দিয়েছেন। অনুকূল বলেছেন মাত্র ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। বাকিরা বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন।
প্রথম আলো গ্রাফিকস