উপদেষ্টা মাহফুজ, আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করছেন আজ
Published: 10th, December 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্র প্রতিনিধি আজ বুধবার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এই দুই উপদেষ্টা হলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরে মিলছে না ইলিশ, আকারেও ছোট, কেন এমন হচ্ছে
বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। গত বছরের এই সময় জেলেদের জালে যেসব ইলিশ ধরা পড়েছিল, তার আকার ছিল গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম। ২ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও ধরা পড়েছিল তখন। অথচ এবার ইলিশ ধরা পড়ছে না। কিছু ট্রলার ইলিশ পেলেও আকারে ছোট। ওজন বড়জোর ৩০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম। ট্রলারমালিক ও জেলেরা জানান, গত ১০ বছরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। দূষণ, বৃষ্টি কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ একাধিক কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে গবেষকদের অনুমান, তবে এ নিয়ে বিশদ গবেষণা এখনো হয়নি।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মাছ ধরার ছোট-বড় ট্রলার আছে প্রায় ছয় হাজার। এসব ট্রলারে কর্মরত জেলে ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছয় থেকে সাত মাস ধরে নানা কারণে জেলেরা সাগরে গিয়েও ইলিশের দেখা পাননি। প্রতি মাসে কয়েকবার করে লঘুচাপ-নিম্নচাপ লেগে ছিল। লোকসান গুনতে গুনতে দেউলিয়া শত শত ট্রলারমালিক। জেলে পরিবারগুলো অর্থসংকটে পড়েছে। এখন কিছু ট্রলারের জালে ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে, তা–ও পরিমাণে কম। যে কারণে প্রতিটি ট্রলারের লোকসান হচ্ছে। এমন অবস্থা আর কত দিন চলবে, এর সঠিক উত্তর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এখন জেলার টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার অন্তত ৫০টি পয়েন্টে ছোট আকৃতির ৮ থেকে ১০ মেট্রিক টন করে ইলিশ ধরা পড়ছে, যা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ছিল দৈনিক গড়ে ২০ মেট্রিক টন।
গত অর্থবছরে কক্সবাজার জেলায় ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার টন। সাগরে ছোট ইলিশ ধরা পড়ার কারণ কী, তা জানতে চাইলে কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের সব উপকূলীয় জেলায় কিছুদিন ধরে ছোট আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ছে, যা অতীতে দেখা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে কি না, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
মৎস্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে ইলিশের আকার ছোট হচ্ছে। প্রথমত, নদী ও সাগরের দূষণ এবং অক্সিজেনের অভাব। দ্বিতীয়ত, বৃষ্টি কম হওয়া।ছোট ইলিশের চাহিদাও অনেক
গতকাল মঙ্গলবার সকালে শহরের নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরেছে ১৫ থেকে ২০টি ট্রলার। এর মধ্যে ৭টি ট্রলারের জালে ধরা পড়েছে ২০০ থেকে ৭০০টি ইলিশ। তবে প্রতিটি ট্রলারে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ রূপচাঁদা, পোপা, লইট্যা, মাইট্যা, সুরমা ও কামিলা দেখা গেছে, তবে মানুষের নজর ইলিশের দিকে। ইলিশ কেনার জন্য কয়েকজন ব্যবসায়ী ট্রলারে ভিড় জমান।
এফবি কাউসার নামের একটি ট্রলারে জালে ধরা পড়েছে ৬০০টি ইলিশ। ওজন ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। ট্রলারের জেলেরা ইলিশগুলো বিক্রি করে পেয়েছেন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ট্রলারের জেলে আবুল কালাম (৫০) বলেন, ইলিশ ধরতে ট্রলার নিয়ে তাঁরা ১৯ জেলেরা ৭ দিন আগে সাগরে নেমেছিলেন। ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে সাগরে গিয়ে ৫ দিন জাল ফেলেন। কিন্তু ইলিশ ধরা পড়েছে ৬০০টি, তা–ও অনেক ছোট। সাগরের অন্তত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক দফায় জাল ফেলেও তাঁরা ইলিশের নাগাল পাননি। জেলেরা জানান, গত বছর এই সময়ে একই দূরত্বের সাগরে জাল ফেলে ট্রলারটি ২০ হাজারের বেশি ইলিশ ধরেছিলেন। ওজন ছিল ৮০০ গ্রামের ওপরে। এখন কেন ইলিশের আকার ছোট হচ্ছে, তার কারণ তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না।
দেখা গেছে, ফিশারি ঘাটে বিক্রির জন্য আনা হয় কয়েক হাজার ইলিশ। ইলিশগুলো মেঝেতে বিছিয়ে রাখা হয়। ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে ইলিশের দরদামে ব্যস্ত। ৯০ শতাংশ ইলিশের ওজন ৩৫০ থেকে ৪৫০ গ্রাম। পাইকারিতে এই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। শহরের বাহারছড়া বাজার, কানাইয়ার বাজার ও বড় বাজারে এসব ইলিশ খুচরায় কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ফিশারি ঘাট থেকে ইলিশ কিনে ট্রাক বোঝাই করে ঢাকায় পাঠাচ্ছিলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাঁদের একজন কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, গভীর সাগর থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার ফিশারি ঘাটে ভিড়ছে। তার মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি ট্রলারে ২০০ থেকে ৬০০ ইলিশ ধরা পড়েছে। অবশিষ্ট ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়েনি। বাজারে ইলিশের চাহিদা বেশি, তাই ছোট ইলিশ হলেও দাম বেশি। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২টি ট্রাকে কয়েকজন ব্যবসায়ী ৩ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকায় সরবরাহ করেছেন। গত বছর এই সময়ে দৈনিক ঢাকাতে ইলিশ সরবরাহ হয়েছিল ৩০ মেট্রিক টনের বেশি।
‘গত বছর এই সময়ে সাগরে জাল ফেলে পাওয়া গেছে ২০ হাজারের বেশি ইলিশ। ওজন ছিল ৮০০ গ্রামের ওপর। এখন কেন ইলিশের আকার ছোট হচ্ছে, তার কারণ জানা নেই’আবুল কালাম, ট্রলারের জেলে।ইলিশ কেন ছোট হচ্ছে
ফিশারি ঘাটের কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ও পাইকারি মৎস্যবাজারের ব্যবস্থাপক আশীষ কুমার বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে এই কেন্দ্রে দৈনিক তিন মেট্রিক টন করে ইলিশের বেচাবিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রি হওয়া ইলিশের আকার (ওজন) অনেক ছোট, অধিকাংশের ওজন ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। ভরা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে কেন ইলিশ ধরা পড়ছে না এবং ইলিশের আকার কেন এত ছোট, তা নিয়ে গবেষণা দরকার।
তবে মৎস্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে ইলিশের আকার কমছে। প্রথমত, নদী ও সাগরের দূষণ এবং অক্সিজেনের অভাব। দ্বিতীয়ত, বৃষ্টি কম হওয়া।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ৯ দিনে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯৪ দশমিক ১১ মেট্রিক টন। অক্টোবরে ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ২১০ মেট্রিক টন। গত বছর অক্টোবরে ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৩০৫ মেট্রিক টন। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের অক্টোবরে ইলিশ বিক্রি কমেছে ৯৫ মেট্রিক টন।
প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই গত ২৫ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরতে সাগরে নামেন জেলেরা। প্রথম দিকে কমবেশি ট্রলারের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও এখন কয়েক দিন ধরে অল্প পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা–ও আকারে ছোট। দূষণ, বৃষ্টি না হওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে বলে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে। এ নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।