বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন থাকছে
Published: 10th, December 2025 GMT
বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ও আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার সর্বসম্মতিতে এ আদেশ দেন।
এর আগে বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করা-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মো.
গত ১২ নভেম্বর আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ১৬ নভেম্বর শুনানির জন্য ধার্য করেন। পাশাপাশি এ সময়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। এদিকে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন ও গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ পৃথক লিভ টু আপিল করেন। গাজীপুর-৬ আসন থেকে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজুর রহমান এর আগে আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক লিভ টু আপিল ও আবেদনগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে।
গতকাল মঙ্গলবার ও আজ শুনানি হয়। বিরতির পর আজ ১২টা ২৫ মিনিটে আদেশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে ইতিপূর্বে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন কমিশনের আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী।
সরকার জাবেদ আহমেদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল, আর সালাহ উদ্দিন সরকারের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানি করেন।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। হাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গড়ে তোলে, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে ১০ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল। একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত। বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা উপজেলা নিয়ে গঠিত। বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা উপজেলা নিয়ে গঠিত।
হাইকোর্টের রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই উল্লেখিত গেজেট অনুসারে আগের মতো সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ৯৮ (বাগেরহাট-৪) পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনে সংযুক্ত গত ৪ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশনের (ইসির প্রজ্ঞাপন) সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) গঠন সম্পর্কিত অংশটুকু অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হলো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব গ জ প র ৬ আসন ব গ রহ ট ১ আপ ল ব ভ গ ন ন র জন আসন থ ক আসন ন উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন, তদন্তে ডিবি
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
‘রোজা ও পূজাকে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ বলে মন্তব্য করায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলার আবেদন করেন আইনজীবী রিদওয়ান হোসেন রবিন। আজ রোববার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে এ আবেদন করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আজ আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন জারি হতে পারে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্প্রতি ‘ডিএসএন’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে শিশির মনির মন্তব্য করেন, ‘রোজা এবং পূজা একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ।’ তিনি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের মুসলিম জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে এ বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীরা নিরাকার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখেন, যার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেব-দেবীর আকৃতি দিয়ে পূজা করেন। রোজাকে পূজার সঙ্গে তুলনা করা বা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের উক্তি সরাসরি ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাতের শামিল এবং তা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস।