মহান মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত দিবস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাত  থেকে ১০ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন মাদারীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় পুরো জেলা, বিজয়ের পতাকা উড়ানো হয় মাদারীপুরের আকাশে।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী মাদারীপুর ত্যাগের প্রস্তুতি নেয়। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া আসে, এ আর হাওলাদার জুট মিল ক্যাম্পে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা পালানোর পরিকল্পনা করছে।

আরো পড়ুন:

‘বাঙ্কারে গ্রেনেড থ্রো করাতে কাজ হয়েছিল’

শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গোপন নথি

খলিল বাহিনীর প্রধান খলিল খান দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর রাত থেকেই সমাদ্দার ব্রিজ এলাকা ঘিরে ফেলেন এবং সবদিক থেকে পাকিস্তানিদের পলানোর পথ বন্ধ করে দেন। পরদিন সকালেই শুরু হয় তীব্র যুদ্ধ। গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের গর্জনে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। টানা ৩৬ ঘণ্টার এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা অপ্রতিরোধ্য সাহস ও কৌশল প্রদর্শন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী কাজী বলেন, “আমাদের সঙ্গে টানা ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পাক বাহিনী ছিল শক্তিশালী, কিন্তু আমরা পিটু হটিনি। এক পর্যায়ে আমাদের সর্বকনিষ্ঠ সাথী সরোয়ার হোসেন বাচ্চু শহীদ হন। তার মৃত্যু আমাদের আরো কঠোর করে তোলে।”

তিনি বলেন, ‍“মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শত্রুপক্ষ। গোলাবারুদ সংকট ও চারদিক থেকে চাপের মুখে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। বিজয়ের পতাকা হাতে উল্লাসে ভাসে মাদারীপুর।” এই যুদ্ধে পাক সেনাদের অন্তত ২০ জন নিহত হন। 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুল হক বলেন, “১০ ডিসেম্বর আমাদের জেলা শত্রুমুক্ত হয়। এটি আমাদের কাছে গর্বের দিন। কিন্তু এই বিজয়ের পেছনে রয়েছে বহু শহীদের আত্মত্যাগ। তাদের প্রতি আমাদের চিরকৃতজ্ঞতা।” 

শত্রুমুক্ত দিবস উপলক্ষে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা, তাদের পরিবারবর্গ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ। সভায় বক্তারা ১০ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানো নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মাদারীপুরের শত্রুমুক্তির ইতিহাস আমাদের গৌরবময় অধ্যায়। এ দিনের স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে প্রশাসন নিয়মিত উদ্যোগ নেবে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শত র ম ক ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ঝালকাঠি পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ 

আজ ৮ ডিসেম্বর, ঝালকাঠি পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা ঝালকাঠি শহর থেকে পালিয়ে যায়। বিজয়ীর বেশে মুক্তিযোদ্ধারা ঝালকাঠি শহরে প্রবেশ করেন। সর্বত্র আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন স্বাধীনতাকামী জনতা। পাশাপাশি শুরু হয় বিভিন্ন গণকবর আর বধ্যভূমিতে হারানো স্বজনের লাশ খোঁজার পালা। 

১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল ভারী কামান আর মর্টার শেলের গোলা নিক্ষেপ করে পাকিস্তানি বাহিনী ঝালকাঠি শহর দখলে নেয়। পাক বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামসের সহায়তায় ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলা জুড়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগসহ নারকীয় নির্যাতন চালায়। 

আরো পড়ুন:

আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস

আজ শত্রুমুক্ত ফেনীতে প্রথম উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা

বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে পালবাড়ী টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন চালাতো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা। পরে সুগন্ধা তীরবর্তী পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করতো তাদের। জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের হত্যা করে মাটি চাপা দেয় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা। 

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ৭ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি শহরে কারফিউ জারি করে পাকবাহিনী। পরে তারা ঝালকাঠি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ৮ ডিসেম্বর স্থানীয়রা ঝালকাঠিকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে। 

একইদিন পাক হানাদার মুক্ত হয় ঝালকাঠির বর্তমান নলছিটি উপজেলা। নলছিটি থানার তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দার আলী মিয়ার কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন।

এর আগে, ঝালকাঠির রাজাপুর পহানাদার মুক্ত হয়। বরিশাল অঞ্চলে সর্বপ্রথম হানাদার মুক্ত হয় রাজাপুর থানা। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় রাজাপুরে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা বলেন, ‍‍“এ অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও হোসেন আলী নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন কমপক্ষে ২০ জন । ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমন চালায়। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি গুলি। রাতভর যুদ্ধের পরে হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।” 

বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেন বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ৯ নম্বর সাব সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। কানুদাসকাঠিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন। রাজাপুর থানায় সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলে তিনিও এ যুদ্ধে অংশ নেন এবং সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শাহজাহান ওমর বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।”

ঢাকা/অলোক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিজয়ের পরদিনও চলে শিরোমণির ট্যাংকযুদ্ধ
  • ঝালকাঠি পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ 
  • আত্মসমর্পণের পর নওরোজ পত্রিকার সম্পাদক শামসুল হক কারাগারে