গ্যাস চুরির অভিযোগে মুন্নু সিরামিক কারখানায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন
Published: 10th, December 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে বৈধ সংযোগের আড়ালে বাইপাস লাইন তৈরি করে গ্যাস চুরির অভিযোগে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
কারখানাটির মালিক মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আফরোজা খান রিতা।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাজীপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ার পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে ধামরাইয়ের ইসলামপুরে রিতার মালিকানাধীন মুন্নু সিরামিক্সের কারখানায় অভিযান শুরু করে গাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আসা তিতাসের ভিজলেন্স টিম।
এসময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বিভিন্ন আলামত এবং মিটার জব্দ করে কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন আলামত ও নামমাত্র গ্যাসের রিডিং আসায় কারখানায় কারখানার গ্যাস চুরির বিষয়ে অভিযান শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
গোপন অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিতাসের আঞ্চলিক ভিজিল্যান্স বিভাগের ব্যবস্থাপক মো.
এক পর্যায়ে চোরাই পাইপ লাইনের সন্ধান মেলে। কর্মকর্তারা বিষয়টি অবহিত করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। এরপরই সেখানে যান তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এসময় তারা মুন্নু সিরামিকসের বাইপাস গ্যাস লাইনসহ ফলস আরএমএস দেখতে পান। একইসঙ্গে সেখানে একটি সরাসরি বাইপাস লাইন সনাক্ত করা হয়। যা থেকে লো প্রেসার থাকলে সরাসরি বিশাল বড় গ্যাস বুস্টার দিয়ে গ্যাস টেনে নেওয়া হতো কারখানায়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে তাদের কারখানায় ঢুকতে দেননি নিরাপত্তারক্ষী ও কারখানা সংশ্লিষ্টরা।
তবে এসবের মধ্যেও অভিযান চলতে থাকে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সব মালামাল জব্দ করা চলাকালে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এসময় তিতাসের কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় গণমাধ্যম কর্মীদের কোন ব্রিফিং না করেই দ্রুত কারখানা থেকে নিরাপদে বের হয়ে যান।
টানা ৭ ঘণ্টার এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাজীপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক( ডিজিএম) আনোয়ার পারভেজ।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বকেয়ার দায়ে চারটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সম্প্রতি বকেয়া পরিষদ সাপেক্ষে একটি সংযোগ পুনঃস্থাপন করে মুন্নু সিরামিকস কর্তৃপক্ষ।
সেই সংযোগের আড়ালে অবৈধভাবে ৪ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে বাইপাস লাইন করে ভিন্ন পথে গ্যাস চুরি করার বিষয়টি অনুসন্ধানকালে ধরা পড়ে।
তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে সরকারের ব্যয় ছিল প্রায় ৫৪,৯৫৪ কোটি টাকা ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮.৯% বেশি। আমদানিকৃত সেই গ্যাসই শিল্পে সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, “এভাবে গ্যাস চুরি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। আমরা এখন নিরূপণ করব কী পরিমাণ গ্যাস চুরি করা হয়েছে তারপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জরিমানা ধার্য করা হবে।”
এ ব্যাপারে মুন্নু সিরামিকস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কেউই।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের কোম্পানি মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আফরোজা খান রিতা। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মুন্নু সিরামিক।
সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর কোম্পানিটি প্রায় ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।
ঢাকা/সাব্বির/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য গ ব চ ছ ন ন কর ন ড ড স ট র ব উশন কর মকর ত স ল ইন
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
পেঁয়াজ আমদানির জন্য শেষ পর্যন্ত ভারতকেই বেছে নিল সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আজ রোববার ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
আমদানি অনুমতিকে সংক্ষেপে আইপি বলা হয়। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে এ আইপি দেওয়া হয়। তবে কোনো আমদানিকারকই ৩০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। আবার কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য আমদানির আবেদন করতে পারবেন না। আমদানির অনুমতির বা আইপির মেয়াদ থাকবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল শনিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আইপির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই পাবেন এই সুযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইপির জন্য এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০টি আবেদন জমা আছে। আজ ৫০টি আবেদন বাছাই করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে। সার্ভারে যাঁরা আগে ঢুকতে পেরেছেন, তাঁরাই আইপির জন্য বিবেচিত হয়েছেন।
হিলি সীমান্তের কাছে অবস্থিত বিজয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বন্টি জয়সয়াল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ তিনি সারা দিন চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারেননি। কাল আবার চেষ্টা করবেন। একজনের জন্য ৩০ টন, পরিমাণটা কম হয়ে গেছেও বলে মনে করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাজারে দাম না কমলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের আইপি দেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে তা আর দেওয়া হবে না। বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন ঘোষণা কার্যকর হয়েছে এক মাস পর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এক বছর আগে পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল। উৎসগুলো হচ্ছে পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর, চীন ও মিয়ানমার। বাংলাদেশ এত বছর ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করে আসছিল। এ ছাড়া চীন ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল, তবে তা পরিমাণে কম।
গত ২৮ নভেম্বর ভারতের দ্য ইকোনমিকস টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। তবে গত আট মাসে বাংলাদেশ খুবই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছে ভারত থেকে। যদিও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম ভারতের স্থানীয় বাজারের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন। মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছু থাকে বীজের জন্য, কিছু পচে যায়। ফলে মৌসুম শেষে সরবরাহে একটু টান পড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোক্তাস্বার্থের কথা ভেবে আজ ৫০টি আইপি দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে পরিস্থিতি অনুযায়ী এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে পেঁয়াজের দাম কমে এলেই আমদানির অনুমতি বন্ধ করা হবে। কারণ, কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
এদিকে প্রথম আলোর দিনাজপুরের বিরামপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বিকেল সোয়া চারটায় ভারত থেকে ৩০ টন পেঁয়াজবোঝাই একটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রকি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আতিক হাসান জানিয়েছেন, ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে ২৫০ মার্কিন ডলারে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১২ রুপি এবং গাড়িভাড়াসহ বন্দর পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে কেজিপ্রতি ১৮ রুপি।
এদিকে আমদানির ঘোষণায় এক দিনের ব্যবধানে আজ ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের চিত্রও প্রায় একই। আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, আমদানি অনুমতির খবরে দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জের মোকামগুলোতে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।