প্রতিশোধ নয়, সমাধানের পথে যাবে বিএনপি
Published: 10th, December 2025 GMT
দেশে সহনশীল ও ভয়মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।
মানবাধিকার দিবসে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ফেসবুক পোস্টে এসব কথা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সেখানে তিনি লেখেন, “১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনোদিন ঘরে ফিরে আসেনি।”
এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি দাবি করে তিনি বলেন, “বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা- সব জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ- সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, নূন্যতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকার এর মত মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।”
এই বছরগুলোতে তাকে কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “২০১৫ সাল থেকে আমার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না করা হয়, এমন নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও এই চাপিয়ে দেয়া নীরবতার মধ্যেও আমি অধিকার, গণতন্ত্র আর মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছি, কারণ সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না।”
“এই পুরো অন্ধকার সময়টায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা- এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তাঁর গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাননি। তাঁর বিশ্বাস একটাই- অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।”
তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবেও সেই দুঃসহ সময়ের সাক্ষী। আমার মা, যিনি দেশনেত্রী, নিজ হাতে সহ্য করেছেন তাঁর ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতন করার মানসিক যন্ত্রণা। তাঁর আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি।”
“বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে- কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা- এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন- যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়- ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যত গড়ে”, বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু- একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মত যেখানে হুমকি না হয়ে বরং গণতন্ত্রের অংশ হবে। যেখানে ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না।”
বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।”
“১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়- মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি- আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি। বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন, আর আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই- যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকার আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র ক রহম ন ম নব ধ ক র র র জন ত ব এনপ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো বন্দুক হামলা, শিক্ষার্থী নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি আবাসিক হলে বন্দুকধারীর এলোপাথাড়ি গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত এবং আরো একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
আরো পড়ুন:
ইউরোপীয় নেতাদের ‘দুর্বল’ বলে সমালোচনা করলেন ট্রাম্প
ওমরাহ পালন করতে সৌদিতে জায়েদ খান
প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার পরেই সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই এলাকায় চার মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় গুলিবর্ষণের ঘটনা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
ফ্রাঙ্কফোর্টের সহকারী পুলিশ প্রধান স্কট ট্রেসি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মঙ্গলবারের গুলিবর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কেনটাকি স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র নয়। ট্রেসি বলেন, পুলিশ দ্রুত গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাড়া দিয়েছে।
তিনি বলেন, “ফ্রাঙ্কফোর্ট পুলিশ বিশ্বাস করে যে, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে কোনো সক্রিয় নিরাপত্তা উদ্বেগ নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবাসিক হলে গুলিবিদ্ধ এক ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল। কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করছে না।
কেনটাকি স্টেট ইউনিভার্সিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের জন্য কাউন্সেলিংসহ সম্ভাব্য সব সহায়তা প্রদান করছি।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্স-এ পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায় কেন্টাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার বলেন, “গুলি চালানো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হচ্ছে এবং কোনো চলমান হুমকি নেই।”
তিনি বলেন, “আমাদের কমনওয়েলথ বা দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আসুন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আমাদের কেএসইউ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রার্থনা করি। আসুন এমন একটি পৃথিবীর জন্যও প্রার্থনা করি যেখানে এই ঘটনাগুলো না ঘটে।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, সপ্তাহের বাকি সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, ফাইনাল পরীক্ষা ও ক্যাম্পাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, “শিক্ষার্থীরা যদি ইচ্ছা করে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। অতিরিক্ত নির্দেশিকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানানো হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি কফি সি আকাকপো এটিকে ‘অর্থহীন ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিন বলেন, “আমরা আমাদের একজন ছাত্রের মৃত্যুতে শোকাহত। একজন অভিভাবক হিসেবে আমি কল্পনাও করতে পারি না যে, আজ আমি অভিভাবকদের কাছে যে ফোন করেছি তা পাব।”
এর আগে গত ১৭ আগস্ট, একই আবাসিক হলের কাছে কেউ একজন গাড়ি থেকে একাধিক গুলি চালিয়েছিল, যার ফলে দুজন আহত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল না।
কেনটাকি স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাপিটল ভবন থেকে প্রায় ২ মাইল (৩.২ কিমি) পূর্বে অবস্থিত।
ঢাকা/ফিরোজ