প্রায় ১০০ বছর আগে আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রস্তাবিত একটি পরীক্ষা আবার করার মাধ্যমে কোয়ান্টাম মেকানিকসের একটি মূল নীতিকে নিশ্চিত করেছেন চীনের একদল বিজ্ঞানী। নতুন এ পরীক্ষার মাধ্যমে একটি কণার পথ ও তার তরঙ্গসদৃশ আচরণ একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা যায় না বলে প্রমাণ করা হয়েছে। নতুন এই প্রমাণ কোয়ান্টাম বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে নিলস বোরের ধারণাকে সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

১৯২৭ সালে ব্রাসেলসের সলভে কনফারেন্সে কোয়ান্টাম মেকানিকসের ভিত্তি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এই তত্ত্ব সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতেন। তিনি বিজ্ঞানী বোরের সম্পূরকতার নীতিকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেন। বোরের মতে, ফোটনের মতো কোয়ান্টাম কণা একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ উভয় রূপেই আচরণ করতে পারে। তবে এই দুটি বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে পরিমাপ করা অসম্ভব।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর একটি চিন্তামূলক ডাবল–স্লিট পরীক্ষার একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রস্তাব করেন; যার মাধ্যমে দেখা যায়, দুটি বৈশিষ্ট্য সম্ভবত একই সঙ্গে পরিমাপ করা যেতে পারে, যা আবার বিজ্ঞানী বোরের তত্ত্বের পরিপন্থী হতো। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের এই চ্যালেঞ্জ কেবল তাত্ত্বিকই ছিল। চীনের বিজ্ঞানী পান জিয়ানওয়েইয়ের নেতৃত্বে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নার একদল বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ধারণাকে বাস্তবে একটি পরীক্ষায় রূপান্তরিত করেছেন।

বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত সংবেদনশীল যন্ত্রাংশ তৈরি করেছেন, যা একটি একক ফোটনের ক্ষুদ্র গতিও শনাক্ত করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কণার পথ পরিমাপের চেষ্টা করলে ব্যতিচার ধরন নষ্ট হয়ে যায়। আবার ব্যতিচার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করলে কণার পথ নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই ফলাফল বোরের তত্ত্বকে প্রমাণ করে। কণার বৈশিষ্ট্য সম্পূরক ও একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। নতুন এই পরীক্ষাকে পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

কোয়ান্টাম কণার এমন অস্বাভাবিক আচরণ বাস্তবতার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য, এটি কোনো পরীক্ষামূলক ত্রুটি নয়। গবেষণাটি ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারসে প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষাটি বিজ্ঞানী বোরের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে দীর্ঘদিনের বিতর্কের নিষ্পত্তি করেছে।

সূত্র: এনডিটিভি

https://www.

ndtv.com/science/chinese-scientists-test-einsteins-100-year-old-thought-experiment-confirm-bohrs-quantum-theory-9763355

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বন্য হাতিকে ‘মামা’ ডাকলে আসলেই কি তারা ক্ষতি করে না

রাত তখন সাড়ে ১০টা। বন অফিসজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাহাড় থেকে ১৫–২০টি বন্য হাতির পাল নিঃশব্দে এগিয়ে আসে তাওয়াকুচি বিট অফিসের সামনে থাকা বিশাল কাঁঠালগাছের নিচে।

সেই অফিসে ছিলেন শেরপু‌রের ঝিনাইগাতী তাওয়াকু‌চি বিট কর্মকর্তা আবদুল বারী। পাশে একটি কক্ষে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। অন্য কক্ষে থাকা দুই কর্মী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁকে খবর দেন, ‘স্যার, হাতির পাল অফিস ঘেঁষে এসে গেছে।’

আবদুল বারী এক হাতে দুনলা বন্দুক, অন্য হাতে মোটরসাইকেলে স্টার্ট দেন। হেডলাইটের আলো গিয়ে পড়ে হাতির শরীরে। সেই মুহূর্তে ভ‌য়ে কাঁপা কণ্ঠে বারী ব‌লেন, ‘মামারা, তোমাদের কেউ ক্ষতি না করলে তোমরাও কারও ক্ষতি করো না। যদি কাঁঠাল খাইতে চাও, খাইয়া চলে যাইও।’

ঠিক সেই সময় গাছের উঁচু কাঁঠালে শুঁড় তুলছিল এক বড় হাতি। আলো, শব্দ ও অনুনয়ের কথা—সব যেন একসঙ্গে গিয়ে লাগে তাদের অনুভূতিতে। হাতিরা কাঁঠাল না ছুঁয়েই ধীরে ধীরে বনের দিকে ফিরে যেতে শুরু করে।

২০১৫ সালের সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনো রোমাঞ্চিত হন আবদুল বারী। বর্তমা‌নে তি‌নি না‌লিতাবাড়ীর গোপালপুর বিট কার্যাল‌য়ে কর্মরত আছেন।

শেরপুরের পাহাড়ে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠের দাবি, হাতিকে ‘মামা’ বা ‘বাবু’ সম্বোধন করলে হাতি সাধারণত উত্তেজিত হয় না। আক্রমণাত্মক আচরণ করে না।

মধুটিলা গ্রামের দিনা মারাক (৫৫) বলেন, ‘হাতিরে মামা কইলে ক্ষতি করে না। আমরা ছোটবেলা থাইকাই শুনছি, হাতিরে হাতি কইলে রাগ করে। তাই সম্মান দিয়া আমরা মামা ডাকি।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয়ের পিক পাহাড় থেকে ২০–২৫টি বন্য হাতি শেরপুর সীমান্তে ঢোকে। এখন সেই সংখ্যা শতাধিক। বছরজুড়ে খাবারের সন্ধানে তারা শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ীসহ ময়মনসিংহ ও জামালপুরের পাহাড়ঘেঁষা জনপদে ঘুরে বেড়ায়। লোকালয়ে ঢুকলে পটকা, মশাল ও হইচই করে তাড়ানোর চেষ্টা। এতেই বেশির ভাগ সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনশেরপুরে বন্য হাতির হানা, তিন দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ একর জমির ধান০৮ অক্টোবর ২০২৫

বিশপনগরের বাসিন্দা কুবির মারাক (৬৭) প্রতিবছরই হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব দেখেন। ‌তি‌নি ব‌লেন, ‘এই জঙ্গল তো হাতি–পশুপাখির। খাবারের লাইগা হাতিরা নিচে নাইমা আসে। তাদেরে মামা বা বাবু কইয়া অনুরোধ করলে, হাতি কথা রাহে। বনে ফিইরা যায়। এ রহম মেলা ঘটনা দেখছি।’

ঢাকা আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘হাতির আচরণ মানুষের মতোই। আমরা কাউকে বিনয়ের সঙ্গে ডাকলে যেমন সে ইতিবাচক সাড়া দেয়, হাতিও তেমন অনুভব করতে পারে। “মামা” বলে অনুনয় করলে হাতি সেটা বুঝে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে শাবক সঙ্গে থাকলে কোনো অনুরোধই কাজে দেয় না।’

আরও পড়ুনবুনো হাতিরা এখন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কবলে, প্রাণ ও ফসল ঝুঁকিতে১৪ নভেম্বর ২০২৫

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান ব‌লেন, হাতির চোখ ছোট; কিন্তু শ্রবণ ও ঘ্রাণশক্তি অসাধারণ। তারা মনে রাখতে পারে, কে কোথায় কখন গালি দিয়েছে। ‘মামা’ শব্দের মানে না বুঝলেও স্বরের ভঙ্গি ও আচরণ থেকে বোঝে—এ লোক ক্ষতি করবে না। কিন্তু একই সঙ্গে যদি কেউ ‘মামা’ বলে ঢিল ছোড়ে, হাতি তখনই বুঝে যায়, এই অনুনয় ভুয়া।

আরও পড়ুননদীতে নেমে হাতির সে কী আনন্দ, পাড়ে আসতেই চাচ্ছিল না২৯ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জরিপ বা নির্বাচনের ফলাফল, কোনোটাই ভুল নয়
  • ১৬ হাজার পায়ের ছাপে জানা গেল ডাইনোসরের অদ্ভুত আচরণ
  • প্রাণীরা কি আসলেই আগেভাগে ভূমিকম্প টের পায়
  • বেগম রোকেয়া নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হেনেছিলেন: তারেক রহমান
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হলের প্রবেশপথে পাকিস্তানের পতাকা পদদলিত করলেন একদল শিক্ষার্থী
  • শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে সাত কলেজের একদল শিক্ষার্থীদের অবরোধ
  • বন্য হাতিকে ‘মামা’ ডাকলে আসলেই কি তারা ক্ষতি করে না
  • অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, শাস্তি পেতে হবে: বেনিনের প্রেসিডেন্ট তালোন
  • বেনিনে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের দাবি একদল সেনার, সরকারের অস্বীকার