রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়াতে সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা, কমপ্লায়েন্স ও লজিস্টিকস সক্ষমতা উন্নয়নে জোর দিয়েছেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে উৎপাদন মান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন রূপালী চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী, রেনাটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এস কায়সার কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়েমা হক বিদিশা, চামড়াপণ্য, জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সহসভাপতি মো.

নাসির খান, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ।

অনুষ্ঠানে রূপালী চৌধুরী জানান, বার্জার ইতিমধ্যে কিছু পণ্য দেশেই তৈরি করছে, যেগুলো আগে বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। যেমন ফুডগ্রেড ক্যান। তবে এর সার্টিফিকেশন বা প্রত্যয়ন করাতে এখনো ভারত বা সিঙ্গাপুরে পাঠাতে হয়।

রূপালী চৌধুরী বলেন, কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পপণ্য—সব ক্ষেত্রেই প্রত্যয়ন ও পরীক্ষায় নানা অসংগতি রয়েছে। সে জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আরও শক্তিশালী, ক্যাটাগরি নির্দিষ্ট ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হবে।

ওষুধশিল্পের প্রসঙ্গ টেনে রূপালী চৌধুরী বলেন, এত বড় একটি শিল্প খাত দেশে আছে। অথচ দেশে এ খাতের অনেক প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগার নেই। অথচ ভারতে মানবদেহে ব্যবহারের জটিল পণ্যেরও পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের সক্ষমতা গড়ে তুলতে কয়েক শ কোটি ডলারের বিনিয়োগ দরকার।

দুর্বল কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থা রপ্তানির পথে আরেকটি বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন রূপালী চৌধুরী। তিনি বলেন, লজিস্টিকস সময় কমানো জরুরি। এ ছাড়া কাস্টমস পদ্ধতি সহজীকরণ ও অটোমেশনেও গুরুত্ব দিতে হবে।

চীন ও ভিয়েতনাম যেসব বাজারে প্রবেশে বাধার মুখে পড়ছে, সেখানে বাংলাদেশ সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে জানান রূপালী চৌধুরী।

গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রু মুক্ত হয় মাদারীপুর

মহান মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত দিবস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাত  থেকে ১০ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন মাদারীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় পুরো জেলা, বিজয়ের পতাকা উড়ানো হয় মাদারীপুরের আকাশে।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী মাদারীপুর ত্যাগের প্রস্তুতি নেয়। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া আসে, এ আর হাওলাদার জুট মিল ক্যাম্পে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা পালানোর পরিকল্পনা করছে।

আরো পড়ুন:

‘বাঙ্কারে গ্রেনেড থ্রো করাতে কাজ হয়েছিল’

শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গোপন নথি

খলিল বাহিনীর প্রধান খলিল খান দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর রাত থেকেই সমাদ্দার ব্রিজ এলাকা ঘিরে ফেলেন এবং সবদিক থেকে পাকিস্তানিদের পলানোর পথ বন্ধ করে দেন। পরদিন সকালেই শুরু হয় তীব্র যুদ্ধ। গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের গর্জনে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। টানা ৩৬ ঘণ্টার এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা অপ্রতিরোধ্য সাহস ও কৌশল প্রদর্শন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী কাজী বলেন, “আমাদের সঙ্গে টানা ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পাক বাহিনী ছিল শক্তিশালী, কিন্তু আমরা পিটু হটিনি। এক পর্যায়ে আমাদের সর্বকনিষ্ঠ সাথী সরোয়ার হোসেন বাচ্চু শহীদ হন। তার মৃত্যু আমাদের আরো কঠোর করে তোলে।”

তিনি বলেন, ‍“মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শত্রুপক্ষ। গোলাবারুদ সংকট ও চারদিক থেকে চাপের মুখে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। বিজয়ের পতাকা হাতে উল্লাসে ভাসে মাদারীপুর।” এই যুদ্ধে পাক সেনাদের অন্তত ২০ জন নিহত হন। 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুল হক বলেন, “১০ ডিসেম্বর আমাদের জেলা শত্রুমুক্ত হয়। এটি আমাদের কাছে গর্বের দিন। কিন্তু এই বিজয়ের পেছনে রয়েছে বহু শহীদের আত্মত্যাগ। তাদের প্রতি আমাদের চিরকৃতজ্ঞতা।” 

শত্রুমুক্ত দিবস উপলক্ষে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা, তাদের পরিবারবর্গ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ। সভায় বক্তারা ১০ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানো নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মাদারীপুরের শত্রুমুক্তির ইতিহাস আমাদের গৌরবময় অধ্যায়। এ দিনের স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে প্রশাসন নিয়মিত উদ্যোগ নেবে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ