কেমন আছে রাজবাড়ী জেলার নদীগুলো
Published: 26th, November 2025 GMT
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা পদমদী গ্রাম। সেখানেই শায়িত আছেন বাংলা ভাষার বিখ্যাত লেখক নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ হোসেন। তাঁর ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে ১৩ নভেম্বর বাংলা একাডেমির আয়োজনে পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে আলোচনা অনুষ্ঠান ছিল। আমি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সচিব, পরিচালক, কয়েকজন উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, রাজবাড়ীর ডিসি, বালিয়াকান্দির ইউএনও উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বেশ কয়েকজন কবি-লেখক-সাহিত্যিকের সঙ্গে দেখা হলো।
অনুষ্ঠান শেষে ইউএনওকে বললাম চত্রা নদী দেখতে যাব। নদীতে যাওয়ার একটি ব্যবস্থা করার অনুরোধ করি তাঁকে। দুটি মোটরসাইকেল প্রয়োজন। ইউএনও উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি। চত্রা নদীর কথা বলতে মনে হলো তিনি চিনতে পারলেন না। হয়তো নতুন এসেছেন। তবে দুজন ব্যক্তিকে সঙ্গে দিলেন নদী দেখানোর জন্য। অপূর্ব রায় ও তপু আহমেদ।
চত্রা নদী রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সিরাজপুর হাওর নদীর শাখানদী। দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। নদীটি দেখতে গেলাম নারুয়া ইউনিয়নে। যে স্থানে চত্রা নদী দেখতে গেলাম, সেই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি স্লুইসগেট আছে। ওই বাজারের নামও স্লুইসগেট বাজার। স্লুইসগেট–সংলগ্ন নদীর ভেতরে একটি টিনের চালাঘর। এখনই যদি টিনের চালাঘরটি তুলে দেওয়া না যায়, তাহলে দখল আরও বাড়তে থাকবে।
আমাদের দেশে নদীগুলোর সুরক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা লাগবেই। কিন্তু বারবার বদলি আর নানাবিধ কাজের কারণে যাঁদের নদী সুরক্ষায় কাজ করা প্রয়োজন, তাঁরা নদীগুলোই চেনেন না। এ জন্য সামাজিক সংগঠনগুলোর একটি বড় দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজনস্লুইসগেট থেকে তিন-চার শ মিটার ভাটিতে গড়াই নদে চত্রা নদী মিলিত হয়েছে। মিলিত স্থান দেখতে গেলাম। গড়াই নদে অনেক পানি আছে। যে স্থানে চত্রা নদী মিলিত হয়েছে, সেখানে নারী-শিশু-বৃদ্ধ গোসল করছেন, কাপড় পরিষ্কার করছেন। শিশুদের লাফালাফি দেখতে ভালোই লাগছিল।
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় চত্রা এবং গড়াই নদীর মিলনস্থল।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তরুণ অবরুদ্ধ, পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক তরুণকে অবরুদ্ধ করে একদল লোক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গোড়াইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় আনে।
এদিকে ওই ঘটনার সময় গোড়াইল বাজারের অদূরে ওই তরুণের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তার তরুণ (২১) গত বছর নগরকান্দা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি গোড়াইল বাজারে একটি ফার্মেসিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। থানায় আনার পর তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণ তাঁর ফেসবুক আইডিতে কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে ধর্মীয় অবমাননাকর বাক্য লিখে পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে ওই মন্তব্যের স্ত্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। সন্ধ্যার পর থেকে গোড়াইল বাজার এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওই তরুণের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই বাজারের কয়েকজন ওষুধের দোকানের সাটার নামিয়ে ওই তরুণকে আটকে রাখেন। এর মধ্যেই বাজারে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে বিষয়টি নগরকান্দা থানার পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরকান্দার ইউএনও দবির উদ্দিন ও নগরকান্দা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি ততক্ষণে উতপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ওষুধের দোকান জনতা ঘিরে ফেলে। দোকানের সামনে থেকে হ্যান্ডমাইকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য জনতার উদ্দেশে কথা বলেন স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় ইউএনও দবির উদ্দিন এক দিনের মধ্যে দৃশ্যমান শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিরু ফকির বলেন, পুলিশ ওই তরুণকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গোড়াইল বাজার থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ির দিকে ছুটে যায় একদল লোক। তারা ওই তরুণের বাড়ি ভাঙচুর করে। ফিরে আসার পথে ওই বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় সেই আগুন নেভানো হয়।
নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা আইনের ২৬ ও ২৭ ধারায় ওই তরুণকে আসামি করে মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই স্কিনশর্ট তিনি দেখেছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ দল দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই তরুণের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে ওসি রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাটা তেমন বড় কিছু নয়। ওই এলাকায় বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।