মা কুকুরের মুখে আটকে ছিল প্লাস্টিকের বয়াম, ৩২ ঘণ্টা পর কেটে বিপদমুক্ত
Published: 10th, December 2025 GMT
টাঙ্গাইলের সখীপুরে মুখে প্লাস্টিকের বয়াম আটকে থাকা এক মা কুকুরকে প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর বিপদমুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সখীপুর পৌরসভার ময়থাপাড়া এলাকায় বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে কৌশলে বয়ামটি কেটে কুকুরটির মুখ থেকে বের করেন আবু তালেব নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। এতে কুকুরটির সাতটি ছানা আবার দুধ পান করতে পেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।
এর আগে গত সোমবার সকালে খাবারের সন্ধানে একটি দোকানে ঢোকে মা কুকুরটি। একপর্যায়ে প্লাস্টিকের বয়ামের ভেতর মুখ ঢুকিয়ে দেয় এটি। পরে বয়ামটি মুখে আটকে যায়। তখন থেকে কুকুরটি এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে এবং বিভিন্নভাবে বয়ামটি খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই এটি খুলছিল না।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ওই মা কুকুরটির সাতটি ছানা আছে। দুধ না পেয়ে ছানাগুলো কান্নাকাটি শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দা ও হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোজাম্মেল হকের বাসায় থাকে মা কুকুরটি। পরে তিনি বিষয়টি দেখতে পেয়ে সখীপুর পৌরসভার দারোয়ান আবু তালেবের কাছে সাহায্য চান।
মোজাম্মেল হক সজল বলেন, ‘আবু তালেব ঝুঁকি নিয়ে কাজটি করেছেন। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
কুকুরটিকে বিপদমুক্ত করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন আবু তালেবও। তিনি বলেন, ‘আমি তো গরিব মানুষ। মানুষের তেমন উপকার করতে পারি না। অন্তত একটি বিপদগ্রস্ত প্রাণীকে বাঁচাতে পেরেছি। কাজটি করে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’
আবু তালেব আরও বলেন, ‘ফেসবুকে দেখেছি, পাবনার ঈশ্বরদীতে এক নারী আটটি কুকুরের বাচ্চা মেরে পুকুরে ফেলে দেন। আর আমি সাতটি বাচ্চার দিকে তাকিয়ে মা কুকুরটাকে ঝুঁকি নিয়ে বিপদমুক্ত করেছি।’
এই কাজকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছেন সখীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী। তিনি বলেন, ‘একটি অসহায় প্রাণীকে বিপদমুক্ত করতে পৌরসভার এক কর্মী যে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, এটি সমাজে ইতিবাচক বার্তা দেবে। আমরা চাই মানুষ শুধু মানুষের জন্য নয়, সব প্রাণীর প্রতিও সহমর্মিতা দেখাক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রসভ র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের উন্নতির সম্ভাবনা নিয়ে হতাশ ৪৬%, আশাবাদী ৩৫%
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় অর্ধেক মানুষ হতাশ। এক-তৃতীয়াংশের বেশি কিছু মানুষ দেশ নিয়ে আশাবাদী। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কর্মসংস্থান বা আয়ের সুযোগ এখন অনুকূলে নয়। বর্তমান অবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যের উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন ৭৭ শতাংশ মানুষ।
দেশ নিয়ে আশা-হতাশা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এবং দেশ ছাড়ার বিষয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’-এ। প্রথম আলোর জন্য জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিডেট।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির সম্ভাবনা নিয়ে কতটা আশাবাদী? উত্তরে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা হতাশার কথা বলেছেন। একই প্রশ্নে খুবই হতাশ ১১ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা। ফলে হতাশ ও খুবই হতাশ উত্তরদাতার হার দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে কিছুটা আশা আছে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার। অত্যন্ত আশাবাদী ৩ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। দুয়ে মিলে আশাবাদী উত্তরদাতার হার দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ। হতাশ নন, আবার আশাবাদীও নন ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপ বলছে, দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির বিষয়ে নারী-পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। নারীর মধ্যে দেশ নিয়ে আশাবাদ বেশি। একইভাবে বয়স্কদের চেয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেশ নিয়ে আশাবাদ কিঞ্চিৎ বেশি দেখা গেছে।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা জরিপে দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর।
অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, দেশে আয়-উপার্জন-ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ভালো নয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা বলছেন, পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূলে নয়। ২০ শতাংশের মতো উত্তরদাতা মনে করেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে।জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।
উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কর্মসংস্থান ও আয়-উপার্জনের সুযোগ পাওয়ার জন্য কতটা অনুকূল। পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ উত্তর দিয়েছেন। অনুকূল বলেছেন মাত্র ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। বাকিরা বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন।
প্রথম আলো গ্রাফিকস