‘দূর থেকে দেখলেই নাম ধরে ডাকতেন আরিফ। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকত তাঁর। কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না। সেই আরিফ এভাবে চলে যাবেন, এটা ভাবতেও পারছি না। তাঁর এ মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সহপাঠী আরিফুল ইসলামের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী। আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানেই আরিফুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে সম্প্রতি স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তিনি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন।

‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যে ছেলেটা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাঁর মৃতদেহ আজ আমাদের সামনে।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরিফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত শনিবার দলীয় সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিরা অংশ নেন। অনেকেই আরিফুল ইসলামের স্মৃতিচারণা করেন।

আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মোয়াজ্জেম বাড়ির মো.

হারুনের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলা সদর থেকে দলীয় সভা শেষ করে বাড়ি যাচ্ছিলেন আরিফুল ইসলাম ও হাটহাজারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এমরান চৌধুরী। এ সময় হাটহাজারীর চারিয়া বাজারে পেছন থেকে একটি জিপ গাড়ি তাঁদের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান এমরান। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল আরিফুল ইসলামের মৃত্যু হয়।

জানাজায় উপস্থিত হয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যে ছেলেটা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাঁর মৃতদেহ আজ আমাদের সামনে। বিনয়ী, ন্যায়পরায়ণ ও নিষ্ঠাবান, এমন ছেলে খুব কম দেখা যায়।’

আরও পড়ুনসড়ক দুর্ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিহত০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আরিফুল ইসলামের চাচা মো. দৌলত খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আরিফ আমার ভাতিজা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার অন্য রকম ভালোবাসা ছিল। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এত মানুষের উপস্থিতি দেখে বুঝেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ও আরিফকে আপন করে নিয়েছে।’

আরিফুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারো শিক্ষার্থী যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ল ইসল ম র ছ ত রদল র র ঘটন য় উদ দ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কিশোরগঞ্জ-১: বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে, একসঙ্গে বিক্ষোভ

কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে প্রথমে পৃথক স্থানে সমাবেশ করেন তাঁরা। পরে একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন ওই চার নেতা।

গত বৃহস্পতিবার এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে। প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণার সময় আসনটি ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবার প্রত্যাশা ভঙ্গ করে মাজহারুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতা চান। তবে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। অন্যদিকে তাঁর মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে আসছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।

গতকাল সন্ধ্যায় শহরের স্টেশন রোডে নিজ কার্যালয়ে সমাবেশ করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম খান (চুন্নু)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম। একই সময়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি সোহেল)। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রুহুল হোসাইন।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে ‘অযোগ্য’ আখ্যায়িত করেন বক্তারা। একই সঙ্গে তাঁর মনোনয়নের জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমকে দায়ী করেন। তাঁকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলেও উল্লেখ করা হয়। অবিলম্বে মনোনয়ন বাতিল করে ‘যোগ্য ও ত্যাগী’ নেতাকে মনোনীত করার দাবি তোলেন তাঁরা। সমাবেশে রেজাউল করিম খান বলেন, ‘এটা আমার শেষ নির্বাচন। কাজেই এই নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেব।’

এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মাজহারুল ইসলাম।

সমাবেশ শেষে রেজাউল করিম খান, রুহুল হোসাইন, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ সাইফুল্লাহ—এই চার নেতা এক রিকশায় চড়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম ও মনোনীত প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। পরে স্টেশন রোড এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বড় দলে অনেক প্রার্থী থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। আমার প্রতি দলের আস্থা আছে বলেই মনোনয়ন দিয়েছে। রাজনীতির শিষ্টাচার ও শালীনতা বজায় রাখা উচিত।’

জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, দল যোগ্য লোককেই মনোনয়ন দিয়েছে। সবাইকে শান্ত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর জন্য কাজ করা উচিত। এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, দেশনেত্রী এখন অসুস্থ। আন্দোলন-সংগ্রাম রেখে তাঁর জন্য দোয়া করা উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিশোরগঞ্জে মনোনয়ন না পাওয়া ৫ নেতা ও দলীয় প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
  • বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌনমিছিল
  • হবিগঞ্জে বিলের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ৩০ আহত
  • কিশোরগঞ্জ-১: বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে, একসঙ্গে বিক্ষোভ
  • ফিকির নতুন সভাপতি হচ্ছেন রুপালী হক চৌধুরী
  • গোপালগঞ্জে জামায়াতের হিন্দু শাখা থেকে ৯ নেতার পদত্যাগ