ময়মনসিংহে হেলে পড়েছে পাঁচতলা ভবন, আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা
Published: 14th, December 2025 GMT
ময়মনসিংহ নগরে নির্মাণাধীন ভবনের পাশে পাঁচতলা একটি ভবন হেলে পড়েছে। ওই অবস্থায় গতকাল শনিবার রাতের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দেন। এতে আশপাশের এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজ রোববার সকালে বাসিন্দারা ভবনের ভেতর থেকে তাঁদের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।
হেলে পড়া ভবনটি ময়মনসিংহ নগরের গুলকিবাড়ি বাইলেন এলাকায় অবস্থিত। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভবনের প্রবেশমুখে কিছু জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। ভবনটি হেলে পেছনের ১৬ তলা একটি বহুতল ভবনের দিকে চলে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচতলাবিশিষ্ট ‘শাকিল ম্যানসন’ নামের বাড়িটির মালিক লন্ডনপ্রবাসী এ এস এম রিয়াজুল আমিন। তবে বাড়ির দেখভাল করেন রিয়াজুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। পাঁচ শতক জমিতে ২০১১ সালে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে চারতলা সম্পন্ন হলেও সম্প্রতি পঞ্চম তলার কাজ শুরু হয়, যা সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। বাসার ১০টি ইউনিটের মধ্যে আটটি ইউনিটে ভাড়াটেরা বসবাস করতেন।
পাশে গ্রিনল্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেডের ১৩ তলা ‘কাজীবাড়ি’ ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। প্রায় ছয় মাস ধরে পাইলিং শেষে খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি সরানো হচ্ছিল। গতকাল ভবনের সামনে ও পাশের অংশে ফাটল দেখা দিলে আতঙ্ক শুরু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার জুলহাস উদ্দিন বলেন, পাইলিং শেষে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। এতে পাশের পাঁচতলা ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। ভবনটিতে অনেক বাসিন্দা থাকায় তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনটির কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাসার মালিককে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীর সহযোগিতা নিতে। সিটি করপোরেশন যদি বলে, ভবন ব্যবহার করা যাবে এবং কোনো ঝুঁকি নেই, তবেই লোকজন ফিরে যেতে পারবেন। বাসার ভেতরে থাকা ভারী মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিং কোড মেনে যদি ভবন করা হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বাসিন্দারা ভবনের ভেতর থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন। আনন্দ মোহন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শাহ মো.
হেলে পড়া ভবনের দেখভালকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল মাগরিবের নামাজের পর ফাটল বেশি লক্ষ করি। দুই দিন ধরে হালকা ফাটল দেখা যাচ্ছিল। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটায় এমন হয়েছে। বেশি ফাটল দেখে ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে জানাই। আমি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী তিন ফুট জায়গা ছেড়ে ভবন করেছি, কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনটি কোনো জায়গা ছাড়ছিল না। আমার সীমানাপ্রাচীরও পাইলিং করার সময় ভেঙে ফেলেছে। সরকারের কাছে আবেদন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন। এত সরু এলাকায় কীভাবে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়া হলো, তা ভাবতে হয়। আমার ভবনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় গ্রিনল্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেডের নির্মাণাধীন ভবনে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্মাণকাজ চলাকালে গতকাল সন্ধ্যায় পাশের ভবন হেলে পড়ায় আমাদের কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ মানস বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের লোক পাঠানো হয়েছিল। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী চারপাশে জায়গা ছাড়ার কথা। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বিল্ডিং কোড না মেনে কাজ করায় এমন হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। যাচাই–বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, আজ দুপুরের পর হেলে পড়া ভবন পরিদর্শন করা হবে। সবকিছু যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ ধ ন ভবন ল ভবন গতক ল ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য সীমান্তে তৎপরতা জোরদার করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চেকপোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ টহল, তল্লাশি অভিযান ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আরও পড়ুনওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল করিম দাউদ১ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়ন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পরিপেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সদর দপ্তর বিজিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন যাতায়াতের পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আততায়ী যেন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ টহল পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতার মাধ্যমেও সীমান্তে নজরদারি করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমানা রক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিজিবি একই উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে। জেলার সীমান্তবর্তী কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় যানবাহনে তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অবৈধভাবে ভারতে যেতে না পারে, সে জন্য জেলার সরাইল (২৫ বিজিবি) ব্যাটালিয়ন ও সুলতানপুর (৬০ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গতকাল রাত থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আজ দিনভর তাঁরা সীমান্ত এলাকায় টহল ও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জব্বার আহমেদ জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের কিছু সীমান্ত এলাকায় টহল কার্যক্রম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের (৬০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান জানান, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার রোধকল্পে বিজিবির সদস্যরা সর্বদা সীমান্তে টহল দেন। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ত্রাসীদের অবৈধভাবে পারাপার ঠেকাতে বিজিবি বদ্ধপরিকর।