শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বেলা দেড়টার পর কর্মসূচি ঘোষণা করল রাকসু
Published: 14th, December 2025 GMT
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির বরেণ্য সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। দিনটিকে স্মরণ করতে আনুষ্ঠানিক কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। আজ রোববার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বেলা দেড়টার পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাদ আসর একটি দোয়া মাহফিল ও সন্ধ্যায় আলোচনা সভা আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাকসুর পক্ষ থেকে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। এমন কর্মকাণ্ড তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়ার কথাও বলেছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) ও শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিবসটিকে ঘিরে গতকাল শনিবার থেকে আমাদের আলোচনা চলছিল। আমরা একটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করার কথা আলোচনা করছিলাম। কিন্তু স্থান, সময় ও ব্যানার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে গেছে।’ আলোচনা সভায় অতিথি কে কে থাকবেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাকুর রহমান সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম বলতে পারেননি। তিনি রাকসুর বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি না ঘোষণার বিষয়টিকে ইতিহাস বিকৃতির অংশ হিসেবে দেখছেন রাবি শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি ও রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলে ভিপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা শেখ নূর উদ্দিন (আবীর)। তিনি বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাকসুর কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন নেই, এটি শুনে আমি অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা দেখেছি, ২৪–পরবর্তী বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠী ’৭১–কে মুছে ফেলার হেয় পরিকল্পনা করেছে। তারা একটি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ইতিহাস বিকৃত করছে। রাকসু যদি ইতিহাস বিকৃতির এই পথে যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাকসুর নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাননি। ফেসবুকে সমালোচনার পর তাঁরা দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। রাকসু একটি নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। পাকিস্তানপন্থী বিভিন্ন দিক তারা ঘটা করে পালন করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ড ’৭১–কে মুছে ফেলার প্রচেষ্টার নামান্তর।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে রাতের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস)। পরে ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন হল, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে সম্মাননা স্মারক, আলোচনা সভা, নাটক, বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করেছেন। এক বছরের বেশি সময় তিনি দেশটিতে আত্মগোপনে ছিলেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ উপলক্ষে নরওয়ের রাজধানী অসলো পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মাচাদো এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন সরকারের সহায়তা পেয়েছি।’
নিজের সহযোগীদের সুরক্ষা দিতে চান জানিয়ে মাচাদো তাঁর দেশ ছাড়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প প্রশাসন মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ত্যাগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
নরওয়েতে ভেনেজুয়েলার জনসংখ্যা খুবই কম হলেও অসলোতে মাচাদোর উপস্থিতি উপলক্ষে তাঁর দেশের অনেকে তাঁকে দেখতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি যখন গ্র্যান্ড হোটেলের বারান্দায় আসেন, তখন সেখানে জড়ো হওয়া ভেনেজুয়েলার প্রবাসীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তাঁরা স্প্যানিশ ভাষায় ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘শান্তি’র পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে ভেনেজুয়েলার জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন।
গত বছর ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই মাচাদো আত্মগোপনে চলে যান। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের সমন্বিত হুমকি ও বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন সত্ত্বেও নির্বাচনে মাচাদোর সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হন।
অবশ্য নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনিই ক্ষমতায় থেকে যান। একই সঙ্গে তিনি বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে মাচাদো বলেন, ভেনেজুয়েলার সরকার তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানত না। জানলে তারা তাঁকে নরওয়েতে যেতে বাধা দিত। নরওয়েতে গত বুধবার মাচাদোর পক্ষে তাঁর মেয়ে শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন।
ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেয়ো বুধবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, সরকার তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে অবগত ছিল। ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, মাচাদো দেশ ছাড়লে তাঁকে পলাতক বলে গণ্য করা হবে।
মাচাদো স্বীকার করেন, বর্তমান সরকারের অধীন ভেনেজুয়েলায় ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলায় কবে ফিরতে পারবেন, সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন।
নিজের নরওয়ে সফর প্রসঙ্গে মাচাদো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করার ঝুঁকি যদিও খুব বেশি ছিল, তবু তা সার্থক হয়েছে। ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি সম্ভবত আরও বেশি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারের ওপর চাপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করার পর মাচাদো বিশ্ব মঞ্চে ফিরে এলেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির উপকূল থেকে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে।
মাচাদো ট্যাংকার জব্দ করার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বারবার মাদুরোর অর্থের উৎস বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
নোবেলজয়ী মাচাদো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে। এতে মাদুরোর শাসনব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়েছে।’
মাচাদো অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি কেবল এটুকু বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর তিন সন্তান এবং দলের সঙ্গে আবার সংযোগ স্থাপন এবং নিজের চিকিৎসায় সময় দেবেন।