১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার উষালগ্নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দেশীয় সহযোগী আলবদর ও আলশামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক দগদগে ক্ষত। ১৪ ডিসেম্বর ম্যাসাকারটি তীব্র হলেও মূলত এ নিধনযজ্ঞ চলেছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে। শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎস, প্রকৌশলী, কেউ এ হত্যাকাণ্ডের বাইরে ছিলেন না। এর লক্ষ্য ছিল বাঙালি বিদ্বৎসমাজের শিকড় সমূল উপড়ে ফেলা। হত্যাকাণ্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীরা স্বমহিমায় ভাস্বর ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা নিয়ে এখনো গবেষণা বাকি আছে। প্রথমা প্রকাশন তাদের প্রকাশিত বই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী: স্মৃতি জীবন যুদ্ধ-এ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা এবং সারা দেশে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের অনুসন্ধান সমন্বয় করে ৩৫৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ শিরোনামে আলী মো.

আবু নাঈম ও ফাহিমা কানিজ লাভার যৌথ সম্পাদনায় আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থে ৪৭৭ জন বুদ্ধিজীবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক কামরুল ইসলাম মামুন ‘আ লস দ্যাট স্টিল হান্ট বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টার-এ একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন, ১৪ ডিসেম্বর রাতে ১ হাজার ১১১ জন বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। এসব ব্যক্তির কেউ আর স্বজনদের কাছে ফিরে আসেননি।

সংখ্যার বিভিন্নতা যা-ই থাক না কেন, কোনো হত্যাকাণ্ডই গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ যাকে যা দেয় না, তা কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাখে না। যেমন জীবন। জীবন কেউ কাউকে দেয় না, সুতরাং তা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। মানবাধিকারের এটিই মৌলিক শিক্ষা। ১৯৭১ সালে মানবাধিকারের মর্মবাণী পাকিস্তানি সেনাদের বুটের নিচে জায়গা পেয়েছিল।

এই হত্যাযজ্ঞের মূল কুশীলব এ এ কে নিয়াজি বা রাও ফরমান আলীসহ আলবদর ও আলশামস থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হওয়ার পর এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সবাই মুখর হয়ে ওঠে। বিজয়লগ্নে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে মানুষ শোকাভিভূত হয়ে পড়ে। বিজয়ের আনন্দ ম্লান হয়ে ওঠে। কেমন ছিল সেই ভয়াবহতা? বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক নিকোলাস টোমালিন এ হত্যাকাণ্ড দেখে সানডে টাইমস পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন পাঠান:

‘বাংলার বুদ্ধিজীবীরা এক খাদে মরে পড়ে আছেন।...বধ্যভূমিটি হচ্ছে ঢাকা শহরে মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা ধানমণ্ডির কাছে একটি ইটখোলা। এটি একটি অদ্ভুত নির্জন জায়গা, যদিও নীলচে সাদা এঁদো জলাশয়গুলোতে কচুরিপানা ভেসে বেড়ায়। শত শত ঢাকাবাসী আজ এখানে এসেছিলেন মৃত দেহগুলো দেখার জন্য। কাদামাটির পাড় ধরে হাঁটতে থাকা লোকদের অনেকেই নিজেদের আত্মীয়স্বজনের লাশ খুঁজছিলেন।

‘...তাঁদের শরীরের ওপর জমেছে ধুলো-কাদা, দেহগুলো গলতে শুরু করেছে। একটি বাঁধের ওপর একটি কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। ঢাকার কুকুরগুলো নাটকীয়ভাবে দেহটাকে মাংসমুক্ত করে ফেলেছে। বাঙালী জনতা এই ডোবাগুলোতে এক অদ্ভুত শান্ত ভঙ্গিমায় চলাচল করছে। এখানে তাদেরকে ক্রোধান্বিত মনে হয় না। অন্যত্র তারা ক্রোধোমও। কিন্তু এখানে তারা হাঁটছে, মৃদু ফিসফিস করে কথা বলছে, তারা যেন গীর্জা পরিদর্শনরত পর্যটক।’ (বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য, মেজর রফিকুল ইসলাম, পিএসসি, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯২)।

বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ল্যান্ডস্কেপ পুরোপুরি ধ্বংস করার ঘৃণ্য চক্রান্তের অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। এর পেছনে মূলত কাজ করেছে হানাদারদের ইন্টেলেকচুয়াল ইনটলারেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক অসহিষ্ণুতা। তাদের কাছে এটি পরিষ্কার ছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করতে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 

ভাষার প্রশ্নে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত অগ্রগণ্য। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ পালন বাঙালি সংস্কৃতিচেতনা বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন আরেক বাঁকবদল। কারণ, এটি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। রাজনৈতিক সচেতনতা পরিস্ফুটন, স্বাধীনতাসংগ্রামকে সফল করতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৯৬৭ সালে জেনারেল আইয়ুব খান রবীন্দ্রসংগীতবিরোধী অবস্থান নিলে পূর্ব বাংলার প্রগতিশীল অংশ এর তীব্র প্রতিবাদ করে। এ আন্দোলন বাঙালির সংস্কৃতি ও স্বাধিকার চেতনা জাগিয়ে তোলে। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিকেরা এ আন্দোলনে অংশ নেন। 

এভাবে পূর্ব বাংলার বিদ্বৎসমাজের হাতে বাঙালি সংস্কৃতির এক স্বতন্ত্র স্বরূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল, যা ছিল মূল সমন্বয়বাদ। সব ধর্ম, মত ও পথের মিলনে গড়ে উঠছিল বাঙালি সংস্কৃতির বহমান ধারা, যার ভেতর ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিচয়। এ সূত্রপাত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার প্রশ্ন ছিল না, এর পেছনে ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণও। 

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনজাত স্বরাজের স্বপ্ন বাঙালিকে তাড়িত করেছে দীর্ঘ সময়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দর্শনগত ভিত নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছিল এ দেশের বিদ্বৎসমাজের হাতে। কিন্তু সেই আলো বেশি জ্বলেনি। নানা পথ মাড়িয়ে আজ তা চোরাগলিতে ঢুকছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখলে ১৯৬০-এর দশকে রেহমান সোবহানের টু ইকোনমিক থিওরি বা দুই অর্থনৈতিক তত্ত্বে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ বৈষম্য পূর্ব বাংলার মানুষকে দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করে। মানুষ মুক্তিপিপাসু হয়ে ওঠে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা প্রণয়নে আবুল মনসুর আহমদ, রেহমান সোবহান, ড. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক নূরুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একুশ দফা, সত্তরের নির্বাচনসহ নানা আন্দোলনে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, লেখক, চিকিৎসক ও প্রকৌশলী, সংস্কৃতিকর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা পাকিস্তানি সেনাদের নজরের বাইরে ছিল না। বিশেষ দেশাত্মবোধক গান, নাটক, কথিকা, স্লোগান এ দেশের মানুষের মুক্তি আন্দোলনে ছিল দারুণ অনুপ্রেরণা। 

পূর্ব বাংলার বিদ্বৎসমাজ মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তাকে যৌক্তিক করে তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি বিশ্লেষণাত্মক জনমানস গঠনের মাধ্যমে মুক্তি বা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নির্মাণ করেছে। আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে নানামুখী কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালনা করেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বিদ্বৎসমাজের সম্পর্ক ছিল মিথোজীবিক। এক পক্ষ (বিদ্বৎসমাজ) মুক্তির আকাঙ্ক্ষার সোপান গেড়েছে, অন্য পক্ষ (রাজনৈতিক পক্ষ) পথ দেখিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। 

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতে অবস্থান করলেও বুদ্ধিজীবীদের বিপুল অংশ থেকে যান স্বদেশে। থেকে যান জীবনের পূর্ণ ঝুঁকি নিয়ে। এ জন্য তাঁদের অশেষ মূল্য দিতে হয়। তাঁরা ত্যাগের মহিমা রেখে গেছেন।  

কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর ‘বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ’ অভিধানে ‘দেশ’ শব্দের অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নিশানা’ বা ‘গন্তব্য’। অর্থাৎ মানুষ জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পেলে যেদিকে যাবে, সেটিই তার দেশ। দেশের নিশানা নির্মাণকারী বিদ্বৎসমাজ। বিদ্বৎসমাজকে নিঃশেষ করা গেলে দেশকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা কঠিন নয়। পাকিস্তানিদের ভেতর জাত্যভিমান ছিল। নিজেদের পবিত্র ভাবত আর অন্যদের আলাদা করতে চাইত। বাঙালি সংস্কৃতিকে তারা হিন্দু সংস্কৃতির উপজাত ভাবত। এমন ঘৃণ্য একটি বোধ থেকে তারা নিধনে নামে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। 

এগুলো স্বাভাবিক হত্যাকাণ্ড ছিল না। বুদ্ধিজীবীদের যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ধরনে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সমাজের গুণীজনদের ঘিরে মানুষের ভেতরে শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হাজার হাজার মানুষকে সংক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। কারণ, সৃজনশীল, গুণী ব্যক্তিদের আদর্শে জন্ম নেয় অনেক ভাবাদর্শিক মানুষ। একজন সৃজনশীল, গুণী ব্যক্তিকে হত্যা করা মানে অসংখ্য মানুষের অনুভূতিকে খুন করা। বুদ্ধিজীবীদের কেবল নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, তাঁদের পরিচয়হীন করে তোলা হয়েছিল। স্বজনেরা লাশ পর্যন্ত চিনতে পারেননি। স্পর্শ করতে পারেননি। বধ্যভূমিতে একসঙ্গে অনেকের জায়গা হয়েছিল। জীবন কখনো কখনো বিভক্ত করে, কিন্তু মৃত্যু সম্মিলিত করে।

এই হত্যাযজ্ঞের মূল কুশীলব এ এ কে নিয়াজি বা রাও ফরমান আলীসহ আলবদর ও আলশামস থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমাও চায়নি! বরং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ‘দুবার সমাধান’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশকে ‘হৃদয় পরিষ্কার’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মৃত্যু শেষ কথা নয়, মৃত্যুর ভেতর থাকে নতুন প্রাণ, নতুন বার্তা। আমাদের অগ্রজেরা সেই নমুনা রেখে গেছেন। স্বাধীন, সার্বভৌম ও মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

‘মরণের হাত ধরে স্বপ্ন ছাড়া কে বাঁচিতে পারে।’ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা!

লেখক: যোগাযোগ পেশাজীবী ও শিক্ষক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র র জন ত ক স ব ধ নত উল ল খ র ভ তর প রক শ এ হত য

এছাড়াও পড়ুন:

শাহবাগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শন

১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী ‘লাইভ পারফর্ম: প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শিত হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাপরিসর নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।

প্রদর্শনীতে মুখ বাঁধা, শরীরে ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন নিয়ে একদল নাট্যকর্মী অংশ নেন। তাতে প্রতীকী এক বধ্যভূমি তৈরি করা হয়। যেখানে পড়ে ছিল নারী-শিশুসহ অনেক মানুষের লাশের স্তূপ। প্রদর্শনীর সময় আবহ সংগীত ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’; ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’; ‘রাজাকার আলবদর কিছুই রবে না রে’ গানগুলো বাজানো হয়।

প্রদর্শনীতে প্রতীকী ওই বধ্যভূমির দুই পাশের দুটি সাইনবোর্ডে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের নাম লেখা ছিল। তাতে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রাও ফরমান আলী, দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী হিসেবে আলবদর, তৎকালীন ছাত্রসংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবির) পরিচালিত পাকিস্তান সরকারের মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোগী বাহিনীর কথা লেখা। আর নাজিম-ই আলা (প্রধান) হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী, সেকেন্ড ইন কমান্ড আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নাম লেখা।

ওই বোর্ড দুটির অপারেশন পরিচালনা অংশে লেখা ছিল পুরো অপারেশনে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আলবদরের কমান্ডার এ বি এম খালেক মজুমদার, অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন, হাইকমান্ড সদস্য ও বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খান (ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং আলবদর বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় সদস্য), সদস্য আবদুল খালেক, মাওলানা আবদুল মান্নান ও শওকত ইমরানের নামে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রদর্শনীর বিষয়ে বাংলাপরিসরের সম্পাদক দীপান্ত রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল (রোববার) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এই প্রতীকী বধ্যভূমি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের বর্বরতা কেমন ছিল, তা মনে করিয়ে দিতেই এ আয়োজন। যেটুকু প্রদর্শন করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কঠিন এবং অনেক বর্বর ছিল সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি।’

দীপান্ত রায়হান আরও বলেন, ‘১৪ কিংবা ১৬ ডিসেম্বরসহ আমাদের জাতীয় দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে যে ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আগে পরিচালিত হতো, সেটি অনেকাংশে কমে গেছে। শিল্পীদের মধ্যে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি ঢুকে গেছে। এই আয়োজনেও শিল্পীরা আসতে অনেকে ভয় পেয়েছেন। অনেকেই আজকে হামলা হতে পারে এই ভয়ে অংশগ্রহণ করেননি। এই ভয়ের সংস্কৃতিটাকেও কাটতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা তোমাদের ভুলব না
  • শাহবাগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শন