সংস্কারের উদ্দেশ্য ভালো না হলে তার ভবিষ্যৎ নেই: রেহমান সোবহান
Published: 14th, December 2025 GMT
অতীত অভিজ্ঞতার ওপর দৃষ্টিপাত করে রাষ্ট্র সংস্কারের পরিকল্পনার চেয়ে তা বাস্তবায়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। আবার সংস্কারের উদ্দেশ্য যদি ভালো না হয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎও থাকবে না বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং তা পূরণের উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে আজ রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে সংস্কার নিয়ে কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের ‘রিফর্ম ট্র্যাকার’ উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা চলে। এরপর সমাপনী বক্তব্য দেন রেহমান সোবহান।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে জুলাই সনদ। সংবিধানসহ রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও হবে।
বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সবকিছুই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে। বাস্তবে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা হলো বাস্তবায়নের ব্যর্থতার ইতিহাস। তিনি জোর দিয়েই বলেন, যত সংস্কার প্রস্তাবই টেবিলে রাখা হোক না কেন, যদি উদ্দেশ্য ভালো না হয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধই হবে।
এ সময় সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে ফেরার পর্বে ১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নিজের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন (ইসি), এমনকি কোনো ক্ষেত্রেই কোনো সংস্কার করিনি। আমরা তখন অস্ত্রধারী লোকদের কাছ থেকে অস্ত্রও সংগ্রহ করতে পারিনি। সবকিছুই নির্ভর করেছিল প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সৎ উদ্দেশ্যের ওপর।’
উদ্বোধন হয়েছে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ‘রিফর্ম ট্র্যাকার’। এই ওয়েবসাইটে সংস্কারের খাতভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য, সংস্কারবিষয়ক নথি ও দলিল, কোন সংস্কারের কতটুকু বাস্তবায়ন হলো, সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা—এসব তথ্য পাওয়া যাবে।সেই অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরাও স্বাধীনভাবে নির্বাচিত ছিলেন না জানিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট দ্বারা মনোনীত ছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সততা ও একাগ্রতা ছিল বলেই সম্ভবত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা গিয়েছিল; যেখানে বন্দী থাকা সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদও তাঁর দল নিয়ে নির্বাচন করতে পেরেছিলেন এবং পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ রোববার নাগরিক প্ল্যাটফর্মের রিফর্ম ট্র্যাকার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উদ দ শ য উপদ ষ ট র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের তামাশা
মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় পর্যন্ত পাকিস্তানিরা আশা করেছিল, চীন হয়তো তাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের চীন সফরে মধ্যস্থতা করে তাদের সেই আশা আরও প্রবল হয়েছিল। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য ও শেষ পর্যন্ত প্রবল আশা ছিল, যা তারা প্রকাশ্যে দেখাচ্ছিল, তা হলো চীন শেষ পর্যন্ত তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু এটি ছিল একটি তামাশা। কারণ, চীনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা সামরিকভাবে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না। সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা দেবে।
রোববার দ্য ডেইলি স্টার মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক ইতিহাস’ শীর্ষক আলোচনায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান এই মন্তব্য করেন।
ডেইলি স্টার ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় ও ব্যক্তির অবদান তুলে ধরতে ‘ইতিহাস আড্ডা’ শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার আয়োজন করেছে। এটি ছিল সপ্তম আয়োজন। কবি ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক ছিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ। অসুস্থতার কারণে আরেক আলোচক গবেষক–সাংবাদিক মঈদুল হাসান আসতে পারেননি।
চীনের তামাশা, যুক্তরাষ্ট্রের নাটকঅধ্যাপক রেহমান সোবহান মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, চীন পাকিস্তানের সঙ্গে যে তামাশা করছিল, সেই নাটক সাজিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চীনকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যেন তারা যুদ্ধে যোগ দেয়। চীন যখন যুদ্ধে আসছিল না, তখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর হুমকি দেয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের নৌবহরকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি লক্ষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সপ্তম নৌবহর আর আসেনি। এর পরিণতিতেই নিয়াজির চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান।
‘মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক ইতিহাস’ শীর্ষক ইতিহাস আড্ডায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান। রোববার দ্য ডেইলি স্টার মিলনায়তনে