আনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত যেন একাত্তরের আনা ফ্রাঙ্কের দিনলিপি। লেখক ২৫ মার্চের কালরাত পেরোতে পারলেও ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাযজ্ঞ পেরোতে পারেননি। নিয়তি যেন তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অমর এই উপাখ্যান লিখিয়ে নেবে বলেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে এই উপন্যাসটি তিনি লিখতে শুরু করেন। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের সহযোগী আলবদর বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
রোববারে সকালে গোপনে কয়েকজন সাংবাদিক সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে শহরের অবস্থা দেখতে বেরিয়েছিলেন। তাঁরাই শিল্পী আমনকে উদ্ধার করেন। অতঃপর হাসপাতালে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর সংজ্ঞা ফিরেছে, কিন্তু মনের স্বাভাবিকতা ফেরেনি। একসময় কখন তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছেন কেউ তা টের পায়নি। এখন তিনি পথে পথে মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে উঠছেন, হাম গোলি করে গা, গোলি খায়ে গা।
আমার ছেলেমেয়েদের তোমরা গুলি করেছ, আমিও তোমাদের গুলি করব; আমার ছেলেমেয়েরা গুলি খেয়েছে, আমিও গুলি খাব, আমাকেও তোমরা গুলি করো—এসব কথা কি পাগলের কথা? তবু এখন শিল্পী আমনকে সবাই পাগল ঠাওরাচ্ছে এবং এড়িয়ে চলছে।
অবশ্যই আমনের সব ইতিবৃত্ত সুদীপ্ত জানতেন না। কেবল তাঁর মনে হচ্ছিল, সত্যিই একটা সাংঘাতিক কিছু ভদ্রলোকের জীবনে ঘটেছে, যে কারণে তিনি এমন ভারসাম্য হারিয়েছেন আজ। কী সেটা? যা–ই হোক, সে নিয়ে কিছু ভাবার সময় এখন নেই। এখন কিছু করতে হয়। কিন্তু কী করা যায়! সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে যাওয়া যায়। বাসায়? তিনি এখন যেখানে আছেন সেখানে? সেখানে পথের পাগল নিয়ে ওঠাবেন। কেন ওঠাবেন না। আমনের মতো চিত্রশিল্পী কি কোনো দেশে দলে দলে গজায়? তা ছাড়া তিনি একজন মানুষ তো। বিপদের সময় মানুষের জন্য তো মানুষকেই এগোতে হয়। সুদীপ্ত আমনের একখানি হাত ধরলেন—
‘আপনি চলুন আমার সঙ্গে। আমি আপনাকে দেব গুলি খেতে।’
‘তোম উল্লু হ্যায়। তোমহারা সঙ্গে মে গুলি নেহি হ্যায়।’
গুলি যাদের সঙ্গে থাকে শহরে তাদের অভাব ছিল। চারদিকে নল উঁচিয়ে কত গাড়িই তো যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়ই একটা যাচ্ছিল পাশের পথ দিয়ে। সহসা আমন সুদীপ্তকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন এবং দুহাত তুলে চিৎকার করে উঠলেন—
‘হাম গোলি করে গা। গোলি খায়ে গা।’
ফুটপাতের পাশে লোহার রেলিংয়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে আমন তাঁর প্রাণপণ শক্তিতে হাতের আধখানা ইট ছুড়ে মারতে চাইলেন। কিন্তু তার আগেই সৈনিকদের গুলি খেয়ে তিনি লুটিয়ে পড়লেন রেলিংয়ের পাশে। তাঁর হাতের আধখানা ইট ছিটকে পড়ল তাঁরই নাকের কাছে।
আনোয়ার পাশা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মারণাস্ত্রের ছায়ার নিচে
আনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত যেন একাত্তরের আনা ফ্রাঙ্কের দিনলিপি। লেখক ২৫ মার্চের কালরাত পেরোতে পারলেও ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাযজ্ঞ পেরোতে পারেননি। নিয়তি যেন তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অমর এই উপাখ্যান লিখিয়ে নেবে বলেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে এই উপন্যাসটি তিনি লিখতে শুরু করেন। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের সহযোগী আলবদর বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
রোববারে সকালে গোপনে কয়েকজন সাংবাদিক সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে শহরের অবস্থা দেখতে বেরিয়েছিলেন। তাঁরাই শিল্পী আমনকে উদ্ধার করেন। অতঃপর হাসপাতালে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর সংজ্ঞা ফিরেছে, কিন্তু মনের স্বাভাবিকতা ফেরেনি। একসময় কখন তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছেন কেউ তা টের পায়নি। এখন তিনি পথে পথে মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে উঠছেন, হাম গোলি করে গা, গোলি খায়ে গা।
আমার ছেলেমেয়েদের তোমরা গুলি করেছ, আমিও তোমাদের গুলি করব; আমার ছেলেমেয়েরা গুলি খেয়েছে, আমিও গুলি খাব, আমাকেও তোমরা গুলি করো—এসব কথা কি পাগলের কথা? তবু এখন শিল্পী আমনকে সবাই পাগল ঠাওরাচ্ছে এবং এড়িয়ে চলছে।
অবশ্যই আমনের সব ইতিবৃত্ত সুদীপ্ত জানতেন না। কেবল তাঁর মনে হচ্ছিল, সত্যিই একটা সাংঘাতিক কিছু ভদ্রলোকের জীবনে ঘটেছে, যে কারণে তিনি এমন ভারসাম্য হারিয়েছেন আজ। কী সেটা? যা–ই হোক, সে নিয়ে কিছু ভাবার সময় এখন নেই। এখন কিছু করতে হয়। কিন্তু কী করা যায়! সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে যাওয়া যায়। বাসায়? তিনি এখন যেখানে আছেন সেখানে? সেখানে পথের পাগল নিয়ে ওঠাবেন। কেন ওঠাবেন না। আমনের মতো চিত্রশিল্পী কি কোনো দেশে দলে দলে গজায়? তা ছাড়া তিনি একজন মানুষ তো। বিপদের সময় মানুষের জন্য তো মানুষকেই এগোতে হয়। সুদীপ্ত আমনের একখানি হাত ধরলেন—
‘আপনি চলুন আমার সঙ্গে। আমি আপনাকে দেব গুলি খেতে।’
‘তোম উল্লু হ্যায়। তোমহারা সঙ্গে মে গুলি নেহি হ্যায়।’
গুলি যাদের সঙ্গে থাকে শহরে তাদের অভাব ছিল। চারদিকে নল উঁচিয়ে কত গাড়িই তো যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়ই একটা যাচ্ছিল পাশের পথ দিয়ে। সহসা আমন সুদীপ্তকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন এবং দুহাত তুলে চিৎকার করে উঠলেন—
‘হাম গোলি করে গা। গোলি খায়ে গা।’
ফুটপাতের পাশে লোহার রেলিংয়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে আমন তাঁর প্রাণপণ শক্তিতে হাতের আধখানা ইট ছুড়ে মারতে চাইলেন। কিন্তু তার আগেই সৈনিকদের গুলি খেয়ে তিনি লুটিয়ে পড়লেন রেলিংয়ের পাশে। তাঁর হাতের আধখানা ইট ছিটকে পড়ল তাঁরই নাকের কাছে।
আনোয়ার পাশা