ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো
Published: 14th, December 2025 GMT
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে মারধর, অপহরণচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আজ রোববার বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে এ মামলায় তুরিনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ আজ অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তুরিন আফরোজকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের উদ্দেশে হাজতখানা থেকে বের করা হয়। এ সময় তাঁর দুই পাশে দুই হাত ধরে রাখেন পুলিশের নারী সদস্যরা। সামনে ও পেছনে ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য। নবম তলার ৩২ নম্বর আদালতে তোলার সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। আদালতের কাঠগড়ায় তোলার সময় তাঁর মাথার হেলমেট খুলে রাখা হয়। বিচারের জন্য অপেক্ষাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পরে জানানো হয়, ৩৩ নম্বর আদালতে শুনানি হবে। আবারও হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে ৩৩ নম্বর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী হাসিখুশির কারণ জানতে চেয়ে দূর থেকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে আদালতে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
পরে বিচারকের অনুমতি নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ ২০২২ সালের। অভিযোগ আনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন বছর পর কীভাবে তিনি প্রভাব খাটাবেন? তখন তো তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতাই নেই।
আইনজীবী বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ, জামিন পেলে পলাতক হবেন না। যেকোনো শর্তে তাঁর জামিন আবেদন করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো.
শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই দুটি বাস কেনার জন্য বাদীর সঙ্গে ৭৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন আসামি তুরিন আফরোজ। এরপর আসামি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকা ২৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে বাস দুটি নিয়ে যান। পরে আসামি কোনো কিস্তির টাকা পরিশোধ না করে বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং মারধর করে পেশার প্রভাব দেখান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাদী আসামির কাছে আবার টাকা চাইলে আসামির নির্দেশে ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতানামা সন্ত্রাসী বাদীর বাসায় গিয়ে বাদীকে অস্ত্রের মুখে মারধর করেন এবং বাদীর সাত বছরের কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ওই সময় বাদী ৯৯৯–এ কল দিলে পুলিশের উপস্থিতিতে বাদীর কন্যাসন্তানকে বাসার বাইরে রেখে যান।
ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল নাবিশা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আলম নাহিদ বাদী হয়ে অপহরণচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন।
গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এর পর থেকে তিনি কারাগারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন তুরিন আফরোজ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ন আফর জ ২০২২ স ল আইনজ ব পর শ ধ ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গ্রেপ্তার
ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ইরানের নিরাপত্তা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করেছেন। নার্গিসের ভাই মেহদির বরাতে ‘নার্গিস ফাউন্ডেশন’ এ খবর জানিয়েছে।
প্যারিসভিত্তিক নার্গিস ফাউন্ডেশন জানায়, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নার্গিস মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তার করেছেন। আইনজীবী খোসরো আলিকোরদির স্মরণসভা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খোসরো ইরানের একজন সুপরিচিত আইনজীবী। সম্প্রতি নিজের কার্যালয় থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, নার্গিসের স্বামী প্যারিসপ্রবাসী তাঘি রাহমানিও তাঁর স্ত্রীর গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে খোসরো আলিকোরদির স্মরণসভা থেকে নার্গিসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের আরেকজন মানবাধিকারকর্মী সেপিদেহ বাহলিয়ানকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
নার্গিস মোহাম্মদি ২০২৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। দুই দশকের বেশির ভাগ সময় তিনি তেহরানের এভিন কারাগারে কাটিয়েছেন।
জাতীয় নিরাপত্তাবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগে নার্গিসের মোট ৩১ বছর সাজা হয়েছে। মানবাধিকারের বিষয়ে কারাগারে থেকেও উচ্চকণ্ঠ ছিলেন নার্গিস। ২০২৪ সালের নভেম্বরে নার্গিসের অস্ত্রোপচার হয়। তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশের একটি হাড় থেকে টিউমারসদৃশ ক্ষত অপসারণের জন্য ওই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা এটিকে ক্যানসার বলে আশঙ্কা করেছিলেন। অস্ত্রোপচারের পরের মাসে তাঁর সাজা তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছিল কর্তৃপক্ষ। এরপর ধারণা করা হচ্ছিল, নার্গিসকে দ্রুত কারাগারে ফিরতে হবে। তবে তাঁকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।