হাদিকে জড়িয়ে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেরর অভিযোগে মামলার আবেদন
Published: 14th, December 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী মির্জা আব্বাসের কাছে চাঁদা দাবি ও মানহানির অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। তাতে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে দৈনিক আজকের কণ্ঠ ও পত্রিকাটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাডমিনসহ অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের। অভিযোগ করা হয়েছে, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় মির্জা আব্বাসকে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রোববার ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান ভূঁইয়া এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা–৮ আসনে সম্ভাব৵ স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হওয়ার পর একই আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন আসামিরা।
অভিযোগে বলা হয়, হাদির গুলিবিদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মির্জা আব্বাসের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত চরিত্র ও আচরণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ উদ্দেশ্যে ১২ ডিসেম্বর বেলা ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে দৈনিক আজকের কণ্ঠ নামের অনলাইন পোর্টালে ‘মির্জা আব্বাসের ক্যাডারদের গুলিতে ওসমান হাদি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মির্জা আব্বাসের ব্যক্তিগত চরিত্র ও আচরণ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে মামলার আরজিতে বলা হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গত শুক্রবার ঢাকার বিজয়নগরে গুলি করে পালিয়ে যায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ব্যক্তি। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদি এখন হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তাঁর ওপর হামলাকারী হিসেবে একজনকে চিহ্নিত করে তাঁর তথ্য পেতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার।
আরও পড়ুনওসমান হাদির ওপর হামলা বৃহৎ চক্রান্তের ক্ষুদ্র অংশ: মির্জা আব্বাস১৩ ডিসেম্বর ২০২৫আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ব্যাহত করতেই ওসমান হাদির ওপর এই হামলা হয়েছে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপিও গতকাল সমাবেশ করেছে। সেখানে মির্জা আব্বাস বক্তব্যও দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ দ র ওপর ওসম ন হ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে মারধর, অপহরণচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আজ রোববার বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে এ মামলায় তুরিনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ আজ অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তুরিন আফরোজকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের উদ্দেশে হাজতখানা থেকে বের করা হয়। এ সময় তাঁর দুই পাশে দুই হাত ধরে রাখেন পুলিশের নারী সদস্যরা। সামনে ও পেছনে ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য। নবম তলার ৩২ নম্বর আদালতে তোলার সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। আদালতের কাঠগড়ায় তোলার সময় তাঁর মাথার হেলমেট খুলে রাখা হয়। বিচারের জন্য অপেক্ষাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পরে জানানো হয়, ৩৩ নম্বর আদালতে শুনানি হবে। আবারও হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে ৩৩ নম্বর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী হাসিখুশির কারণ জানতে চেয়ে দূর থেকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে আদালতে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
পরে বিচারকের অনুমতি নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ ২০২২ সালের। অভিযোগ আনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন বছর পর কীভাবে তিনি প্রভাব খাটাবেন? তখন তো তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতাই নেই।
আইনজীবী বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ, জামিন পেলে পলাতক হবেন না। যেকোনো শর্তে তাঁর জামিন আবেদন করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, তুরিন আফরোজ বাদীর কাছ থেকে ৭৮ লাখ টাকায় দুটি বাস কিনেছেন। কিন্তু সব টাকা পরিশোধ না করে বাস নিয়ে যান। বাকি টাকা চাইতে গেলে তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রভাব খাটিয়ে বাদীকে হুমকি দেন এবং বাদীর বাসায় গিয়ে ভাঙচুরের পর তাঁর মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা করেন।
শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই দুটি বাস কেনার জন্য বাদীর সঙ্গে ৭৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন আসামি তুরিন আফরোজ। এরপর আসামি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকা ২৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে বাস দুটি নিয়ে যান। পরে আসামি কোনো কিস্তির টাকা পরিশোধ না করে বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং মারধর করে পেশার প্রভাব দেখান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাদী আসামির কাছে আবার টাকা চাইলে আসামির নির্দেশে ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতানামা সন্ত্রাসী বাদীর বাসায় গিয়ে বাদীকে অস্ত্রের মুখে মারধর করেন এবং বাদীর সাত বছরের কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ওই সময় বাদী ৯৯৯–এ কল দিলে পুলিশের উপস্থিতিতে বাদীর কন্যাসন্তানকে বাসার বাইরে রেখে যান।
ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল নাবিশা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আলম নাহিদ বাদী হয়ে অপহরণচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন।
গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এর পর থেকে তিনি কারাগারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন তুরিন আফরোজ।