Prothomalo:
2025-12-14@20:56:30 GMT

আমরা তোমাদের ভুলব না

Published: 14th, December 2025 GMT

একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এই ভূখণ্ডে ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। সেই রাত থেকে আমাদের দীর্ঘ দুই দশকের সংগ্রাম সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হলো এবং পাকিস্তান সরকার ও বাহিনী হয়ে গেল দখলদার হানাদার প্রতিপক্ষ। জাতি সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে গেল, যে যুদ্ধ চলেছিল ৯ মাস ধরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন পর্যন্ত।

হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যার মূল লক্ষ্য ছিল তিন ধরনের নাগরিক—আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক, প্রগতিশীল শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং ঢালাওভাবে হিন্দু জনগোষ্ঠী। এ ছাড়া তাদের সন্দেহভাজন ছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র এবং দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। প্রথম দিকে তাঁরা সবাই দেখামাত্র গুলির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে দেশের প্রায় সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে ওঠায় তাদের দখলদারি কায়েম সহজ হয়নি। এপ্রিল নাগাদ যখন প্রতিরোধকারী সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কৌশল নির্ধারণে মনোযোগী হলেন, সেই সুযোগে হানাদার বাহিনী সারা দেশে দখল বিস্তার করতে পেরেছিল। তদুপরি এর মধ্যে গণহত্যার খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় হামলা ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পাকিস্তানের ওপর তার পশ্চিমা মিত্রদের চাপ বাড়ছিল।

তত দিনে অবশ্য প্রবাসে বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিল। হত্যা, ধ্বংস ও আক্রমণের শিকার হিন্দু-মুসলিম জনমানুষ বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে শুরু করেছিল। তখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী হয়ে ঢুকেছেন। তখন বাংলাদেশের পক্ষে এক অভূতপূর্ব বাঙালি ভাবাবেগের জোয়ার উঠেছিল, যা বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসবাসকারী বাঙালিমাত্রকেই স্পর্শ করেছিল। বলা বাহুল্য, এই আবেগের অনুঘটকের কাজ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ।

ভারত সরকার ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যের জনমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং ক্রমেই প্রবাসী সরকারের কর্মকাণ্ড ও গেরিলা যোদ্ধাদের সাফল্যে বাংলাদেশের জোয়ার হয়ে ওঠে বাস্তব ও অপ্রতিরোধ্য। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষসহ সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন মিলেছিল। ফলে পাকিস্তানের সামরিক শাসকের ওপর হামলা ও হত্যা বন্ধে চাপ কেবলই বেড়েছে। এর মধ্যে প্রবাসী সেক্টর কমান্ডাররা মুক্তিবাহিনী গুছিয়ে নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। নানা অঞ্চলে স্থানীয় সশস্ত্র প্রতিরোধ ও সংগ্রামও অব্যাহত থাকল। গেরিলারা দেশে প্রবেশ করে তাদের অভিযান শুরু করেছে।

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের ভেতর দিয়ে জন্ম নিয়েছে একটি জাতি, একটি দেশ।.

.. প্রত্যেক শহীদের জীবনের অন্তিম অধ্যায়ের রক্তিম আখর দিয়েই আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায়টি সাজানো, এ কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।

এমন পটভূমিতে পাকিস্তানের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়নি। আবার শুরুর দিকের মতো প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে তারা এদেশীয় দোসর খুঁজে নিতে শুরু করল। দখলদার সরকারের উদ্যোগে শান্তি কমিটি গঠিত হলো। জাতীয় পর্যায় থেকে থানা (বর্তমান উপজেলা) পর্যন্ত এর শাখা ও কার্যক্রম বিস্তৃত হলো। এই কমিটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরুদ্দিন, জামায়াতের নেতা গোলাম আযম, শফিকুল ইসলাম, পীর মোহসেন উদ্দিন, মাহমুদ আলী প্রমুখ। তাঁরা সারা বছর ধরে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের স্তুতি এবং মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসী সরকারের তত্পরতাকে ভারতের ইন্ধনে সৃষ্ট অপকর্ম ও এসবের সমর্থনকে দেশদ্রোহ আখ্যায়িত করেছেন। শান্তি কমিটিতে পুরোনো মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, কৃষক-শ্রমিক পার্টি প্রভৃতি দলের নেতা-সমর্থকদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তত্কালীন পত্রপত্রিকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও সেনাসমর্থিত সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নূরুল আমীন, গোলাম আযম, খাজা খয়েরুদ্দিনসহ বিভিন্ন নেতার বৈঠক এবং পাকিস্তানের পক্ষে তাঁদের মিছিলসহ নানা তত্পরতার ছবি ছাপা হয়েছে। 

২.

যুদ্ধের চাপ ভেতরে ও সীমান্তে যত বেড়েছে, ততই দখলদার বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অভ্যন্তরীণ সমর্থন ঠেকানোর উপায় সন্ধান করতে হয়েছে। ফলে তারা বহির্বিশ্বকে শান্তি ও সমঝোতার উদ্যোগ দেখানোর জন্য শান্তি কমিটি গঠন করে চুপ থাকেনি, এর অন্তরালে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সমর্থক-সহায়ক জনগোষ্ঠীকে শায়েস্তা করার ব্যবস্থাও নিয়েছে। এ রকম পদক্ষেপ হিসেবেই তারা তাদের সমর্থক রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় বিভ্রান্ত তরুণদের নিয়ে গঠন করেছিল কয়েকটি সশস্ত্র দল—রাজাকার, আলবদর, আলশামস।

রাজাকার ছিল সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। সাধারণ মানুষ থেকে বাছাই করে স্বল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে একাত্তরে এরা মাঠে সবচেয়ে বেশি তত্পর ছিল। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রসংঘের কর্মীই ছিল নেতৃত্বে। এরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান, সম্ভাব্য অভিযান ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক–সহায়তাকারীদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করত নিকটবর্তী দখলদার ক্যাম্পে। এদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বারবার সংঘাতে জড়াতে হয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের প্রাথমিক ধকল সামলানোর জন্য এদের অগ্রবর্তী দল হিসেবে ব্যবহার করেছে। আবার প্রাপ্ত ক্ষমতার অপপ্রয়োগের কারণেও ওদের অনেকেই সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে খবর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে, জোর খাটিয়ে নারী হরণ, ধর্ষণ, সম্পদ লুণ্ঠন, নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে ও করিয়ে বহু নারী ও পুরুষের এবং বহু সংসার ও পরিবারের সর্বনাশ করেছে।

আলবদর বাহিনীকে সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন তত্কালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী। প্রতিটি জেলাতেই অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী তাদের তত্পরতাও অব্যাহত ছিল। নিউইয়র্ক টাইমস–এর সংবাদদাতা অ্যান্থনি লিউসের এক প্রতিবেদনে ডিসেম্বরে ঢাকার অদূরে অন্তত ২০০ জন নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীকে হত্যার বিবরণ ছিল। দ্য টাইমস–এর পিটার হ্যাজেলহার্স্টও একই রকম তথ্য তাঁর পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমেও বুদ্ধিজীবী হত্যার এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর রাও ফরমান আলীর দপ্তরে হত্যার জন্য প্রণীত ৪০০ জনের একটি তালিকা পাওয়া গিয়েছিল। এমন তালিকার সন্ধান আরও কয়েকটি জেলায়ও পাওয়া গিয়েছিল।

আলবদর সদস্যরা চরম আঘাত হেনেছিল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে, যখন পূর্ব রণাঙ্গনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর সঙ্গে দখলদার বাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধের শেষ অধ্যায় চলছিল। তখন আদতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এ যুদ্ধে পাকিস্তানের নিশ্চিত পরাজয় ঘটতে চলেছে। বিজয়ের আগের সপ্তাহজুড়ে মূলত দেশীয় দোসরদের হাতেই ইতিহাসের মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে। এই কয়েক দিনে আলবদর বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিত্সক, বিজ্ঞানী, সাংবাদিকসহ দেশসেরা বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে রায়েরবাজার ও অন্যান্য বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে পরাজিত শক্তি উদীয়মান রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করার জন্যই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তবে পাকিস্তানের পতন দ্রুততর হওয়ায় তাদের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু যা হয়েছে, সে ক্ষতি তো অপূরণীয়।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ও সমাপ্তিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়েই তাদের আসল লক্ষ্য স্পষ্ট করে দিয়েছিল। সূচনায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল, হত্যা করেছিল শিক্ষক-ছাত্রদের। আর সারা বছর চালু রেখেছিল জাতির যোগ্য মানুষদের নির্মূল করার কাজ, যা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল বিজয়ের পূর্ববর্তী কয়েক দিনে। তবে তাদের সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়েছিল, ব্যর্থ হয়েছিল জনমানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মধ্য দিয়ে।

৩.

দীর্ঘ ৫৪ বছরের ব্যবধানে এবং ক্ষমতার উত্থান-পতন, ইতিহাসের বাঁকবদল বা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের নানা পরিবর্তনের ফলে একাত্তরের শহীদদের নিয়ে ভাবাবেগ অনেকটাই কাগুজে কথায় পর্যবসিত হয়েছে। এ কথা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কেও খাটে। অথচ প্রতিটি মৃত্যুই কেবল একজন ব্যক্তির জীবনাবসান ঘটায় না, এর সঙ্গে যুক্ত ইতিহাসকে কখনো অর্থপূর্ণ করে তোলে, কখনো বা সংকটের আবর্তে ফেলে দেয়। তাই মৃত্যু কখন হত্যাকাণ্ডের পরিবর্তে আত্মোত্সর্গে উন্নীত হয়, তা বোঝা ও মনে রাখা জরুরি।

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের ভেতর দিয়ে জন্ম নিয়েছে একটি জাতি, একটি দেশ। তাই দেশবাসীর কাছে এ কেবল সংখ্যার বিষয় নয়, কিছু নামোচ্চারণের ব্যাপার নয়, এটি ধারাবাহিক নির্মমতার বিন্দু বিন্দু মুহূর্তের সমাহারে সৃষ্ট আত্মত্যাগের এক অমর দৃষ্টান্ত। প্রত্যেক শহীদের জীবনের অন্তিম অধ্যায়ের রক্তিম আখর দিয়েই আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায়টি সাজানো, এ কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।

বিস্মৃতিপ্রবণ জাতিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবীরা কী নির্মম অত্যাচার-নিপীড়নের ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য একটু দৃষ্টান্ত তুলে ধরব শহীদ জননী জাহানারা ইমামের অবিস্মরণীয় গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি থেকে। শহীদ আলতাফ মাহমুদ কেবল একুশের চিরায়ত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র সুরকারই নন, তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমীক সংগ্রামী সংগীতশিল্পী। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে ধরা পড়েছিলেন একদল তরুণ মুক্তিযোদ্ধা। বন্দী অবস্থায় কী হাল হয়েছিল, তা সহবন্দীদের কাছে শুনে জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ‘আলতাফ মাহমুদের গেঞ্জি বুকের কাছে রক্তে ভেজা, তার নাক–মুখে তখনো রক্ত লেগে রয়েছে, চোখ, ঠোঁট সব ফুলে গেছে, বাশারের বাঁহাতের কবজি ও কনুইয়ের মাঝামাঝি দুটো হাড়ই ভেঙেছে। ভেঙে নড়বড় করছে, একটা রুমাল দিয়ে কোনোমতে পেঁচিয়ে রেখেছে, সেই অবস্থাতে হাত দুটো পিছমোড়া করে বাঁধা। হাফিজের নাকে-মুখে রক্ত, মারের চোটে একটা চোখ গলে বেরিয়ে এসে গালের ওপর ঝুলছে। জুয়েলের এক মাস আগে জখম হওয়া আঙুল দুটো মিলিটারিরা ধরে পাটকাঠির মতো মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে।’

আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন দিন জীবিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। বিনা চিকিত্সায় যখন তিনি শয্যায় মুমূর্ষু, তখন তাঁর স্ত্রীর মনে হলো, কী যেন বলতে চাইছেন তিনি। কাছে এসে কান পেতে শোনেন, তিনি জ্বরের ঘোরে অস্ফুটস্বরে গাইছেন, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়...’।

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা প্রাণের ভয়কে জয় করে স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের সঙ্গী হয়েছেন। তাঁদের জীবন অক্ষয়, স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁদের ভুলতে পারে না। দেশপ্রেমীক মানুষের অন্তরে আজ ধ্বনিত হবে, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/ আমরা তোমাদের ভুলব না।’

লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র সশস ত র দখলদ র র জন য র রক ত র অন ত প রব স র জ বন কর ছ ল আম দ র হত য র হয় ছ ল র হত য র সমর সমর থ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শাহবাগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শন

১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী ‘লাইভ পারফর্ম: প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শিত হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাপরিসর নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।

প্রদর্শনীতে মুখ বাঁধা, শরীরে ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন নিয়ে একদল নাট্যকর্মী অংশ নেন। তাতে প্রতীকী এক বধ্যভূমি তৈরি করা হয়। যেখানে পড়ে ছিল নারী-শিশুসহ অনেক মানুষের লাশের স্তূপ। প্রদর্শনীর সময় আবহ সংগীত ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’; ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’; ‘রাজাকার আলবদর কিছুই রবে না রে’ গানগুলো বাজানো হয়।

প্রদর্শনীতে প্রতীকী ওই বধ্যভূমির দুই পাশের দুটি সাইনবোর্ডে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের নাম লেখা ছিল। তাতে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রাও ফরমান আলী, দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী হিসেবে আলবদর, তৎকালীন ছাত্রসংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবির) পরিচালিত পাকিস্তান সরকারের মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোগী বাহিনীর কথা লেখা। আর নাজিম-ই আলা (প্রধান) হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী, সেকেন্ড ইন কমান্ড আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নাম লেখা।

ওই বোর্ড দুটির অপারেশন পরিচালনা অংশে লেখা ছিল পুরো অপারেশনে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আলবদরের কমান্ডার এ বি এম খালেক মজুমদার, অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন, হাইকমান্ড সদস্য ও বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খান (ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং আলবদর বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় সদস্য), সদস্য আবদুল খালেক, মাওলানা আবদুল মান্নান ও শওকত ইমরানের নামে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রদর্শনীর বিষয়ে বাংলাপরিসরের সম্পাদক দীপান্ত রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল (রোববার) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এই প্রতীকী বধ্যভূমি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের বর্বরতা কেমন ছিল, তা মনে করিয়ে দিতেই এ আয়োজন। যেটুকু প্রদর্শন করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কঠিন এবং অনেক বর্বর ছিল সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি।’

দীপান্ত রায়হান আরও বলেন, ‘১৪ কিংবা ১৬ ডিসেম্বরসহ আমাদের জাতীয় দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে যে ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আগে পরিচালিত হতো, সেটি অনেকাংশে কমে গেছে। শিল্পীদের মধ্যে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি ঢুকে গেছে। এই আয়োজনেও শিল্পীরা আসতে অনেকে ভয় পেয়েছেন। অনেকেই আজকে হামলা হতে পারে এই ভয়ে অংশগ্রহণ করেননি। এই ভয়ের সংস্কৃতিটাকেও কাটতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মরণের হাত ধরে স্বপ্ন ছাড়া কে বাঁচিতে পারে’
  • শাহবাগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শন