ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জিম্মি করে লাঞ্ছিত করার চেষ্টার অভিযোগে অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাৎ হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাৎ হোসেনকে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত করা হয়। আজ রোববার সকালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শামীম আহম্মেদ এক চিঠিতে অ্যাম্বুলেন্সচালককে গত দুই মাসের রোগী পরিবহনের টাকা হাসপাতালের হিসাব বিভাগে জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করেন। একই চিঠিতে অবৈধভাবে শাহাদাতের দখলে রাখা হাসপাতালের কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে বলা হয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অ্যাম্বুলেন্সচালক হাতে লাঠি নিয়ে তত্ত্বাবধায়ককে হাসপাতালের সভাকক্ষে নিয়ে তালাবদ্ধ করে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালের কর্মচারী ও রোগীর স্বজনেরা অবরুদ্ধ তত্ত্বাবধায়ককে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাৎ হোসেনকে ধোলাই দেন। এ সময় হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে এসে শাহাদাৎ হোসেনকে আটক করে। এদিকে অ্যাম্বুলেন্স–সেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স মনিন্দ্র নাথ বলেন, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মানুষের জরুরি সেবায় জন্য দুটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। মহসিন নামের একজন চালক অনিয়মের দায়ে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এর পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন শাহাদাৎ। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের গ্যারেজে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের টুল বক্স থেকে ৩৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এ বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমাকে দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন করে আসছেন তত্ত্বাবধায়ক।’

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘মাদকাসক্ত অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাৎ হোসেনকে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত দুই মাসের রোগী পরিবহনের টাকা হাসপাতালের হিসাব বিভাগে জমা দিতে বলায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মনিরুজ্জামান বলেন, অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাৎ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ