রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভার প্রেজেন্টেশনে মুজিব বর্ষের লোগো ভেসে ওঠায় বিক্ষোভের মুখে সভা পণ্ড হয়ে গেছে। 

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেসকো আয়োজিত সভায় ‘সরকারি অর্থায়নে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল।

সভায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। 

সভা চলাকালে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনে একটি স্লাইডে মুজিববর্ষের লোগো ভেসে উঠলে উপস্থিত সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। অনেকে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে সভা বর্জন করেন এবং নেসকোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নেসকো কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক  ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ‘‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অথচ এখনও তার দোসররা মুজিববাদ কায়েমের চেষ্টা করছে। আমরা জেনেছি ২০২২ সালে প্রি-পেইড মিটার কেনার বিষয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। আমরা এগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানাই। সেই সাথে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’

রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড.

পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘‘প্রি-পেইড মিটার নিয়ে প্রেজেন্টেশনে বঙ্গবন্ধুর লোগো ব্যবহারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, নেসকোতে এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা ঘাপটি মেরে রয়েছে। আমরা এমন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানাই।’’

নেসকো রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘‘এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। এটা কীভাবে প্রেজেন্টেশনে আসলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

এদিকে ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বিষয়টি তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন। 

আমিরুল//

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ