ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের চারটি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পর মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিএনপির প্রার্থীরা প্রচার–প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেও জেলার তিনটি আসনে দলে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও মশালমিছিল করেছেন বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা।

অবশ্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমানের দাবি, ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর ত্যাগ রয়েছে। এ জন্য সবাই মনোনয়ন দৌড়ে অংশ নিচ্ছেন। চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়ায় সবাই প্রতিযোগিতা করছেন মাত্র, এটা গ্রুপিং নয়। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সবাই একসঙ্গে বিএনপির প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।

চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার–প্রচারণা চালিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী। দলীয় নেতা–কর্মীরা নানাভাবে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তিনটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, জাকের পার্টির তৎপরতা রয়েছে কয়েকটি আসনে। জেলায় ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রভাব থাকলেও এবার এখনো দলটির নির্বাচনী কার্যক্রম নেই।

কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী)

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুর রহমান (রানা)। এ নিয়ে দলে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে দুই উপজেলায় বিক্ষোভ ও মশালমিছিল করেছেন বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ইউনুস আলীর অনুসারীরা। তিনি বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) যুগ্ম মহাসচিব।

ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন যিনি পেয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেননি। এতে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে, সুশাসনের ব্যাঘাত ঘটেছে। এ বিষয়ে সাইফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে আনোয়ারুল ইসলামকে। তিনি এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। এনসিপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রচার চালাচ্ছেন দলের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক মো.

মাহফুজুল ইসলাম। এ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই মাস্টার নিজে মাইকিং করে প্রচার চালাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম-২ আসন (সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট)

বিএনপি থেকে আসনটিতে প্রার্থী হচ্ছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ। দলের অভ্যন্তরে কোন্দল না থাকায় স্বস্তিতে আছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রাম-২ আসন জাতীয় পার্টির দুর্গ মনে করা হলেও এখন মাঠপর্যায়ে দলটি ভোটারশূন্য হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার পর মাত্র একবার এই আসনে বিএনপি প্রার্থী সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এবার ভোটারদের উৎসাহ এবং বিএনপির প্রতি সমর্থন দেখে আমরা আশাবাদী যে এই আসন বিএনপির হবে।’

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী ইয়াসিন আলী। তিনি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘দুই বছর থেকে আমি জেলার বিভিন্ন স্থানে উঠান বৈঠক ও জনসংযোগ করছি। মাঠপর্যায়ে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

এনসিপির মনোনয়ন পাওয়া দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়ক আতিক মুজাহিদও আলোচনায় আছেন। তিনি উন্নয়নের নানা ভাবনা তুলে ধরে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘২৪–পরবর্তী সময়ে মানুষ দল নয়, যোগ্য প্রার্থী দেখে এবং বৈষম্যের তলানিতে থাকা কুড়িগ্রামের জন্য বরাদ্দ আদায় করে আনার যাঁর যোগ্যতা আছে, সেই মানুষকেই ক্ষমতায় চায়। আমরা সবাইকে নিয়ে বৈষম্যমুক্ত কুড়িগ্রাম গড়তে চাই।’

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে প্রচারে আছেন মো. নূর বখত। তিনি ইসলামী আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সহসভাপতি।

কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর)

বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে আসনটিতে প্রচারে নেমেছেন দলের সাবেক জেলা সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম। তিনি বিএনপির সাবেক ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত এ কে এম মাঈদুল ইসলামের ছোট ভাই। বিএনপির রংপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেকের সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সামনের সারির নেতা ছিলেন খালেক। দলের দুঃসময়ে মাঠেও ছিলেন তিনি।

অভ্যন্তরীণ এই বিরোধ তাসভীর উল ইসলামকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে দলীয় বিভক্তি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আসনটিতে ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আক্কাছ আলী সরকার। তিনি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘উলিপুর পিছিয়ে থাকা এলাকা। এখানে মানুষ এবার পরিবার নয়, প্রার্থীকে গুরুত্ব দেবে। আমি আশাবাদী।’

এ ছাড়া জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুল আলম সালেহী। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন মো. আবু সাঈদ জনি। গণ অধিকার পরিষদের নুরে এরশাদ সিদ্দিকীও প্রচার চালাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী-রাজীবপুর-চিলমারী)

প্রধান দুটি দল থেকে দুই ভাই প্রার্থী হওয়ায় কুড়িগ্রাম-৪ আসন নিয়ে জেলার ভোটের রাজনীতিতে নানা আলোচনা চলছে। এখানে বিএনপির প্রার্থী আজিজুর রহমান ও জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান আপন ভাই। বড় ভাই আজিজুর রহমান রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। মোস্তাফিজুর রহমান রৌমারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির।

এই ‘পারিবারিক লড়াইয়ের’ ভেতরেও বিএনপির প্রার্থী আজিজুর রহমানের জন্য নতুন অস্বস্তি তৈরি করেছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক মমতাজ হোসেন লিপি। দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সমর্থকেরা।

মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রায় এক বছর থেকে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। হঠাৎ করে বড় ভাইকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত করেনি। গত এক মাসে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সবাই এটাকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছে।’

বিএনপির প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ছোট ভাই একসময় বিএনপি করত। ১৯৯১ সালেও সে বিএনপির কর্মী হিসেবে আমার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিল। পরে জামায়াতে যোগ দিয়ে এখন ওই দলের প্রার্থী হয়েছে। একই পরিবারে দুই ভাই প্রার্থী হলেও আমাদের আত্মীয়দের মধ্যে কেউ ওর সঙ্গে নেই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন ব এনপ র প র র থ আজ জ র রহম ন জ র রহম ন র ব এনপ র স ল ইসল ম আসনট ত উপজ ল এনস প সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বইছে নির্বাচনী হাওয়া, প্রচার–প্রচারণায় সরগরম শহর–গ্রাম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণায় নেত্রকোনার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সব কটি আসনে ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রার্থী দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে এলাকায় নানাভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সক্রিয় রয়েছেন প্রচার-প্রচারণায়।

দলীয় নেতা–কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে চলেছেন। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও তাঁদের ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে বড় দুটি দলই। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি এখনো নিষ্ক্রিয়। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিবি) মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি করতে দেখা যায়।

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) 

সীমান্তবর্তী এলাকার আসনটি সমতল, পাহাড় ও আংশিক হাওর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। এর আগেও দুবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ এই প্রার্থী গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সহায়তাসহ নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। 

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কায়সার কামাল বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। তাই জনকল্যাণমূলক কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ সুন্দর রাখার ব্যাপারেও আমি সব সময় সজাগ থাকি। আশা করি ভোটাররা এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’

এখানে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা শাখার আমির আবুল হাসিম। তিনিও সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য খাইরুল বাশার ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করা গোলাম রব্বানী ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে পুনরায় জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।

নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) 

জেলা সদরের আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল হক। এর আগেও বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আশরাফ উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ টি এম আবদুল বারীসহ অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। 

বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আনোয়ারুল হকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও এ টি এম আবদুল বারী এখনো নিজ মনোনয়নের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি প্রাথমিক মনোনয়ন, তাই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমি মনোনয়নের আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়। শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, চিকিৎসক হিসেবেও মানুষের পাশে থেকেছি। দলের দুঃসময়ে আহ্বায়কের দায়িত্বে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।’

এখানে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হক। তিনি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির। জেলা জামায়াতের বর্তমান আমির ছাদেক আহমাদ হারিছ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দল। জেলার পাঁচটি আসনেই গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কাজেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

এ আসনে এনসিপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান। গণ অধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ইসলামী আন্দোলন থেকে আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রুহীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। 

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া)

আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী আগেও একাধিকবার বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের দুর্দিনে আমি জেলা কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও নিজ নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা খুশিমনে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ছাড়াও এখানে বিএনপির মনোয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন। 

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য খায়রুল কবির নিয়োগী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে আটপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ শামছুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেন সুলতানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী (শামীম)।

নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি)

হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটি থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৭ সাল থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত জানুয়ারিতে তিনি কারামুক্ত হন। এরপর এলাকায় ফিরে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমি সব সময় উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অতীতে এলাকার উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। ভবিষ্যতেও করব। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন, সুশিক্ষা, বিশ্বাস ও মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখব।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদারও নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে মদন উপজেলার আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখলেছুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রের প্রেসিডিয়াম সদস্য জলি তালুকদার।

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা)

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের পূর্বধলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আবু তাহের তালুকদার। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখানে নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার বলেন, আবু তাহের তালুকদার একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। তাঁর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা এককাট্টা।

আবু তাহের তালুকদার বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট আমলেও দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছি। মামলা-হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও হয়রানির শিকার হয়েছি। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা আমার মনোনয়নে খুশি হয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’

আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাও বসে নেই। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তাঁরাও তৎপর। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম মোস্তফা। জামায়াত তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। আসনটিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি হাবিবুল্লাহ খানকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রাম–ইউনিয়নে ঘুরে প্রার্থীদের গণসংযোগ, ‘সাড়া’ও পাচ্ছেন 
  • বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ মেটেনি
  • বইছে নির্বাচনী হাওয়া, প্রচার–প্রচারণায় সরগরম শহর–গ্রাম