গুলিবিদ্ধ হাদির মঞ্চ: ‘প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে আ.লীগ- সন্দেহে সবাই’
Published: 12th, December 2025 GMT
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় মঞ্চের নেতারা ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে শুরু করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ— কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখছেন না।
হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
হাদির ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম এনসিপির
‘আঘাত যা-ই আসুক, কোনো শক্তিই নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক জরুরি ব্রিফিংয়ে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবির ও ডাকসু নেত্রী ফাতিমা তাসনিম জুমা মঞ্চের পক্ষ থেকে এই কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন।
ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল জাবির সরাসরি এই ঘটনার দায় সরকারের ওপর চাপান এবং প্রশ্ন তোলেন, “যে সরকার হাদিকে রক্ষা করতে পারে না, সে বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আল্লাহ না করুন, ওসমান হাদির কিছু হলে অন্তর্বর্তী সরকারকেই দায়ভার নিতে হবে।”
হামলায় সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সন্দেহ করছেন কি না, জানতে চাইলে জাবির বলেন, “আমরা কাউকে সন্দেহের চোখে দেখছি না; আবার কাউকে সন্দেহের বাইরেও রাখছি না”।
তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতিতে অনেক প্রতিপক্ষ থাকতে পারে, এমন কারণে হামলা হতে পারে। পাশাপাশি, তিনি পতিত স্বৈরাচারের (আওয়ামী লীগ) দিকেও ইঙ্গিত করে বলেন, হাদি তাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হওয়ায় তারা হয়তো ভেবেছে তাকে মেরে ফেললে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবে।
তবে তিনি আরো বলেন, “ওসমান হাদি এখন ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে।”
হামলা ও চিকিৎসা পরিস্থিতি
শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে এই হামলার শিকার হন ওসমান হাদি। তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার এক দফা অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসকের ধারণা, গুলি হাদির মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলেও জানানো হয়। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ব্রিফিংয়ে মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এভারকেয়ার হাসপাতালে হাদির জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা অনুরোধ করেন, প্রয়োজনে যেন তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে নেওয়া হয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ওসমান হাদি গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর প্রতিষ্ঠাতা। ‘সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ এই সংগঠনটির ঘোষিত মূল লক্ষ্য।
তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন। শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর হাদি বলেছিলেন, এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে।
গত জুলাইয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। একইসাথে তিনি সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা ও দৃশ্যত পরিবর্তনের ঘাটতি নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করে তিনি একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও তুলে ধরেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নেতারা অনুরোধ করেন, আব্দুল্লাহ আল জাবির ও ফাতিমা তাসনিম জুমার বাইরে কারো বক্তব্য যেন ইনকিলাব মঞ্চের বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা না হয়। হামলার প্রতিবাদে তারা শনিবার বেলা ১২টায় শাহবাগে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ মল ওসম ন হ দ র জন ত সন দ হ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় দিনের বেলায় গুলি করা হলো ভোটে সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে (৩৩)। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন। হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক।
গুলি করার পর আহত হাদিকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি তাঁর মাথায় লেগেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। তবে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করার পর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন আন্দোলনে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার পর ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আলোচনায় আসেন হাদি। সাংস্কৃতিক এই প্ল্যাটফর্ম তাদের লক্ষ্য ঠিক করে, ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্য হাদিকে আলোচনায় আনে। ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার সময় হাদি সক্রিয় ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দিতে বলেছিলেন।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী তহবিলের হিসাব প্রকাশ এবং তাঁর ওপর ময়লা পানি নিক্ষেপের ঘটনায় ‘অসুবিধা নেই’ উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েও আলোচনায় আসেন হাদি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে একটি ব্যাটারির রিকশায় ছিলেন হাদি ও তাঁর সঙ্গী এক ব্যক্তি। তাঁদের পেছনে পেছনে আসে একটি মোটরসাইকেল। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে চলন্ত অবস্থায় সেই মোটরসাইকেল থেকেই একাধিক গুলি করা হয় হাদিকে।
ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা ওই মোটরসাইকেলে সেখান থেকে চলে যান