আশির দশকের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। আমার সেশন ছিল ১৯৮৩-৮৪। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে হলে সিট পাওয়ার কথা চিন্তাও করা যেত না। বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কাজলায় মেসে উঠি। থাকা-খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বরাদ্দ ছিল মাসে ৫০০ টাকা। মেসে সিটভাড়া ৫০ টাকা। তিন বেলা আহার বাবদ পড়ত প্রতিদিন ১০-১২ টাকা। খাবার বলতে সকালে আলুভর্তা-ভাত। দুপুরে ও রাতে থাকত মাছ বা ডিম, সঙ্গে পাতলা ডাল। মাসে দু-একবার জুটত গোশত, তা-ও খুব ছোট এক বা দুই টুকরা।
যখন টাকায় টান পড়ত, কখনো কখনো ১০০ টাকা অতিরিক্ত পেতাম। টাকা আসত পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মানি অর্ডারে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে আমাদের বাড়ি থেকে টাকা আসতে সময় লাগত প্রায় এক সপ্তাহ।
ডাকপিয়ন মামা মেসে এসে সাইকেলে বেল বাজাতেন। আমরা বুঝে যেতাম, মামা এসেছেন। আমরা সবাই রুম থেকে বের হতাম। মামা ৫০০ টাকা ভাংতি করে নিয়ে আসতেন। চারটি ১০০ টাকার নোট, ৫০ টাকার নোট একটি, দুটি ২০ টাকার নোট ও দুটি ৫ টাকার নোট দিতেন। ওনাকে ৫ টাকা বকশিশ দিতাম। খুব খুশি হতেন।
মানি অর্ডার ফরমের নিচে চিঠি লেখার কিছু জায়গা থাকত। মামা টাকাপ্রাপ্তির স্বাক্ষর নিয়ে চিঠির ওই অংশটুকু মানি অর্ডার ফরম থেকে ছিঁড়ে দিয়ে যেতেন।
কোনো প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শহরে যেতাম। আসার সময় বাস মিস করলে বন্ধুরা মিলে দুই টাকার বাদাম কিনে গল্প করতে করতে হাঁটা ধরতাম পদ্মার বাঁধের ওপর দিয়ে। বিকেলের নরম আলোয় পদ্মার রুপালি ঝিলিক আর রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায় শান্ত ও স্নিগ্ধ পথ ধরে পাঁচ কিলোমিটার পথ কখন যে শেষ হয়ে যেত, বুঝতেই পারতাম না।
এক শীতের রাতে টের পেলাম, মেসের পাশের বাসায় তেলের পিঠা বানানো হচ্ছে।
কী করে পিঠা খাওয়া যায়? তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদক। ছিলাম দৈনিক উত্তর বার্তা ও রাজশাহী বেতারের প্রতিনিধি। প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল।
অনুষ্ঠানের কার্ড নিয়ে ওই বাসায় ঢুকলাম। কার্ড দিয়ে চলে আসার ভান করতেই ভাবি বসতে বললেন। খুব বেশি আপত্তি না করে বসে পড়লাম। একটা পিঠা খেয়েই বাদবাকি পিঠা জ্যাকেটের পকেটে ভরে চলে এলাম জরুরি কাজের কথা বলে। মেসে আসার পর সব পিঠা রুমমেটরা ভাগ করে খেল।
বিকেলে বা বন্ধের দিনে কোনো বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হলে স্লিপে নাম ও রুম নম্বর লিখে হলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। কোনো ছাত্রী হলে ঢুকলে অনুরোধ করে তাঁর হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিতাম। কেউ নিতেন, কেউ নিতেন না। কখনো ওই স্লিপ পৌঁছাত, কখনো পৌঁছাত না। অনেকেই হলের ভেতরে গিয়ে স্লিপ ফেলে দিতেন।
তখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। রাজশাহী বেতার থেকে চুক্তিপত্র পেলাম। দুই দিন পর ‘নবারুণ’ অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করতে হবে। বেলা দুইটায় অনুষ্ঠান। বেতারে জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান, তা-ও আবার সরাসরি। অন্য রকম উত্তেজনা কাজ করছিল মনে। ভাবলাম, মাকে জানাই। কিন্তু চিঠি পৌঁছাতে তো এক সপ্তাহ লাগবে। অবশেষে আর্জেন্ট টেলিগ্রাম করলাম।
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে আপনাদের লেখা। আপনিও পাঠান। গল্প-কবিতা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা। আপনার নিজের জীবনের বা চোখে দেখা সত্যিকারের গল্প; আনন্দ বা সফলতায় ভরা কিংবা মানবিক, ইতিবাচক বা অভাবনীয় সব ঘটনা। শব্দসংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০০। দেশে থাকুন কি বিদেশে; নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়: [email protected]অনুষ্ঠানের দিন দুপুরবেলা টেলিগ্রাম পেয়ে মা পাড়ার নারীদের ডেকে এনে একসঙ্গে ছেলের অনুষ্ঠান শোনেন রেডিওতে। পরে চিঠিতে এ কথা জানিয়েছিলেন মা। ছুটিতে বাড়ি গেলে অনেকে দেখতে এসেছিল আমাকে। রেডিওতে আমার কথা শুনে তারা সবাই বিস্মিত।
এরপর রেডিওতে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নেওয়ার পরও বাংলাদেশ বেতারে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘অন্বেষা’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি দীর্ঘদিন।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি এ বছরের জুলাই মাসে। এখন বৈষয়িক ব্যস্ততার ফাঁকে লেখালেখি করছি, বই পড়ছি। কিছু সাংগঠনিক কাজও আছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আজও মনে পড়ে, যেখানে সময় থেমে থাকত, কিন্তু আমরা ছুটতাম আনন্দ-হাসিতে। বড় মায়াময় ও মানবিক ছিল মানি অর্ডার ও চিঠির দিনগুলো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন অর ড র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার সূচি প্রকাশ
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা (নবম গ্রেড) পদের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসির) ওয়েবসাইটে (১০ ডিসেম্বর ২০২৫) এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে লিখিত পরীক্ষা–সম্পর্কিত জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো—
১.
অনলাইনে প্রাপ্ত প্রবেশপত্র নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উপস্থিত হতে হবে। প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে কমিশনের ওয়েবসাইট ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে হবে।
২. প্রবেশপত্র ছাড়া কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।
আরও পড়ুনসরকারি আবাসন পরিদপ্তরে নিয়োগ, পদ ৮১০৪ ডিসেম্বর ২০২৫৩. পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পর কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকক্ষ ত্যাগ করতে পারবেন না।
৪. উত্তরপত্রে রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিকভাবে না লিখলে এবং সঠিকভাবে বৃত্ত পূরণ না করলে অথবা কোনোরূপ কাটাকাটি করলে বা উত্তরপত্রে ফ্লুইড ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র বাতিল হবে।
৫. হাজিরা তালিকায় প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং নামের পাশে তাঁর ছবি ও প্রবেশপত্রের অনুরূপ স্বাক্ষর মুদ্রিত থাকবে। প্রবেশপত্রের ছবি ও স্বাক্ষরের সঙ্গে হাজিরা তালিকার ছবি ও স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখা হবে। মিল না থাকলে উক্ত পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬. ভুয়া পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশেষ তল্লাশি অভিযান পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষার হলে বই-পুস্তক, ব্যাগ, মানিব্যাগ, হাতঘড়ি, পকেটঘড়ি, ইলেকট্রনিক ঘড়ি, মুঠোফোন, ঘড়িসদৃশ মোবাইল ফোন বা কোনোরূপ ইলেকট্রনিক ডিভাইস, গহনা, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও ব্যাংক কার্ড আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। উল্লিখিত নিষিদ্ধঘোষিত সামগ্রী কোনো পরীক্ষার্থীর নিকট পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে এবং এ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনপরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২৭ পদের চাকরি পেতে আর কত অপেক্ষা১১ ডিসেম্বর ২০২৫৭. প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁদের শ্রুতলেখক প্রয়োজন তাঁদের ২০.১২.২০১৫ তারিখের মধ্যে (অফিস চলাকালীন) শ্রুতলেখকের জন্য কমিশনের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক, ইউনিট-১১ বরাবর ২ কপি রঙিন ছবি ও প্রতিবন্ধিতার সপক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রদত্ত সনদের সত্যায়িত কপিসহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। প্রাপ্ত আবেদনপত্র বিবেচনান্তে কর্ম কমিশন হতে শ্রুতলেখক প্রদান করা হবে।
৮. প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী কর্তৃক কমিশনে দাখিলকৃত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন হতে অনুমোদিত শ্রুতলেখককে ছবি–সংবলিত অনুমতিপত্র প্রদান করা হবে। কমিশন হতে ইস্যুকৃত ছবিযুক্ত অনুমতিপত্রসহ শ্রুতিলেখককে সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর সঙ্গে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে হবে।
আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ পদে চাকরির সুযোগ১৪ মিনিট আগে৯. পরীক্ষায় সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর, প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর বা এ জাতীয় কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।
১০. পরীক্ষার্থীদের বাংলা ৪০ ইংরেজি ৪০ সাধারণ জ্ঞান ৪০ প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল (গণিত, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান/ফলিত পরিসংখ্যান) ৮০ নম্বরসহ সর্বমোট ২০০ নম্বরের ৪ ঘণ্টা সময়ের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের একই সঙ্গে ৪টি বিষয়ের জন্য ৪টি ভিন্ন ভিন্ন উত্তরপত্র প্রদান করা হবে। একই উত্তরপত্রে একাধিক বিষয়ের উত্তর প্রদান করা যাবে না; করলে উত্তরপত্র বাতিল হবে। প্রতিটি উত্তরপত্রে বিষয়ের নাম ও বিষয় কোড অবশ্যই লিখতে হবে। পরীক্ষার্থীগণ কেবল উত্তরপত্রের প্রথম অংশের প্রয়োজনীয় ঘরগুলো পূরণ করবেন। উত্তরপত্রের দ্বিতীয় অংশে কোনো কিছু লিখবেন না; লিখলে উত্তরপত্র বাতিল হবে।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম ওয়াসা ৯ম-১০ম গ্রেডে নেবে ২১ জন, আবেদনের সুযোগ বছরের দিন পর্যন্ত২ ঘণ্টা আগে