দেশে অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা নেওয়া অনেকের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সিরিয়াল পেতেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। আবার চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্য পরীক্ষার (টেস্ট) জন্য নানা জায়গায় ঘুরতে হয় রোগী ও স্বজনদের। এখানেই শেষ নয়। ওষুধের জন্য দৌড়াতে হয় ফার্মেসিতে।  

স্বাস্থ্যসেবার এমন নানা সমস্যার একক সমাধান দিচ্ছে ‘আরোগ্য’ নামের একটি স্টার্টআপ। এটি মূলত একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। দেশের যেকোনো স্থান থেকে ক্রয়াদেশ দিলে দ্রুততম সময়ে ওষুধ পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়। এ ছাড়া এই অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সেবাও নিতে পারবেন রোগীরা।

সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে শুরু হয়েছিল আরোগ্যের যাত্রা। শুরুতে কর্মী ছিল ৮-৯ জন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে স্টার্টআপটির বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যার বড় অংশ বিদেশি বিনিয়োগ। সেই সঙ্গে কর্মীর সংখ্যা বেড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। আরোগ্যের নিবন্ধিত গ্রাহক এখন ২২ লাখেরও বেশি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তখন করোনার প্রকোপ। এই সময়ই বাংলাদেশি চার তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় আরোগ্যের। শুরুতে শুধু ওষুধ সরবরাহকারী একটি ডিজিটাল ফার্মেসি হিসেবে কাজ করত এটি। পরে ওষুধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন মেডিক্যাল, হেলথকেয়ার ডিভাইস, পার্সোনাল কেয়ার পণ্য, নিউট্রিশন সাপ্লিমেন্ট এবং পোষা প্রাণীর খাবার ও স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত সামগ্রী বিক্রি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা (প্যাথলজি) সেবাও।

আরোগ্যের চার প্রতিষ্ঠাতা হলেন—প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রোজিনা মজুমদার, প্রধান স্ট্র্যাটেজি কর্মকর্তা ইওয়ার মেহেবুব, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ফাহাদ হোসেন ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) শামীম হাসান। তাঁদের এ উদ্যোগ নিয়ে গত বছরের আগস্টে বৈশ্বিক ম্যাগাজিন ফোর্বসেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় আরোগ্যের কার্যালয়ে কথা হয় স্টার্টআপটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ইওয়ার মেহেবুবের সঙ্গে। গল্পে গল্পে তিনি জানালেন আরোগ্যের যাত্রা, বিনিয়োগ, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা। ইওয়ার মেহেবুব বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে আরোগ্য শুরু করি। এর মধ্যে আমি এবং রোজিনা দুজনেই দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে ছিলাম। সেখানেই বড় হয়েছি, পড়াশোনা করেছি। তারপর লম্বা সময় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং, রিসার্চ ও প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। পরবর্তী সময়ে আমরা একটি কেক ম্যাগাজিনের ব্যবসাও করি। তখন কেক ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করে আমরা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ইভেন্ট করেছি, ব্যবসা বাড়িয়েছি। ব্যবসা, ব্যবস্থাপনা ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং—এই তিন ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাতে। সব মিলিয়ে আমরা সফলই ছিলাম বলা যায়। কিন্তু কোভিডের সময় আমাদের মনে নতুন ভাবনা জন্ম নেয়।

এ সময় দুবাইতে থাকা এক বন্ধু জানালেন, বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এখনো খুব নতুন। আমরা সেখানে কিছু করতে পারি। প্রাথমিকভাবে আমাদের ইচ্ছা ছিল, বাংলাদেশি কোনো স্টার্টআপে বিনিয়োগ ও পরামর্শ সেবা দেব, কিন্তু সরাসরি যুক্ত হব না।’

আরোগ্যের সঙ্গে পরিচয়

ইওয়ার মাহমুদ জানান, শুরু করার আগে এ দেশের স্বাস্থ্য খাতের সম্ভাব্য স্টার্টআপগুলো খুঁজতে শুরু করেন তিনি। এ সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে চট্টগ্রামের দুই তরুণ মার্চেন্ট নেভি অফিসারের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তাঁরা আরোগ্য নামে একটি অ্যাপের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছিলেন। আরোগ্য অ্যাপ দিয়ে তাঁরা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতেন। তবে চট্টগ্রামেই ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল তাঁদের কার্যক্রম।

ইওয়ার বলেন, ‘প্রথম দেখাতেই বুঝলাম, এর মধ্যে সম্ভাবনা আছে। সঠিক কৌশল ও অর্থায়ন পেলে বড় কিছু করা সম্ভব। দুবাইয়ে আমার অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর বন্ধুদের জানালাম। তারা রাজি হলো, তবে শর্ত দিল, আমরা চারজন মিলে নেতৃত্ব দিলে তারা বিনিয়োগ করবে। বিদেশে স্থিতিশীল ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না। আমি সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় এক মাস সময় নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম। এভাবেই ডিসেম্বর ২০২০ থেকে আরোগ্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু।’

ইওয়ার মাহমুদ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইওয় র ম হ কর মকর ত আর গ য র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

আরও বাড়বে সোনার দাম, ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে উঠতে পারে ৪,৯০০ ডলার

এক বছর ধরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছেই। চলতি বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে গিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। বিভিন্ন পূর্বাভাসে জানা গেছে, ২০২৬ সালেও সেই ধারা বজায় থাকবে।

সোনার দাম যখন আউন্সপ্রতি চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেল, তখনই অনেক সংস্থা পূর্বাভাস দেয়, সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। সর্বশেষ গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের শেষ ভাগে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৯০০ ডলারে উঠে যেতে পারে।

গত দুই মাসে বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা সোনার দাম নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। এসব পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ ডলার থেকে ৪ হাজার ৯০০ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

গোল্ডম্যান স্যাকস বাজার বিশ্লেষণ করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, বর্তমানে সোনায় যে পরিমাণ বিনিয়োগ হওয়ার কথা, সে পরিমাণ হচ্ছে না। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনায় আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছেন। বিষয়টি হলো এখন বিনিয়োগকারীদের সোনা ধরে ধরে রাখার প্রবণতা কম বলে ভবিষ্যতে হঠাৎ যদি বিনিয়োগ বেড়ে যায়, তাহলে সোনার দাম হুট করে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করছে, পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে সোনার দাম আরও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে চাহিদা অনেকটা বাড়তে হবে তা নয়; বরং বিনিয়োগকারীরা স্টকে বিনিয়োগের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে সোনা কিনলেই এর দাম অনেকটা বেড়ে যাবে। ফলে বিনিয়োগ যত বেশি বাড়বে, সোনার দাম তার চেয়েও বেশি হারে বাড়বে।

চলতি বছর ইতিমধ্যে সোনার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করছে, চলতি বছর সোনার দাম অতটা বাড়বে না। তবে যে দুটি কারণে এ বছর সোনার দাম বেড়েছে, সেই কারণ দূর হবে না।

প্রথমত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেনার ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০২২ সালে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ পশ্চিমারা জব্দ করার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝে যায়, এখন সোনায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলও মাস খানিক আগে সে কথা বলেছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সেন্ট্রাল ব্যাংক গোল্ড রিজার্ভ সার্ভে ২০২৫-এ বলা হয়েছে, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনার ভান্ডার বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।

দ্বিতীয়ত, ফেডারেল রিজার্ভ এখন নীতি সুদ কমাচ্ছে। ডিসেম্বর মাসেও নীতি সুদহার কমানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ২০২৬ সালে আরও ৭৫ ভিত্তি পয়েন্ট হারে নীতি সুদহার কমানো হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে ঝুঁকে পড়ার যেসব কারণ অতীতে ছিল, সেগুলো এখনো আছে।

ভূরাজনীতিতে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম খুঁজছেন। সেই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে বাণিজ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক বন্ডের চেয়ে সোনায় বিনিয়োগ করা নিরাপদ মনে করছেন।

সোনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর দাম সাধারণত কমে না। গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে ৭১৮ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ; এক বছরে ৬১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ