ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে প্রকৌশলী নাবিলা তাসনীমকে মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত ১০ ডিসেম্বর দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণা করেন। প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকেই এই আসনে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা নাবিলা তাসনীমকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। তবে এই মনোনয়ন প্রাথমিক। যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এনসিপির এক নেতা। 

ধামরাই উপজেলা এনসিপির নেতাকর্মীরা জানান, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে প্রায় এক বছর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতায় চলতি বছরের ২২ জুন জাতীয় নাগরিক পার্টির ধামরাই উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় থেকেই নেতাকর্মীরা পৌরসভা ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।

আরো পড়ুন:

ঋণখেলাপি, সরকারি বিল বকেয়া থাকলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না

হাদিকে হত্যাচেষ্টার নিন্দা ও উদ্বেগ এনসিপির

সম্প্রতি মনোনয়ন আহ্বান করা হলে ধামরাই থেকে এনসিপির পাঁচ নেতা মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে নাবিলা তাসনীমকে মনোনীত করে এনসিপি। তিনি ধামরাইয়ের চৌহাট ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। থাকেন ঢাকায়। 

নাবিলার নাম ঘোষণার পরপরই এনসিপির ধামরাই উপজেলার একাধিক নেতাকর্মী ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেন। এ নিয়ে এনসিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কথা হয়। তারা বলছেন, নাবিলা তাসনীম নামে কাউকে তারা চেনেন না। নাম ঘোষণা পরই তারা এই নামে কেউ আছে জানতে পেরেছেন। দলে পরিচিত মুখ নন এবং এলাকার সঙ্গে সংযোগ নেই এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা।

যা বলছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা

এনসিপির বালিয়া ইউনিয়ন ও চৌহাট ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক ইসরাফিল হোসেন রাজন বলেন, ‘‘আমি তাকে (নাবিলা তাসনীম) চিনি না। কখনও পরিচয় হয়নি। মনোনয়ন পাওয়ার পর জানলাম উনি ঢাকায় থাকেন। এলাকায় খুব একটা আসেন না। মনোনয়ন পাওয়ার পরও কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়নি।’’

ধামরাই উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে তার (নাবিলা তাসনীম) কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো পরিচয়ও নেই। ঘোষণার পরও ধামরাই উপজেলার কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে তিনি পরিচিত হননি। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। দেখা যাক কি হয়।’’

দলের ধামরাই উপজেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ইসরাফিল ইসলাম খোকন বলেন, ‘‘এনসিপি যখন ১২৫ জনের নাম ঘোষণা করে তখনই ঢাকা-২০ এর প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়। তখনই আমরা জানতে পারি নামটি। এর আগে এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের কোনো পরিচয় ছিল না।’’

‘‘পরে জানতে পেরেছি, যখন মনোনয়ন আহ্বান করা হয় তখন তিনি (নাবিলা তাসনীম) ঢাকা-২০ এর জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে যেভাবে ঘোষণা করেছে, বিষয়টি আমরা মানতে পারি না। এ জন্য আমরা অনাস্থা দিয়েছি,’’ বলেন তিনি। 

দু’একদিনের মধ্যে তারা আমাদের সঙ্গে বসবে। তারপর একটা সিদ্ধান্ত আসবে জানান খোকন। 

পুনরায় মূল্যায়নের আশা অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের 

ঢাকা-২০ ধামরাই আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে মনোনয়ন সংগ্রহ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘‘আমি আশা করবো গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে আমার দল তৃণমূলে যে কাজ করেছে তাদের মূল্যায়ন করবে। যেহেতু পুনরায় মূল্যায়নের সুযোগ আছে, আমি বিশ্বাস রাখতে চাই। তারা অবশ্যই মূল্যায়ন করে যোগ্য ব্যক্তিকে ধামরাইয়ের জন্য মনোনীত  করবেন।’’

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট জহির বলেন, ‘‘তার (নাবিলা তাসনীম) সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো পরিচয় নেই। শুনেছি, তিনি ধামরাইয়ের মেয়ে। তবে দলীয় কোনো কার্যক্রমে বিগত দিনে তাকে দেখিনি। আমরা মাঠে কাজ করি। মনোনয়ন দেবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নাই।’’

এ সব বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোনকল করে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি নাবিলা তাসনীম। তবে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘‘আমি দেশের মানুষ, বিশেষ করে ধামরাইবাসীর পাশে দাঁড়াতে ও ধামরাইয়ের উন্নয়ন করতে চাই। ইঞ্জিনিয়ার ও এমবিএ পড়া হিসেবে প্রায় ১০ বছর মার্চেন্টাইজ কোম্পানিতে কাজ করেছি, সেই অভিজ্ঞতা জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাবো। আমি জনগণের মতামতকে স্বাগত জানাই এবং নির্বাচনের সময় যেসব কথা দেওয়া হবে, সেগুলো বাস্তবে রূপান্তরিত করব। আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী।’’

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি ওয়াকিবহাল। মনোনয়ন দেওয়ার সময় আমরা কোনো কিছুই চূড়ান্ত করে দেইনি। এটা প্রাথমিক মনোনয়ন। যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে।’’

ঢাকা/সাব্বির//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ র য় কম ট ন ত কর ম র এনস প র কম ট র ত সন ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইবিতে হাদি হামলায় মহাসড়ক অবরোধ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। এরপর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটক সংলগ্ন খুলনা–কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও হাদির সুস্থতা কামনায় দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং আইইউসানস-এর নেতাকর্মীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘হাদির ওপর হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’, ‘জুলাই যোদ্ধা আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘বিপ্লবীরা আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সমাবেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, “আজ সারা দেশে জুলাই নেমে এসেছে। জুলাই যোদ্ধা হাদির ওপর হামলা হয়েছে। এটা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। জুলাইয়ের পর দেশে সামগ্রিক পরিবর্তন চাওয়াতে এই হামলা। এই ষড়যন্ত্র মানুষ মেনে নেবে না। কখনো জুলাই বানচাল করা যাবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা।”

আইইউসানসের সাবেক সভাপতি সাজ্জাতুল্লাহ শেখ বলেন, “সন্ত্রাসীরা এই হামলার হুমকি অনেক দিন ধরে দিচ্ছিলেন। কিন্তু, আজ সরকারের ব্যর্থতায় হামলা হয়েছে। হাদির রক্ত বারুদ হয়ে গোটা বাংলায় ছড়িয়ে যাবে। দেশ নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গোটা দেশের ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। আওয়ামী লীগ চায় না নির্বাচন হোক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ছাড়ব।”

ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, “একটি গ্রুপ জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশে জুলাই নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এক দল সুশীল জুলাই ও একাত্তরকে মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে। আজ জুলাইয়ের জনগণ জেগে উঠেছে। আমরা আর কোনো ছাড় দিতে রাজি নই। যেখানে জুলাইয়ের ওপর হামলা সেখানেই আমরা প্রতিবাদ করবো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু লোক ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করা হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাইয়ের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করব।”

শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, “এই হামলা শুধু এক ব্যক্তির ওপর হামলা নয়। এটা সমগ্র জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা। সন্ত্রাসী হামলা করে আন্দোলন নিস্তব্ধ করা যায় না। ওসমান হাদি শুধু একজন ব্যক্তি নয়, তিনি সমাজের ন্যায়, অধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলে। একটা মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস. এম. সুইট বলেন, “আজ ইবিতে আরেকটি জুলাই নেমে এসেছে। সকল দল-মত জুলাইয়ের স্পিরিট ধরে রেখে নেমে এসেছে। হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্নভাবে নিলে ভুল হবে। এই হামলা ইন্টেরিম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামে এক জুলাই যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে, ব্যারিস্টার ফুয়াদের ওপর হামলা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। আপনারা আর কোনো ষড়যন্ত্রের সাহস দেখাবেন না। ছাত্র-জনতা রুখে দেবে। আজ হাদিকে হত্যার জন্য হামলা করা হয়েছে। এক হাদি মারা গেলে লক্ষ হাদি জন্ম নেবে।”

ঢাকা/তানভীর/জান্নাত  

সম্পর্কিত নিবন্ধ