শতবর্ষী প্যাডেল স্টীমার পিএস মাহসুদে
কূটনীতিকদের নৌযাত্রা/
 বাংলাদেশের নৌ পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় মুগ্ধ  কূটনীতিকগণের সহযোগিতার আশ্বাস 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদে’ কূটনীতিকদের নিয়ে ঢাকা-চাঁদপুর-ঢাকা রুটে এক বিশেষ নৌযাত্রা হয়েছে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকার সদরঘাট থেকে ঐতিহাসিক স্টিমার পিএস মাহসুদে করে অ্যাম্বাসাডরস’ আউটরিচ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। এর উদ্দেশ্য বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে বাংলাদেশের নদীপথ, নৌ-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নৌপরিবহন খাতে সরকারের অগ্রগতি তুলে ধরা।

আমন্ত্রিত অতিথিরা সদরঘাটের ভিআইপি টার্মিনালে সমবেত হন এবং সকাল ৯টায় পিএস মাহসুদ স্টিমারে যাত্রা শুরু করেন। দিনব্যাপী ক্রুজ চলাকালে কূটনীতিকরা চাঁদপুর পর্যন্ত নদীপথের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন এবং জাহাজে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। কূটনৈতিকদের সম্মানে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

 তৌহিদ হোসেন অংশ নেন। 

নৌপরিবহন সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্রজে যোগ দেন। তারা কূটনীতিকদের নদীভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদী সংরক্ষণ কার্যক্রম এবং ঐতিহ্যবাহী নৌযান সংরক্ষণে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অভিহিত করেন। পাশাপাশি ঐতিহাসিক ‘পিএস মাহসুদ’–এর সংরক্ষণ কার্যক্রম ও ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদে বিদেশি কূটনৈতিকদের স্বাগত জানান। তিনি বাংলাদেশের নদীকেন্দ্রিক পর্যটনের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি কূটনৈতিকদের সামনে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “নদীপথের পুনরুজ্জীবন ও নৌপরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী  পিএস মাহসুদ–এ আপনাদের যাত্রা আমাদের নদীজ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।”

অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকরা বাংলাদেশের নদী-নির্ভর পর্যটনের সম্ভাবনায় মুগ্ধ হন। তারা জানান, স্ব স্ব দেশের পর্যটকদেরকে বাংলাদেশের নদীপথভিত্তিক পর্যটন-বিশেষ করে শতবর্ষী ঐতিহাসিক প্যাডেল স্টিমারে ভ্রমণউদ্দীপিত করতে তারা ভূমিকা রাখবেন।

দিনব্যাপী এ রিভার ক্রুজ শেষে বিকেল স্টিমারটি পুনরায় সদরঘাট ভিআইপি টার্মিনালে নোঙর করে। অনুষ্ঠানটি অংশগ্রহণকারী বিদেশি কূটনীতিকদের মাঝে বাংলাদেশের নদীপথ, সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সম্পর্কে ইতিবাচক ও ঘনিষ্ঠতর ধারণা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা/এএএম/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র নদ ন পর বহন শতবর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্তি মানে শুধু সময়ের হিসাব নয়,এটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করার এক দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের গৌরবময় একশ বছর পূর্ণ করল ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব রোকসানা বেগমের নেতৃত্বে, সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি। ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে শতাধিক শিক্ষার্থী সারিবদ্ধভাবে অংশ নেয়। বিদ্যালয়ের আশপাশের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে র‌্যালিটি পুনরায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ভেসে ওঠা শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়দীপ্ত স্লোগান পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে দেয় উৎসবের আবহ। র‌্যালি শেষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফজিলা ইয়াসমিন। তিনি বিদ্যালয়ের শুরুর দিনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, “এই বিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি এই এলাকার স্বপ্নের ঠিকানা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী সমাজের নানা ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক রোকসানা বেগম, আজমিনা খাতুন, নুরজাহান আক্তার রত্না, শায়লা শারমিন, গোলাম হোসেন ও মফিজুল ইসলাম সহ স্কুল অ্যাডহক কমিটির সদস্য সাইমুম ইসলাম,প্রাক্তন শিক্ষার্থী  ইয়াসমিন আক্তার ও খাদিমুন্নাহার।এছাড়াও বিপুলসংখ্যক অভিভাবক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

পরে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নৃত্য ও আবৃত্তিতে ফুটে ওঠে শিক্ষা, দেশপ্রেম, শৈশব ও আগামীর স্বপ্ন। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা উপভোগ করেন অতিথি, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের মুখে দেখা যায় গর্বের ঝিলিক।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোকসানা বেগম বলেন, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় একশ বছরের দীর্ঘ পথচলা অতিক্রম করেছে। এই পথচলা আমাদের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি দায়িত্বেরও। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করার যে দায়িত্ব আমরা বহন করে আসছি, তা আরও নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও মূল্যবোধ গঠনে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শতবর্ষের এই শিক্ষা ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের জন্য আলোর বাতিঘর হয়ে থাকবে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শতবর্ষ ধরে সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আধুনিক পাঠদান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা আরও জোরদার করা হবে।

অভিভাবকরা আলোচনায় বলেন, এই বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষা নিয়ে এলাকার বহু শিক্ষার্থী আজ ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলিত অংশগ্রহণে শতবর্ষ পূর্তির এই উৎসব পরিণত হয় এক স্মরণীয় মিলনমেলায়। দীর্ঘ পথচলার গর্ব হৃদয়ে ধারণ করে নতুন শতকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শেষ হয় ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন