রাজধানীর পুরানা পল্টনে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও স্বাধীন প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। জুমার নামাজের পর তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তায় ব্যাটারিচালিত একটি রিকশায় চলন্ত অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। মাথায় গুলি লেগে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

দুপুর ২টা ২৪ মিনিটের দিকে বক্স কালভার্ট সড়ক হঠাৎই গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে। আশেপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রিকশার ভেতর থেকে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে আর্তচিৎকার করতে করতে রক্তাক্ত হাদি লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রিকশাটি থামানো হলে দেখা যায় তার মাথা ও কান বেয়ে রক্ত ঝরছে।

আরো পড়ুন:

গুলিবিদ্ধ হাদির মঞ্চ: ‘প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে আ.

লীগ- সন্দেহে সবাই’

হাদির ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম এনসিপির

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিকটস্থ এক ভবনে কর্মরত রাশেদ ইসলাম জানান, জুমার নামাজ শেষে ভবনের সামনে দাঁড়িয়েই তিনি পুরো ঘটনাটি দেখেছেন। তার বর্ণনায়, ফকিরাপুল দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল কিছুটা দূর থেকে হাদির রিকশাকে অনুসরণ করছিল। মোটরসাইকেলে দুজন ব্যক্তি ছিলেন; দুজনেরই হেলমেট পরা ছিল। পিছনে বসা ব্যক্তির গায়ে কালো চাদর, যাতে তার হাতও ঢাকা ছিল।

রাশেদের ভাষ্যে, মোটরসাইকেলটি রিকশার খুব কাছে আসতেই পেছনে বসা ব্যক্তি চাদরের ভেতর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে হাদিকে লক্ষ্য করে কাছ থেকে গুলি চালান। মুহূর্তের মধ্যে গুলি ছুড়ে তারা দ্রুতগতিতে বিজয়নগরের দিকে পালিয়ে যান। গুলির শব্দে রাস্তায় থাকা মানুষজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। পরে রিকশায় থাকা আরেক যাত্রী আহত হাদিকে ধরে রাখেন এবং উপস্থিত লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঘটনার পর পুলিশ, র‍্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। আশপাশের একাধিক ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে দুই আরোহী রিকশাটিকে অনুসরণ করছে এবং চলন্ত অবস্থায় কাছ থেকে গুলি চালাচ্ছে। দুজনেরই হেলমেট পরা থাকায় পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রাস্তায় রক্তের দাগ এবং এলাকা ঘিরে রাখা হলুদ ফিতা। সিআইডির অপরাধ শনাক্তকরণ দলের সদস্যরা তিনটি স্থান থেকে রক্তসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। দলের পরিদর্শক আবদুর রশীদ জানান, আলামত যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য জায়গাটি কর্ডন করে রাখা হয়েছে।

মতিঝিল জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ ফারাবী জানান, বিভিন্ন সংস্থা একযোগে কাজ করছে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে। তবে কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফুটেজ বিশ্লেষণ, সাক্ষ্য সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে হামলাকারীদের ধরতে তৎপরতা চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত ওসমান হাদি গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের পর সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং এলাকাব্যাপী গণসংযোগ করছিলেন। এমন সময় তার ওপর প্রকাশ্যে গুলির এই হামলায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং রাজনৈতিক মহলেও তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত করা হবে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ মল

এছাড়াও পড়ুন:

তফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় দিনের বেলায় গুলি করা হলো ভোটে সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে (৩৩)। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন। হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক।

গুলি করার পর আহত হাদিকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি তাঁর মাথায় লেগেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। তবে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করার পর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন আন্দোলনে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার পর ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আলোচনায় আসেন হাদি। সাংস্কৃতিক এই প্ল্যাটফর্ম তাদের লক্ষ্য ঠিক করে, ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্য হাদিকে আলোচনায় আনে। ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার সময় হাদি সক্রিয় ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দিতে বলেছিলেন।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী তহবিলের হিসাব প্রকাশ এবং তাঁর ওপর ময়লা পানি নিক্ষেপের ঘটনায় ‘অসুবিধা নেই’ উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েও আলোচনায় আসেন হাদি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে একটি ব্যাটারির রিকশায় ছিলেন হাদি ও তাঁর সঙ্গী এক ব্যক্তি। তাঁদের পেছনে পেছনে আসে একটি মোটরসাইকেল। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে চলন্ত অবস্থায় সেই মোটরসাইকেল থেকেই একাধিক গুলি করা হয় হাদিকে।

ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা ওই মোটরসাইকেলে সেখান থেকে চলে যান

সম্পর্কিত নিবন্ধ