গণতান্ত্রিক রূপান্তর চায় না যারা, তারাই এর পেছনে: আনু মুহাম্মদ
Published: 12th, December 2025 GMT
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ–সমর্থক শিক্ষক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে হেনস্তা, দুই ঘটনারই নিন্দা জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সাংস্কৃতিক সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে যারা চায় না, এই ঘটনাগুলোর পেছনে তারাই রয়েছে।
বাউল আবুল সরকারের মুক্তি ও তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে ‘আক্রান্ত ও ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের প্রতিরোধ যাত্রা’ শিরোনামে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। আনু মুহাম্মদ এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
আজ দুপুরে ঢাকার বিজয়নগরে গুলি করা হয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে, যিনি আওয়ামী লীগের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ–সমর্থক শিক্ষক জামাল উদ্দীনকে হেনস্তা করেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক যুবাইর বিন নেছারী (এ বি জুবায়ের)।
দুই ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জামাল উদ্দীন কিংবা ওসমান হাদি কী রাজনৈতিক চিন্তা ধারণ করেন, কী মতামত পোষণ করেন, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান কী, সেটা আমাদের দৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক। আমরা মনে করি, প্রত্যেকের নিজ নিজ মতপ্রকাশের অধিকার আছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সেই জায়গাটা সমাজে তৈরি করতে হবে। যারা গণতান্ত্রিক রূপান্তরে বাধা সৃষ্টি করতে চায়, তারাই এ ধরনের সন্ত্রাস করছে।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার সাংস্কৃতিক সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ম হ ম মদ
এছাড়াও পড়ুন:
জাবির প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের তালা
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নেতৃত্বে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়। এ সময় জাকসু ও বিভিন্ন হল সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচার শেষ হলেও শিক্ষকদের বিচার এখনো চলমান এবং ধীরগতির। এর মধ্যে শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ উসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। মিছিল শেষে তারা উপাচার্যের কাছে দ্রুত বিচারের দাবি জানান। কিন্তু, উপাচার্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় না জানালে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জাকসুর সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতী বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের সব চেয়ে বড় দাবি ছিল জুলাইয়ের হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার। প্রশাসন একই প্রমাণের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিচার করতে পারলেও, কোনো এক অজানা কারণে সেই প্রমাণ দিয়ে শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।”
“প্রশাসন বারবার সময়ক্ষেপণ করছে। আজকে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রগামী যোদ্ধা ওসমান হাদি ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানকেই গুলি করার শামিল,”বলেন তিনি।
জাকসুর সমাজসেবা-বিষয়ক সম্পাদক আহসান লাবিব বলেন, “অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় অভ্যুত্থানপন্থি সরকার বা প্রশাসন দাবি করলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জুলাই হামলায় জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।”
“আমরা এই প্রশাসনকে ধিক্কার জানাই। স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই—যে প্রশাসন রক্তের বিচার করতে পারে না, সেই প্রশাসনের সাথে আমাদের কোনো সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকতে পারে না।”
জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আজকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ উসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা এই আস্ফালনের সুযোগ পাচ্ছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। যার ফলে ছাত্রলীগ এসে ক্যাম্পাসে ব্যানার টানানোর সাহস পায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার গোপন তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে যায়।”
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “যত দিন পর্যন্ত হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার সম্পন্ন না হবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। ৫৪ বছরের জঞ্জাল সরাতে প্রশাসন দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। ১৯ জন শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং ৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকালও (১১ ডিসেম্বর) আমরা সারা দিন এ নিয়ে কাজ করেছি। শিক্ষকদের বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন করা হবে,” বলেন তিনি।
ঢাকা/হাবীব/জান্নাত