অ্যাপল ওয়াচের তথ্য দিয়ে একাধিক রোগ শনাক্তে নতুন এআই মডেল
Published: 13th, December 2025 GMT
অ্যাপল ওয়াচ থেকে সংগ্রহ করা বিপুল স্বাস্থ্যতথ্য ব্যবহার করে মানুষের কয়েকটি শারীরিক জটিলতা শনাক্তে সক্ষম একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি ও এম্পিরিক্যাল হেলথের গবেষকেরা। প্রায় ৩০ লাখ ‘পারসন ডে’ সমপরিমাণ পরিধানযোগ্য যন্ত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে মডেলটি প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, অসম্পূর্ণ বা অনিয়মিত স্বাস্থ্যতথ্যও সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারলে তা ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মডেলটির কেন্দ্রে রয়েছে জয়েন্ট এমবেডিং প্রেডিকটিভ আর্কিটেকচার (জেপা)। এটি মেটার সাবেক প্রধান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিজ্ঞানী ইয়্যান লেকানের প্রস্তাবিত একটি ধারণা। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে মান অনুমানকে মুখ্য ধরে এআই শেখে, সেখানে জেপা তথ্যের অর্থ, পটভূমি ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো বোঝার দক্ষতা তৈরি করতে চেষ্টা করে। ২০২৩ সালে মেটা জেপানির্ভর ‘আই জেপা’ উন্মোচন করে জানায়, এই প্রযুক্তি দ্রুত শেখার পাশাপাশি জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়া ও অচেনা পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে পারে। প্রকাশের পর থেকেই জেপাভিত্তিক গবেষণা ‘ওয়ার্ল্ড মডেল’নির্ভর নতুন ধারার সূচনা করেছে। সম্প্রতি লেকান মেটা ছেড়ে এই ওয়ার্ল্ড মডেলকে সামনে রেখে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জেটস: আ সেলফ সুপারভাইজড জয়েন্ট এমবেডিং টাইম সিরিজ ফাউন্ডেশন মডেল ফর বিহেভিয়ারাল ডেটা ইন হেলথকেয়ার’ শিরোনামে। এটি নিউরোআইপিএসের একটি কর্মশালায়ও গৃহীত হয়েছে। জেটস মূলত জেপার কাঠামোকে সময়ভিত্তিক স্বাস্থ্যতথ্যে প্রয়োগ করেছে, যাতে পরিধানযোগ্য যন্ত্র থেকে পাওয়া অনিয়মিত ও অসম্পূর্ণ তথ্যও কার্যকরভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।
গবেষণায় অংশ নেন ১৬ হাজার ৫২২ ব্যক্তি। তাঁদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ পারসন ডে। প্রতিদিন বা তারও কম ঘনত্বে ৬৩ ধরনের সময় সিরিজ তথ্য রেকর্ড করা হয়। এসব তথ্য পাঁচটি বিভাগে সাজানো হয়েছে। এগুলো কার্ডিওভাসকুলার, শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘুম, শারীরিক কার্যক্রম ও সাধারণ পরিসংখ্যান। তবে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ১৫ শতাংশের তথ্যের সঙ্গে চিকিৎসা নথির লেবেল যুক্ত ছিল।
ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে বাকি ৮৫ শতাংশ তথ্য মডেল প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা সম্ভব হতো না। জেটস প্রথমে সব অন–লেবেলড তথ্য থেকেই নিজে শেখে। পরে লেবেলযুক্ত তথ্য ব্যবহার করে মডেলকে সূক্ষ্মভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে পূর্বাভাস আরও নির্ভুল হয়। গবেষকেরা প্রতিটি তথ্যকে তিনটি ভাগে সাজান। এগুলো হলো দিন, মাপের মান ও মাপের ধরন। এরপর প্রতিটি ইউনিটকে একটি ‘টোকেনে’ রূপান্তর করা হয়। এই টোকেনের কিছু অংশ আড়াল করে মডেলকে সেই তথ্য অনুমান করতে বলা হয়। এভাবেই মডেল ধীরে ধীরে তথ্যের প্যাটার্ন ও সম্পর্ক বোঝার সক্ষমতা অর্জন করে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তে জেটসের এইউআরওসি স্কোর ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ, অ্যাট্রিয়াল ফ্লাটারে ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে ৮১ শতাংশ ও সিক সাইনাস সিনড্রোম শনাক্তে ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন, এইউআরওসি বা এইউপিআরসি সরাসরি ‘শতভাগ নির্ভুলতা’ মাপার সূচক নয়। কোন মডেল কতটা দক্ষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেস চিহ্নিত ও ক্রমবিন্যাস করতে পারে, এটি তা বোঝায়।
গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাপল ওয়াচের মতো পরিধানযোগ্য ডিভাইস থেকে পাওয়া খণ্ডিত ও অনিয়মিত তথ্য থেকেও নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশ্লেষণ করা সম্ভব। কোনো কোনো স্বাস্থ্য মেট্রিক যেখানে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ দিনে রেকর্ড হয়েছে, আবার কোনোটি পাওয়া গেছে প্রায় প্রতিদিন। এমন বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও জেটস এসব তথ্য প্রক্রিয়া করে কার্যকর পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হয়েছে। গবেষকেরা মনে করেন, ভবিষ্যতে ওয়্যারেবল ডিভাইস থেকে সংগৃহীত দৈনন্দিন তথ্য চিকিৎসাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
আরও বাড়বে সোনার দাম, ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে উঠতে পারে ৪,৯০০ ডলার
এক বছর ধরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছেই। চলতি বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে গিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। বিভিন্ন পূর্বাভাসে জানা গেছে, ২০২৬ সালেও সেই ধারা বজায় থাকবে।
সোনার দাম যখন আউন্সপ্রতি চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেল, তখনই অনেক সংস্থা পূর্বাভাস দেয়, সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। সর্বশেষ গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের শেষ ভাগে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৯০০ ডলারে উঠে যেতে পারে।
গত দুই মাসে বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা সোনার দাম নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। এসব পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ ডলার থেকে ৪ হাজার ৯০০ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
গোল্ডম্যান স্যাকস বাজার বিশ্লেষণ করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, বর্তমানে সোনায় যে পরিমাণ বিনিয়োগ হওয়ার কথা, সে পরিমাণ হচ্ছে না। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনায় আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছেন। বিষয়টি হলো এখন বিনিয়োগকারীদের সোনা ধরে ধরে রাখার প্রবণতা কম বলে ভবিষ্যতে হঠাৎ যদি বিনিয়োগ বেড়ে যায়, তাহলে সোনার দাম হুট করে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করছে, পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে সোনার দাম আরও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে চাহিদা অনেকটা বাড়তে হবে তা নয়; বরং বিনিয়োগকারীরা স্টকে বিনিয়োগের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে সোনা কিনলেই এর দাম অনেকটা বেড়ে যাবে। ফলে বিনিয়োগ যত বেশি বাড়বে, সোনার দাম তার চেয়েও বেশি হারে বাড়বে।
চলতি বছর ইতিমধ্যে সোনার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করছে, চলতি বছর সোনার দাম অতটা বাড়বে না। তবে যে দুটি কারণে এ বছর সোনার দাম বেড়েছে, সেই কারণ দূর হবে না।
প্রথমত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেনার ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০২২ সালে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ পশ্চিমারা জব্দ করার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝে যায়, এখন সোনায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলও মাস খানিক আগে সে কথা বলেছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সেন্ট্রাল ব্যাংক গোল্ড রিজার্ভ সার্ভে ২০২৫-এ বলা হয়েছে, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনার ভান্ডার বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।
দ্বিতীয়ত, ফেডারেল রিজার্ভ এখন নীতি সুদ কমাচ্ছে। ডিসেম্বর মাসেও নীতি সুদহার কমানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ২০২৬ সালে আরও ৭৫ ভিত্তি পয়েন্ট হারে নীতি সুদহার কমানো হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে ঝুঁকে পড়ার যেসব কারণ অতীতে ছিল, সেগুলো এখনো আছে।
ভূরাজনীতিতে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম খুঁজছেন। সেই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে বাণিজ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক বন্ডের চেয়ে সোনায় বিনিয়োগ করা নিরাপদ মনে করছেন।
সোনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর দাম সাধারণত কমে না। গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে ৭১৮ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ; এক বছরে ৬১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।