বাংলাদেশে নির্বাচনপূর্ব সময়ে সব সময় কিছু বিশৃঙ্খলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে বেশি নাজুক। এর কারণ বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে নেমেছে, সেখান থেকে বর্তমান সরকার দেড় বছর সময় পেলেও খুব দৃশ্যমান কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এবং এর আগে থেকে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে ঘাটতি ছিল। কাজেই প্রস্তুতিও সেভাবে নেওয়া হয়নি। বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এর আগে খোয়া গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো উদ্ধার করার জন্য জোর তৎপরতা চালানোর মতো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত ছিল, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আমরা দেখতে পেয়েছি।

আমরা এটাও জানি যে আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ), বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং অন্য যে নেতারা ভারতে পালিয়ে গেছেন, তাঁরা সেখান থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে উসকানি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল। সে ধরনের কোনো প্রস্তুতি যদি তারা নিয়ে থাকে, তাহলে অবস্থার অবনতি হতো না বা হওয়ার কথা নয়।

যেসব বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই বাহিনীগুলোর কর্মদক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হয়নি। এই বাহিনীকে সরকার সম্পূর্ণভাবে আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নিতে পারেনি বা তৈরি করতে পারেনি।

বিশেষ করে অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনো কিছু দেখতে পাইনি। একই সঙ্গে যে ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা বা আগাম তথ্য থাকা উচিত, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা আগাম তথ্য পাচ্ছে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগাম তথ্য ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।

তবে আমরা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। নির্বাচন যেকোনো মূল্যে হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন, যার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব। কাজেই নির্বাচন হতে হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটুকু অবনতি হয়েছে, সেটিকে প্রারম্ভিক পর্যায় বলা যায়। তবে এটা একটা অশনিসংকেত। উচিত হবে এখনই এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরো পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণকে একেবারে নির্মূল করে দেওয়া।

আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি আছেন, বিশেষ করে যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, যাঁরা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের সঠিক ভূমিকাটা রাখবেন। কোনোভাবেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের জন্য এখন থেকেই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

মেজর জেনারেল (অব.

) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র ব শ ষ কর র জন য ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

এভারকেয়ারের সামনে কড়া নিরাপত্তা, বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভিড় নেই

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় হাসপাতালের সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে প্রথম কয়েক দিনের মতো হাসপাতালের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের তেমন ভিড় নেই।

আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাসপাতালের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। আশপাশে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও এসএসএফের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে দ্রুত এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দেশজুড়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিদিন তাঁর খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করতেন নেতা–কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সামনে ভিড় না করতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বিএনপির একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে নেতা–কর্মীদের হাসপাতালের সামনে ভিড় না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে নেতা–কর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করছেন।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার পর বেশ কয়েকবার তাঁর খোঁজ নিতে এসেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে নিজ অবস্থানে থেকে ম্যাডামের সুস্থতা কামনায় দোয়া করি।’

মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম আরও বলেন, ‘সব নেতা–কর্মী হাসপাতালের সামনে ভিড় করলে জটলা তৈরি হয়। অনেক সময় গণমাধ্যমে ভুল তথ্যও যায়। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ অবস্থান থেকে দোয়া করছি।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধানে যুক্ত আছেন তাঁর পুত্রবধূ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হাসপাতালে আসা–যাওয়া করছেন।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রার জন্য উপযুক্ত নয়, বিশেষ করে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা বেশ জটিল পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যাও অপরিবর্তিত। তাঁকে ঢাকায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিদিনই ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর প্রক্রিয়াটিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। মেডিকেল বোর্ডের অধীন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবেই দেখছেন এবং কিডনির কার্যক্ষমতা স্থিতিশীল হওয়াকে সার্বিক উন্নতির জন্য জরুরি বলে মনে করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ
  • হাদিকে গুলির নিন্দা–প্রতিবাদ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
  • নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ অনেকটাই দূর হয়েছে
  • দিনাজপুরে যক্ষ্মা না থাকলেও রোগী, কফের নমুনায় জালিয়াতি
  • বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
  • তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি
  • জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি
  • ৩৫ ফুট নিচে ক্যামেরা পাঠিয়েও দেখা যায়নি শিশুটিকে
  • এভারকেয়ারের সামনে কড়া নিরাপত্তা, বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভিড় নেই