ওয়ালটন প্লাজার ‘চ্যালেঞ্জার্স সামিট’ অনুষ্ঠিত
Published: 14th, January 2025 GMT
‘আমরা সেরা ছিলাম, আমরা সেরা আছি, আমরা সেরা থাকব’ স্লোগানে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয়ভাবে ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদানে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন প্লাজার দিনব্যাপী ‘চ্যালেঞ্জার্স সামিট-২০২৫’।
সামিটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ওয়ালটন প্লাজার সহস্রাধিক সদস্য বিক্রয় প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেরা থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তারা জানান, দেশে ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও প্রযুক্তিপণ্য বিক্রয়ে শীর্ষে আছে ওয়ালটন প্লাজা। এর ফলে অর্জন করেছে জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি। ব্যবসার পাশাপাশি দেশ ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ওয়ালটন প্লাজা। ইতোমধ্যে প্লাজার ‘কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুরক্ষা নীতি’র আওতায় কয়েকশ কিস্তি ক্রেতা এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওয়ালটন প্লাজা অর্জন করেছে সেরা সেলস নেটওয়ার্কের সম্মান।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী ‘চ্যালেঞ্জার্স সামিট-২০২৫’ উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম, ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নিশাত তাসনিম শুচি, ওয়ালটন প্লাজার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রায়হানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক এবং ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান।
চ্যালেঞ্জার্স সামিটে সারা দেশের প্রায় ৭০০ ওয়ালটন প্লাজা থেকে ম্যানেজার, রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার, ক্রেডিট ম্যানেজারসহ বিভিন্ন স্তরের সহস্রাধিক কর্মকর্তা অংশ নেন। তাদের আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নেয় ওয়ালটন হাই-টেক পার্কের আঙিনা।
সামিটে ওয়ালটন প্লাজার বিক্রয় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চলমান বিক্রয় কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও ত্বরান্বিত করতে ব্যবসায়িক কলাকৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালে বিক্রয় বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখায় ১৯টি ক্যাটাগরিতে ওয়ালটন প্লাজার ১৯০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন ওয়ালটন প্লাজার এমডি মোহাম্মদ রায়হান।
চ্যালেঞ্জার্স সামিটে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— ওয়ালটন হাই-টেকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) নজরুল ইসলাম সরকার ও মো.
সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ওয়ালটন প্লাজার দিনব্যাপী ‘চ্যালেঞ্জারস সামিট-২০২৫’।
ঢাকা/একরাম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেন জয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই পুতিনের
আগামী বছরের জুন মাসের ১০ তারিখে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ছাড়িয়ে যাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধও নাকি কয়েক সপ্তাহেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই যুদ্ধও থমকে গিয়েছিল রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের মতো। সামরিক নেতৃত্বের একের পর এক ব্যর্থতায় নষ্ট হয়েছিল অসংখ্য সেনার জীবন।
১৯১৮ সালের আগস্টে মিত্রশক্তির নতুন কৌশল সক্ষম হয়েছিল জার্মানদের প্রতিরক্ষা ভেদ করতে; কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করবে না। রাশিয়ারও ধারণা নেই, কীভাবে জয়ী হবে।
একনায়কতান্ত্রিক শাসনেও যখন কোনো নেতার বিজয়ের স্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকে, তখন তিনি নিজের জন্যই বিপদ ডেকে আনেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার নিকোলাস দ্বিতীয় অনেক মূল্য দিয়ে তা শিখেছিলেন। আজ পুতিন যতটা অর্থহীনভাবে রুশ সেনাদের জীবন নষ্ট করছেন, আগামী দিনে তিনি তত বড় সংকটের মুখোমুখি হবেন।
আরও পড়ুনপুতিন এবার ন্যাটোর সঙ্গে ভয়ংকর জুয়া খেলতে শুরু করেছেন২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫পুতিনের মূল সমস্যা হলো, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে পরাজিত করতে পারেননি। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে তাঁর তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় আক্রমণও চরম ব্যর্থতায় শেষ হয়েছে। রাশিয়ার কৌশল হলো ছোট ছোট দলকে মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাঠানো। কিন্তু কেউ যদি কোনোভাবে এগোতেও পারে, বাকি সেনারা সেই অগ্রগতির সুযোগ নিতে পারে না। কারণ, তারা যদি একসঙ্গে জড়ো হয়, মুহূর্তেই ধ্বংস নেমে আসে।
গত বছরের মাঝ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রাশিয়ার হতাহতের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে এখন ৯ লাখ ৮৪ হাজার থেকে ১৪ লাখ ৩৮ হাজারের মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যাই প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার। ধারণা করা হয়, প্রত্যেক ইউক্রেনীয় সৈন্যের মৃত্যুর বিপরীতে প্রায় পাঁচজন রুশ সেনা মারা যাচ্ছেন। তবু পুরো গ্রীষ্মে পুতিনের সেনারা একটি বড় শহরও দখল করতে পারেননি।
রাশিয়া সামান্য অগ্রসর হচ্ছে ঠিকই, তবে যে চারটি অঞ্চল তারা নিজেদের বলে দাবি করছে, সেগুলো পুরোপুরি দখল করতে আরও পাঁচ বছর লাগবে। আর হত্যাযজ্ঞ যদি ২০২৫ সালের গতিতে চলতে থাকে, তবে মোট রুশ হতাহত প্রায় ৪০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে।
পুতিন আশা করেছিলেন যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পক্ষে পাল্লা ভারী করবেন। গোয়েন্দা তথ্য ও আকাশ প্রতিরক্ষা বন্ধ করে দিলে ট্রাম্প সত্যিই ইউক্রেনকে বাধ্য করতে পারেন একটি অস্বস্তিকর শান্তিতে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি সামান্য সময়ের জন্য এমন চেষ্টা করেছিলেন।এই অগ্রগতির অভাবই ব্যাখ্যা করে কেন পুতিন ইউক্রেনের শহর ও অবকাঠামোতেও হামলা করছেন। তাঁর লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের কিছু অংশকে বসবাসের অযোগ্য করে মানুষের মনোবল ভেঙে ফেলা। রাশিয়া এখন আসন্ন ভয়াবহ শীতের কথাও তুলে ধরছে। ইউক্রেনের মানুষ আগেই জানে যে রাশিয়া নির্মম। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র যখন বেসামরিক স্থানে আঘাত হানে, তা প্রমাণ করে—পুতিন জিতলে তাদের আরও অনেক কিছু হারাতে হবে।
অন্যদিকে রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের হামলাগুলো রুশদের মনোভাব বদলাতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ রুশ নাগরিক এই যুদ্ধকে সমর্থন করছে। তবে এদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনের একজন প্রকৃত অর্থে যুদ্ধের দৃঢ় সমর্থক। বাকিরা শুধু বাস্তবতা ভাবতে না চাওয়ার সহজ পথটাই বেছে নিয়েছে। কিন্তু যখন অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে ও বাজেট কমছে, সেই সময়ে ইউক্রেন জ্বালানি স্থাপনা ও বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালানোয় রুশদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য করতে পারে।
আরও পড়ুনপুতিন এমন কিছু চান, যা তিনি কখনোই পাবেন না৩১ জুলাই ২০২৫পুতিন আশা করেছিলেন যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পক্ষে পাল্লা ভারী করবেন। গোয়েন্দা তথ্য ও আকাশ প্রতিরক্ষা বন্ধ করে দিলে ট্রাম্প সত্যিই ইউক্রেনকে বাধ্য করতে পারেন একটি অস্বস্তিকর শান্তিতে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি সামান্য সময়ের জন্য এমন চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু এখন সেই কৌশল সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। হোয়াইট হাউসের ‘শান্তিদূত’ ট্রাম্প এখনো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মন্দ-ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। কারণ, তিনি তাঁকে পছন্দ করেন না।
ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিলে তাঁর নোবেল পুরস্কারজয়ী রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাবে। এমনকি অক্টোবরে তিনি রাশিয়ার দুই বড় তেল কোম্পানি, লুকয়েল ও রসনেফটের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন।
শেষ পর্যন্ত পুতিন আশা করতে পারেন, ইউক্রেনের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অর্থ সহায়তা আগামী ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনপুতিন একটা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন?২৬ এপ্রিল ২০২৫যেসব জনতুষ্টিবাদী সরকার ক্রেমলিনের প্রতি তুলনামূলক সহনশীল, তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্ষমতায় আসার মুখে ঝুলে আছে। বিভক্ত ও অকার্যকর ইউরোপ যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দিতে হিমশিম খেতে পারে। তবে এটি যুদ্ধের চরম পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে ত্যাগ করার মতো নয়। ইউরোপের নিরাপত্তার চাবিকাঠি যে ইউক্রেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যদি কিয়েভ পতন হয়, তবে পুতিন ইউরোপের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী ও শক্তিশালী অস্ত্রশিল্পের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবেন।
রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ছাড়াও বহু বছরের জন্য টেকসই অর্থায়নের একটি বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে। এটি সফল হলে পুতিন বুঝবেন, ইউক্রেনের অর্থনীতি রাশিয়ার চেয়ে বেশি সময় টিকে থাকতে সক্ষম।
অনেকে মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই ভাবছেন সময় তাঁর পক্ষেই, তা না হলে এত দিনে শান্তি আলোচনায় বসতেন। কিন্তু ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাক আমাদের শেখায়, নেতারা শেষ পর্যন্ত অনড় থাকেন। তাঁরা আশায় থাকেন যে কিছু একটা পরিবর্তন ঘটবে।
আরও পড়ুনপুতিন না ট্রাম্প— কে কাকে আসলে ফাঁদে ফেলছেন১৩ আগস্ট ২০২৫তাই সম্ভাবনা বেশি যে ২০২৬ সালেও পুতিন লড়াই চালিয়ে যাবেন। অপেক্ষা করবেন, তাঁর জেনারেলদের নতুন যুদ্ধকৌশল বের করার। তিনি অপেক্ষায় থাকবেন, ইউক্রেনের জনবল কমে যাওয়ার, জেলেনস্কির সরকার ভেঙে পড়ার অথবা ট্রাম্প কিংবা ইউরোপের ধৈর্য হারাবার।
কিন্তু যদি এগুলোর কোনোটিই না ঘটে, তবে পুতিন নিজেই নিজের জন্য ভয়ংকর পরিণতির বোঝা জমা করে রাখবেন। রাশিয়া তার অর্থনীতিকে বন্ধক রেখেছে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে ঠেলে দিয়েছে, চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং এক প্রজন্মের তরুণদের জীবনযাত্রা ধ্বংস করেছে। কিন্তু কিসের জন্য?
যেই মুহূর্তে রুশ জনগণের মনে এই প্রশ্ন জাগবে, বিশ্ব একটি নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হবে। পুতিন তখন বিদেশে পরাজয় মেনে নিয়ে দেশে ভয়ংকর দমন-পীড়ন চালাতে পারেন। অথবা তিনি বেছে নিতে পারেন উত্তেজনা বাড়ানোর পথও।
• এডওয়ার্ড কার দ্য ইকোনমিস্টের উপসম্পাদক
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত