‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ তালিকা থেকে বাদ কিউবা
Published: 15th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম সরিয়ে ফেলতে চান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক বন্দিমুক্তি চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
এ ঘোষণা আসার পর কিউবা নিজ দেশে নানা অপরাধে আটক ৫৫৩ কারাবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
আশা করা হচ্ছে, এই বন্দিদের মধ্যে চার বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও থাকবেন। বাইডেনের এ সিদ্ধান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যাবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মার্কো রুবিওকে। রুবিও কিউবায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে কাজ করেছেন। সিএনএন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মহররম মাসের মর্যাদা ও করণীয়
হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম। মহররম অর্থ পবিত্র, সম্মানিত। কোরআনের ভাষায় এই মাস ‘আরবাআতুন হুরুম’ বা চার সম্মানিত মাসের অন্যতম। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা মূলত বারোটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, সেদিন থেকেই চালু। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ যেদিন আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় তার নিজস্ব গতিতে চলছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আরেকটি মাস রজব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩১৬৭)
মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ আশুরা। আশুরার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন। সম্মানিত, পবিত্র ও বরকতময় মাস হিসেবে মহররম মুমিনের ইবাদতের মাস। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য।
মহান আল্লাহ যেদিন আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় তার নিজস্ব গতিতে চলছে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩১৬৭মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫)
সুতরাং আল্লাহকে পেতে হলে ইবাদতের বিকল্প নেই। তাই এমন মাস বা দিনেই বেশি বেশি ইবাদত করা জরুরি, যে মাস সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। মহররম মাসের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো:
আরও পড়ুনখিজির (আ.) ও মুসা (আ.) এর কাহিনি১৮ নভেম্বর ২০২৪রোজা পালনসর্বাধিক হাদিস প্রণেতা সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-এর হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর কাছে মহররমের রোজা সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৩; সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭৪০)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান ও মহররমে যেভাবে গুরুত্বের সাথে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময়ে কখনো তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৮১)
মহানবী (সা.) মহররমের দিন নিজে রোজা রেখেছেন এবং সাহাবিদের রোজা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহররমের রোজার ফজিলত বর্ণনা করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহ তাআলার কাছে আশা রাখি, যে ব্যক্তি মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখবে, তাঁর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)
আল্লাহকে পেতে হলে ইবাদতের বিকল্প নেই। তাই এমন মাস বা দিনেই বেশি বেশি ইবাদত করা জরুরি, যে মাস সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন।আশুরার রোজার বিষয়ে দুটি কথা বিশেষভাবে স্মরণে রাখা উচিত।
১. দুটি রোজা রাখা সুন্নত: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখা সুন্নত। রোজা রাখার পদ্ধতি হলো মহররমের ৯ থেকে ১০ কিংবা ১০ থেকে ১১ তারিখ রোজা রাখা। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২১৫৪)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা করো, আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ২০৯৫)
২. শিশুদের রোজা রাখানো: রুবাইয়্যেই বিনতে মুআওয়েজ (রা.)-এর বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, রাসুল (সা.) আশুরার দিন সকালে আনসার সাহাবিগণের গ্রামগুলোতে দূত পাঠিয়ে ঘোষণা দিতে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে।’ রুবাইয়্যেই বলেন, ‘এরপর আমরা নিজেরা রোজা রাখাতাম এবং আমাদের শিশুদেরও রোজা রাখতাম। তাদের তখন তুলা দিয়ে বানানো খেলনা দিতাম। কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ইফতারি পর্যন্ত খেলনা দিয়ে ব্যস্ত রাখতাম; যেন তারা রোজাটি পূর্ণ করতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৬০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৩৬)
পবিত্র আশুরার দিনে রোজাদারদের ইফতার করানো অনেক সওয়াবের কাজ। সম্ভব হলে আশুরার দিনে নিজে রোজা রাখার পাশাপাশি রোজা পালনকারীদের ইফতার করানো উত্তম।
আরও পড়ুনহিজরি নতুন বছর ও মহররম মাসের ফজিলত০৬ আগস্ট ২০২১বেশি বেশি ইবাদতরোজার পাশাপাশি এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা, জিকির করা, নফল নামাজ আদায় করা, তাসবিহ পাঠ করা, দরুদ পাঠ করা ও দান-সদকা করা উচিত। মহররম মাসজুড়ে বেশি বেশি তওবা-ইসতেগফার করা।
মহান আল্লাহ এই মাসেই সমগ্র জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭৪১)
আহলে বাইতের প্রতি দরুদ পড়াপবিত্র আশুরা ও কারবালা দিবস একই দিনে সংঘটিত হয়েছে। এই দিনে তওবা-ইসতেগফার ও রোজা রাখার পাশাপাশি আহলে বাইতের (নবী-পরিবারের সদস্যদের) জন্য দোয়া ও দরুদ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মতে, নবীজি (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের সময় তাঁর পরিবারের ওপর দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। হানাফি মাজহাবের ইমামদের মতে সুন্নত। (আল মাওসুয়া আল ফিকহিয়্যাহ, ২৬/২৬৬-২৬৮)
আমাদের শিশুদেরও রোজা রাখাতাম। তাদের তখন তুলা দিয়ে বানানো খেলনা দিতাম। কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ইফতারি পর্যন্ত খেলনা দিয়ে ব্যস্ত রাখতাম; যেন তারা রোজাটি পূর্ণ করতে পারে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৬০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৩৬যেমন আমরা দরুদ পাঠ করতে পারি, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদ। অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মদের ওপর আপনার রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপরও রহমত করুন।
কুসংস্কার বর্জনপবিত্র আশুরা নিয়ে আমাদের সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কার রয়েছে, যা ইসলামের বিধানের বিপরীত। বিয়ে থেকে বিরত থাকা। অনেকে মহররম মাসকে নেতিবাচক মনে করে এ মাসে বিয়ে থেকে বিরত থাকেন। প্রচলিত এসব কাজের প্রভাব ভয়াবহ। তাই এসব থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
পবিত্র আশুরার দিনটিকে কেন্দ্র করে অনেকে পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে এ বিষয়ে একটি হাদিসও পাওয়া যায়, যেখানে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ তাকে পূর্ণ বছর স্বচ্ছলতার সঙ্গে রাখবেন।’ (তাবারানি, আল মুজামুল কাবির, হাদিস: ১০২৮২; বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান, হাদিস: ৩৫৭০)।
তবে কোনো কোনো মুহাদ্দিস এই হাদিসকে দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং ফকিহগণের অনেকে বিদআতের আশঙ্কায় তা করতে নিরুৎসাহিত করেছেন।
লেখক: অধ্যক্ষ, দারুননাজাত একাডেমি
আরও পড়ুনহিজরি নববর্ষ ও মহররম মাস০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮